E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপায় সংখ্যালঘুদের ১০ দোকান ভাংচুরের প্রতিবাদে ধর্মঘট

২০১৪ আগস্ট ০৫ ১৮:১৪:৩৩
গলাচিপায় সংখ্যালঘুদের ১০ দোকান ভাংচুরের প্রতিবাদে ধর্মঘট

গলাচিপা প্রতিনিধি : চাঁদা না দেয়ার আক্রোশে মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দী বন্দরে নারকীয় তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজরা প্রকাশ্যে মিছিল করে অন্তত ১০টি সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-লুটপাট করেছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কতিপয় নেতাকর্মীর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটলেও বিএনপির নেতাকর্মীরাও ঘটনায় সমানে অংশ নিয়েছে। ভাংচুর-লুটপাটে বাধা দিতে গিয়ে ১২ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে বন্দরের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে এবং অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট আহ্বান করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে হামলাকারীরা ঘটনার জন্য উল্টো ব্যবসায়ীদের দায়ি করেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার কয়েক দিন আগ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী ব্যবসায়ীদের কাছে নিরুপদ্রপে ব্যবসা করার জন্য চাঁদা দাবি করে আসছিল। একেকজন ব্যবসায়ীর কাছে সর্বনিন্ম ১০ হাজার থেকে শুরু করে অবস্থা ভেদে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করে।

এরই জের ধরে দুপুর একটার দিকে ৫০-৬০ জনের চাঁদাবাজের একটি গ্রুপ বিভিন্ন ধরণের দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল বের করে এবং একের পর এক সংখ্যালঘুর দোকানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। প্রায় দু’ ঘন্টা ধরে চলে এ তান্ডব। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী প্রাণের ভয়ে দোকান বন্ধ করে বা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এরশাদ হোসেন বাদলের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। চিকনিকান্দী বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি জ্ঞানেন্দ্র কুন্ড অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মেম্বার, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফেজ জমাদ্দার ও বিএনপির ক্যাডার হাবিবুর রহমান রোকনসহ দুই দলের নেতাকর্মীরাই এই হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটে নেতৃত্ব এবং সমানে অংশ নিয়েছেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রাজাকার পরিবারের সদস্যরাও ছিল। চিকনিকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদ হোসেন বাদল জানিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও হামলাকারীরা বাবু পালের মিষ্টির দোকান, রাজিব দেবনাথের ওষুধের দোকান, অরুণ দেবনাথের কাপড়ের দোকান, স্বপন মালাকারের টেইলারিং শপ, রিপন পালের মুদি দোকান, অশোক কুন্ডের তেল-মবিলের দোকান, গৌতম কর্মকারের স্বর্ণের দোকান, বিপ্লব পালের চায়ের দোকান ও নিলকণ্ঠ দেবনাথের কাপড়ের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এছাড়া, আংশিক ভাবেও বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লুটপাটে ব্যবসায়ীদের ১০ লাখ টাকারও বেশি মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পুরো ঘটনার সময়ে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করেছে। ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। জ্ঞানেন্দ্র কুন্ড জানান, ঘটনার পর পরই তারা বন্দরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করেছেন।

এরশাদ হোসেন বাদল জানান, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে প্রতিকার ও নিরাপত্তার আশায় তার গলাচিপা শহরের বাসায় এসে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তিনি এখনও প্রশাসনের সহযোগীতা পান নি।

ঘটনার বিষয়ে উল্টা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে চিকনিকান্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মেম্বার মোবাইল ফোনে জানান, এরশাদ হোসেন বাদলের ক্যাডাররা জোর করে চিকনিকান্দী ব্রিজের গোড়ায় জমি দখল করতে গেলে দু’ পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে তার ছেলে টিপু ও বিএনপি নেতা হাফেজ জমাদ্দারের মাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে পটুয়াখালী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শিশির কুমার পাল জানান, তিনি বরিশাল বসে ঘটনা শুনেছেন এবং বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

এদিকে, চিকনিকান্দী বাজারে বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মঙ্গলবারের সাপ্তাহিক হাট ভেঙে গেছে। অস্থায়ী দোকানদাররা তাদের দোকানপাট গুছিয়ে নিয়েছেন। বাজারে কোন লোকজন নেই।

(এসএলডি/এটিআর/অাগস্ট ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test