E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় মালিককে মারপিট করে দোকান জবরদখল

২০১৪ আগস্ট ০৫ ১৭:০৬:১৭
সাতক্ষীরায় মালিককে মারপিট করে দোকান জবরদখল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : প্রকাশ্য দিবালোকে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙে ২৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল, দু’ লাখ নগদ টাকা লুট করেছে  ব্যবসায়ি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ার ওই ব্যবসায়িকে আটক রেখে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের ঘোলপট্টীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়িদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা গ্রামেন শওকত হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, দেশ স্বাধীনের আগে তারা সাতক্ষীরারা শহরের মুনজিতপুরের ব্যবসায়ি মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে সুলতানপুর বড় বাজারের ঘোলপট্টিতে প্রায় ৪০ বর্গমিটার জমি কিনে তাতে দোকান ঘর বানিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। ওই জমি বাংলাদেশ সরকার সরকারি খাস খতিয়ানভুত্ত করায় ১৯৭৬ সালে তারা বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দোবস্ত ইজারা নবায়ন করে গত ৯ জানুয়ারি পৌর ভূমি অফিসে চার হাজার ৯৪৫ টাকা জমা দেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তারা ওই দোকান ঘর পুরাতন সাতক্ষীরার আব্দুস সাত্তার সাহাকে ব্যবসা করার জন্য ভাড়া দেন। বর্তমানে আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে আনারুল ইসলাম প্রতি মাসে দু’ হাজার টাকা পরিশোধ করে ‘আরাফাত বিতান ’ নামে মনোহরী ব্যবসা করে আসছে।
পুরাতন সাতক্ষীরার আব্দুস সাত্তার সাহা জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে পুরাতন সাতক্ষীরার সুদ ব্যবসায়ি মান্দার দেবনাথের ছেলে পলাশ দেবনাথের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ব্যবসার জন্য গ্রহণ করেন। টাকা গ্রহণের শর্ত হিসেবে তার ছেলে আমিরুলের কাছ থেকে একটি ১০০ টাকা ও একটি ৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল অলিখিত স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয় পলাশ। একই সাথে চেক বইয়ের দু’টি অলিখিত পাতায় সাক্ষর করিয়ে নেয় সে। ওই অলিখিত স্ট্যাম্পকে নিজের মত করে লিখে গত ২৩ জুলাই পলাশ দেবনাথ ওই দোকানঘরের জায়গা ২০১২ সালে বন্দোবস্ত নিয়েছেন দাবি করে ওই দোকান তার অনুকুলে ছেড়ে দিতে বলেন। রাজী না হওয়ায় দোকনঘর দখল করে নেওয়া ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি পরদিন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা(পি-৭১০/১৪-সাত) দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক মোঃ কবীর হোসেন আগামি ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উভয়পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গত ২৭ জুলাই নোটিশ জারি করেন। মামলার খবর পেয়ে পলাশ দেবনাথ ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৬ জুলাই রাত দেড়টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের কয়েকজনকে নিয়ে দোকানঘরের দু’টি শার্টারের তালা কেটে তাতে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানোর পাশাপাশি ২৮ জুলাই সদর উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়। অভিযোগ করা হয় সাতক্ষীরা পৌর চেয়ারম্যানকে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ উভয়পক্ষ কে নিয়ে গত ২ আগষ্ট বসাবসির সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান।
তিনি আরো জানান, একইসাথে একই জমি পৌর ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম দু’জনকে কিভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়। অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লস্কর তাজুল ইসলাম বন্দোবস্ত দেওয়া হলো কিভাবে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর সহকারি ভূমি কমিশনারকে নির্দেশ দেন। আদেশে প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ওই জমি আমজাদ হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের অনুকুলে ছাত্তার সাহার দখল নিশ্চিত করেন। ঈদের ছুটির পর সদর সহকারি ভূমি কমিশনার এসএম মাহামুদুর রহমান উভয়পক্ষকে নোটিশ করে প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে যেয়ে তদন্ত করবেন বলে জানিয়ে দেন।
সাত্তার সাহার ছেলে আমিরুল সাহা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে পলাশ দেবনাথের নেতৃত্বে সুলতানপুর কাচা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদক রওশান আলী, মুদি ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান মুকুল, বড় বাজারের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা খোকন, সুলতারপুরের কর্ণেল বাবু, সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ২৫/৩০জন সন্ত্রাসী তার (আমিরুল) দোকানের শার্টারে লাগানো চারটি তালা ভেঙে ফেলে। এরপর তারা একে একে দোকানে থাকা শ্যাম্পু, সাবান, ক্রীম, সার্ফ পাউডারসহ বিভিন্ন ধরণের ২৫ লক্ষাধিক টাকার মনোহরী দ্রব্য লুট করে রওশান ও মুকুলের দোকানে মজুদ করে। একই সাথে তারা ক্যাশ বাক্সে থাকা তিন লাখ টাকা লুট করে। লুটপাঠে বাধা দেওয়ার তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। জীবন রক্ষার্থে পালাতে গেলে রওশান আলী তাকে (আমিরুল) তার দোকানের মধ্যে কিছুক্ষণ আটকে রেখে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করে। কাচা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সদস্য আব্দুর রহিম বাবুসহ কয়েকজন ব্যবসায়ি প্রতিবাদ করায় তাদেরকে লাঞ্ছিত করে ওই জবরদখলকারি সন্ত্রাসীরা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সুলতানপুর বড়বাজারের ঘোলপট্টীতে গেলে দেখা গেছে আরাফাত বিতান নামের সাইন বোর্ডটি মুছে ফেলে তাতে হলুদ রঙ দিয়ে মেসার্স পলাশ এন্টারপ্রাইজ লেখা হচ্ছে। দোকানে বসে থেকে পলাশ দেবনাথ, রওশান আলী ও কামরুজ্জামান মুকুল কাজের তদারকি করছেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ি ও মনোহরী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, সবই তো দেখছেন, তবে শুনে আর লাভ কি! তারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিছু দূরে অবস্থান করা দোকান মালিক আমিরুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়ে তার গায়ে আঘাতের চিহ্নগুলি এ প্রতিবেদককে দেখান।
এ ব্যাপারে জবর দখল লুটপাট ও মারপিটের নেতৃত্বদানকারি পলাশ দেবনাথের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুর একটা ৫৫ মিনিটে তার ০১৭১২-০৯৫৬৬৮ নম্বর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।
সুলতানপুর কাচা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ রওশান আলী নিজেকে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন জানান, সকালে বেশ কিছু লোকজনকে আরাফাত বিতানের সামনে হৈ চৈ করতে শুনেছেন।
সুলতানপুর বড়বাজার মুদি ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান মুকুল জানান, পলাশ দেবনাথের ভাড়া দেওয়া দোকান নিজে ফিরিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে দোকান মালিক আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা চলছে।
সাতক্ষীরা পৌর ভূমি সহকারি তহশীলদার কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর সহকারি ভূমি কমিশনার এসএম এসএম মাহামুদুর রহমান জানান, দু’ এক দিনের মধ্যে উভয়পক্ষকে নোটিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ভাঙচুর ও লুটপাট করে জবরদখল করে নেওয়ার বিষয়টি তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপরিদর্শক মো. কবীর হোসেন জানান, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও জবর দখলের ঘটনায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযোগ করেন পুরাতন সাতক্ষীরার আমিরুল সাহা। সে অনুযায়ি তিনি তদন্ত করতে এসেছেন। তদন্তকালে কাঁচামাল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারন সম্পাদ মোঃ রওশানের কাছে আরাফাত বিতানের কিছু মালামাল অঅছে মর্মে তিনি সন্ধান পেয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
(আরকে/এএস/আগস্ট ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test