E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে সুপারির পাতা দিয়ে বাসনসহ সাত পণ্য তৈরি করছেন মামুন

২০১৯ ডিসেম্বর ০৮ ১৬:০৬:১১
রায়পুরে সুপারির পাতা দিয়ে বাসনসহ সাত পণ্য তৈরি করছেন মামুন

এমআর সুমন, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : গ্রামের রাস্তা ঘাটে সুপারির গাছের পাতা (খোল) দেখেননি এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ওই খোল কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন মা ও বোনেরা। অযত্মে অবহেলায় পড়ে থাকা এই সুপারির খোল দিয়েও নতুন কিছু করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন এক উদ্যোক্তা। ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব বাসন, ট্রে ও বাটিসহ নানা রকম তৈজসপত্র তৈরি করছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের মামুনুর রশিদ। কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া তৈরি করা পণ্যগুলো ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে জেলা জুড়ে।

মো. মামুনুর রশিদের জন্ম রায়পুর পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের কেরোয়া গ্রামে। তার বাবা রায়পুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল মিয়া। সে রায়পুর এলএরম পাইল্ট স্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি, ১৯৮৫ সালে রায়পুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৯১ সালে ঢাকা তেঁজগাও কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করেন।

এইচএসসির মাঝখানে কাজের উদ্দেশ্যে একবার বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু দুই মাস থেকে আবার চলে এসে ফের ডিগ্রী শেষ করেন। পরে উত্তরাসহ কয়েক জায়গা চাকরিও করেন। এর মাঝ খানে গাড়ির টায়ার দিয়ে কয়লা উৎপাদন করেন। পরিবেশ বান্ধব না হওয়ায় তাও ছেড়ে দেন তিনি। পরে বাংলাদেশ ইডিসিএলে ঢাকায় চাকরি নেয়। কিন্তু মন বসেনি চাকরিতে। তার ইচ্ছা উদ্যোক্তা হবেন। খুঁজতে থাকেন কি পণ্য উৎপাদন করা যায়। হঠাৎ করে ২০১৫ সালে ইউটিউবে দেশে তার মনে হয় সুপারির খোল দিয়ে কিছু করা যায় কিনা। কারণ লক্ষ্মীপুরে প্রচুর পরিমাণে সুপারির চাষ হয়। পরে চাকরিতে থাকা অবস্থায় ইউটিউবে দেখে দেখে সুপারি থেকে বাসন তৈরির মেশিনও মামুন নিজেই তৈরি করেন।

চাকরিতে থাকা অবস্থায় প্রতি সাপ্তাহিক ছুটির দু’দিন রায়পুরে গ্রামের বাড়িতে এসে সুপারির খোল খোঁজ করতে থাকেন রায়পুরের। প্রচুর পরিমাণে সুপারির খোল সংগ্রহ করেন তিনি। মীরগঞ্জ সড়কের তুলাতলি নামকস্থানে এ ধরনের বাসন তৈরির কারখানা স্থাপন করেন মামুন। পরে তার কারখানার প্রথম তৈরি করা বাসন তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে ব্যাপকভাবে শুরু করেন। চলতি বছরে নিউজিল্যান্ড থেকে জেরিক নামে একজন ভায়ার এসে পণ্য দেখে সস্তোষ প্রকাশ করেন। এভাবে অনেক ধৈর্য নিয়ে চাকরির পাশাপাশি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মামুন।

মামুন বলেন, ঝরে যাওয়া পাতা দিয়ে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব পণ্য শুধু আমার আয়ের উৎস হবে না পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে। এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে মানুষ এই পণ্য ব্যবহার করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই উদ্যোক্তা। আর এটি শিল্প হিসেবে দাঁড়ালে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

মামুন আরো বলেন, পুঁজির সংকটতো আছেই। তবুও কারখানা বড় করার কাজও শুরু করেছি। অনলাইন মার্কেটিং এবং পরিচিতদের মধ্যে মার্কেটিং করছি। আগামীতে অনেক দূর যেতে চাই। এই পণ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী। ভবিষ্যতে বড় আকারে করতে চাই এবং পরিবেশ বান্ধব আরো কিছু পণ্য নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরের মার্কেটে কাজ করতে চাই। বর্তমানে জাপানের এক ভায়ারের সঙ্গে কথা চূড়ান্ত করেছি। তিনি কিছু পণ্য জাপানে নেবেন। এখন সুপারির পাতা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ বিক্রির উদ্দেশ্যেই সুপারির খোল বাগান থেকে ঘরে এনে রাখবে।

বর্তমানে কারখানাটিতে কাজ করছেন ১২ জন। আর্থিক সহায়তা পেলে কারখানার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান মামুন হোসেন। সাত ধরনের পে¬ট, বাটি ও ট্রে উৎপাদন হচ্ছে কারখানাটিতে। তৈরি হওয়ায় এই সাত পণ্য পরিবেশ বান্ধব হচ্ছে মামুনের কারখানায়। সামনে সুপারির খোলের আরো নতুন ধরনের আরও পণ্য তৈরি করবেন।

রায়পুরের ইউএনও সাবরীন চৌধুরী বলেন, রায়পুরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে সুপারি উৎপাদিত হয়, কিন্তু সঠিক ব্যবহারের অভাবে এর পাতা (খোল) বিনষ্ট বা সাধারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সুপারির খোল দিয়ে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন এবং রফতানি করে মুদ্রা আয়ের নতুন অধ্যায় করেছেন মামুন। মামুনের তৈরি পণ্য আমি নিজেও ব্যবহার করছি। আমি নিজে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না যে, সুপারির খোল দিয়ে এত সুন্দর পণ্য তৈরি করা যায়।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test