E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘মোক একখান কম্বল দে’গে’

২০১৯ ডিসেম্বর ২১ ১৭:২৭:১৩
‘মোক একখান কম্বল দে’গে’

খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল : মুই ঠান্ডায় মরে যাচু রাতেও ঘুমবা পারুনি। কেউ মোক একখান কম্বল দেয়নি। চেয়ারম্যান মেম্বার উপজেলার অফিসারলার লুগু ঘুরেহেও একখান কম্বল লিবা পারু নি। তাই তিনি যে কোন অপরিচিত ভদ্র লোককে দেখলেই অফিসার মনে করে তাকে বলে উঠে মোক একখান কম্বল দে’গে।

শীতে কাতর হয়ে এরকম আকুতি জানিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের উত্তর সন্ধারই গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ব ইদ্রিশ আলী (৮০) এ প্রতিবেদক শীতের সংবাদ সংগ্রহ করতে ঐ এলাকায় গেলে তাকেও এ রকমই আকুতি জানান এই বৃদ্ব। একই এলাকার মৃত গিয়াসউদ্দীনের স্ত্রী সাহেদা বেগম (৭৫) তিনিও একটি কম্বলের জন্য আকুতি জানায় এ প্রতিবেদককে।

এলাকাবাসী জানান, সাহেদা বেগম একজন গরীব অসহায় মহিলা তিনি কখনো সরকারী একটি কম্বল পাইনি। এ রকম অনেক গরীব দুখি মানুষেরা শীতে অস্থির হয়ে উঠলেও কম্বল পায় না। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের নেতাকর্মিসহ আত্মীয়স্বজনদের কম্বল দিয়ে দিচ্ছেন। আমরা সাধারণ মানুষরা চাইলেও পাই না বলে অভিযোগ তাদের।

এছাড়াও ভন্ডগ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী জরিনা বেওয়া মানুষের বাড়ী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তিনিও কখনোই কম্বল পায় নি বলে জানান। পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের সাহা পাড়ার বাসিন্দা মৃত বরুণ সাহার স্ত্রী বুলু শাহা তিনিও কখনো সরকারী কম্বল পায় নি। ঠিক এমনি চিত্র রাণীশংকৈল উপজেলা ও পৌরশহরের। এবং কি মানসিক রোগী সম্পূর্ণ মানুষেরা শহরের বিভিন্ন বাজারে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসলেও তারাও একটি কম্বল পাইনি। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শিবদিঘী পৌরমার্কেটে একজন মানসিক সমস্যার ব্যক্তি সেখানে নিয়মিত রাত্রী যাপন করে আসছে তাকেও দেখা যায়, শীত বস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাতর হয়ে দিন নিপাত করছে।

সরজমিনে উপজেলার নন্দুয়ার স›ধারই হোসেনগাঁও উত্তরগাও বিরাশি বাচোর কোচল ভরনিয়া কাশিপুর রাতোর নয়ানপুর চেকপোষ্টসহ পৌর শহরের বসাক পাড়া সাহা পাড়া ভান্ডারাসহ বিভিন্ন গ্রাম পাড়ায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেখা যায় পৌরসভা ও ইউয়িন পরিষদগুলোতে ভ্যান গাড়ী অথবা অন্য কোন বাহনে করে শীত বস্ত্র আসছে। তবে এগুলো কখন বিতরণ হচ্ছে কে পাচ্ছে তা জানা মুশকিল। এলাকার অনেক গরিব দুখি শীত নিবারণের জন্য কোন ধরনের শীত বস্ত্র পাচ্ছে না।

তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ীতে গেলে ঠিকই সরকারী কম্বলের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ কিংবা সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাড়ীতেও সরকারী শীত বস্ত্রের দেখা মিলে। মনে হয় তারাই যেন সত্যিকারের গরিব মানুষ। মাসে মাসে বেতন পেলেও দিনমুজুর গরিব অসহায়দের কম্বল নিতে কিন্তু (চাকুরীজীবি)তারা ভুল করে না।

কম্বল নিতেও থাকতে হয় জনপ্রতিনিধি কিংবা উপজেলা পরিষদ ইউএনও অফিসের সাথে লবিং গ্রুপিং।
গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা যায় ধানের কাড়ি অথবা কাঠ খড়ি জ্বালিয়ে দল করে আগুন তেপে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা চলছে অসহায় গরিব দুখিদের। সরজমিনে অনন্ত ১০ টি পাড়ার অর্ধশতাধিক গরিব দুখির সাথে কথা বলে, এ যাবত সরকারী কম্বল তারা পেয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায় নি। তাহলে সরকারী কম্বলগুলো যাচ্ছে কোথায় প্রশ্ন গরিব দুখি অসহায় মানুষদের।

বর্তমানে এ উপজেলায় শীতের প্রকৌপ অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে। মানুষের জীবনে ঠান্ডা ধীরে ধীরে অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে। মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরিব দুখিরা শীত বস্ত্রের অভাবে চরম বেকাদায় শীতের সময়গুলো পার করছে। প্রশাসনের লোকেরা সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ ছিন্নমুল মানুষজনের।

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা জুড়ে তাপমাত্রা ছিলো সর্বনিন্ম ১৪ সর্বোচ্চ ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবার তা এসে দাড়ায় সর্বনিন্ম ১১ সর্বোচ্চ ১৪ ডিগ্রী। শনিবার তা দাড়ায় ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপ-সহকারী উদ্ভিদ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ।

এদিকে শীত জেকে বসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডা জনিত রোগের সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফিরোজ আলম শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে জানান, শীতের প্রকৌপ বাড়ায় হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। বর্তমানে ডায়রিায়য় ও নিউমোনিয়া হয়ে ৪ জন শিশু ও ৬জন নারী পুরুষসহ হাপানী পিওপিডি রোগের আক্রান্ত রোগী আমাদের তত্বাবধানে রয়েছে।

ডাঃ ফিরোজ জানান, সরকারী ঔষুধের তেমন সংকট নেই। তাছাড়ও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওযার।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন মুঠোফোনে জানান,সরকারী আমাদের উপজেলায় এ যাবৎ দুই হাজারটি শীত বস্ত্র(কম্বল) আমরা পেয়েছি যা ইউএন উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। সামনে আরো চার হাজার ৮৮১টি শীত বস্ত্র পাওয়া যাবে। চাহিদা পাঠালে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বক্তব্য নিতে শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

(কেএ/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test