E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ঘিরে ক্ষোভ-হতাশা

২০১৯ ডিসেম্বর ২৭ ১৬:৩৩:৫৩
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ঘিরে ক্ষোভ-হতাশা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আগামিকাল শনিবার পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে চলমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।  সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বর্ষীয়ান নেতা ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও তাপস কুমার পাল।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সংগঠণটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার তিন বছর মেয়াদী কমিটি গঠণ করা হয়। গঠণতন্ত্র অনুযায়ি ৭১ সদস্য বিশিষ্ঠ ওই কমিটির সভাপতি মণ্ডলীতে যথাক্রমে জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, বিশিষ্ঠ সমাজসেবক গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল ও ব্যাংকার হেনরী সরদার পর্যায়ক্রমে এক বছর করে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদর শাখার সভাপতি শিক্ষক স্বপন কুমার শীল। কাউন্সিল চলাকালে একজন আইনজীবী নেতার প্ররোচনায় বহিরাগত সন্ত্রীদের হাতে মন্দির চত্বরে লাঞ্ছিত হন স্বপন শীল। বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সূত্রটি আরো জানায়, কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও অপর দু’ সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল ও হেনরী সরদারকে সূযোগ না দিয়ে বিশ্বজিৎ সাধু একটানা পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তাকে সমর্থন জানান সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীলহ কয়েকজন সদস্য। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির আদেশকে ঘিরে জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেবহাটার জগন্নাথপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষ, সদরের তাপস আচার্য, গোপাল ঘোষাল, বিষ্ণুপুরের শঙ্কর সরদারসহ দু’ শতাধিক হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও বেশ কয়েকটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৪ সালে সংগঠণটির ঢাকা অফিস থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দু’ লাখ টাকা দেওয়া হয় সভাপতি ব্শ্বিজিৎ সাধুর কাছে। ওই টাকা যথাযথভাবে বন্টন না করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। তাতে কোন ভ্রক্ষেপ নেই সভাপতির ।

সভাপতি সংগঠণের পক্ষ থেকে জেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ উপস্থিত থেকে প্রশাসনের পক্ষে গান গেলেও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘুদের জায়গা জবরদখল সম্পর্কে উপস্থাপন করেছেন এমন কোন শব্দ বিগত পাঁচ বছরের জেলা প্রশাসকের মাসিক কার্যবিবরণীতে উল্লেখ নেই।

অভিযোগ, তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠণের পক্ষে মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ গেলেও তিনি কার্যত ভূমিকা পালন করেন নিজের রাজনৈতিক দলের ও বিরোধপূর্ণ চিংড়ি ঘেরসহ ব্যক্তিগত সম্পদ রক্ষা কবচ হিসেবে। গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র ঘোষিত দু’ চারটি মানববন্ধন কর্মসুচিতে অংশ নেওয়া ছাড়া সংখ্যালঘুদের পাশে যেয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন এমন ঘটনা নজিরবিহীন। তবে তিনি বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কখনো প্রধান অতিথি আবার কখনো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নিজের আসন অলঙ্কিত করেছেন।

তবে কৃষকলীগের জেলা কমিটিতে জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীদের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঢোকানোর অভিযোগে সমালোচিত হলেও তার পদ রয়েছে প্রায় আজীবনের জন্য। একইভাবে সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা কমিটির সভাপতি পদটি একক ভাবেই দখলে রেখেছেন। তবে আগামি সম্মেলনকে ঘিরে কলারোয়া উপজেলা কমিটি গঠণে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন শীলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা কমিটি গঠণে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। শনিবার জেলা কমিটির কাউন্সিল ঘোষণা করে দু’দিন আগে গত বৃহষ্পতিবার তালা কাউন্সিল শেষ করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পাঁচ বছর ধরে তারা কোথায় ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

এদিকে স্বপন শীল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সক্রিয় নেতা হয়ে বিগত পাঁচ বছর কাজ করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিসদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক হিসেবে। সভায় নিত্যানন্দ আমিন অন্য সভাপতিদের দায়িত্ব কেন দেওয়া হবে না এমন প্রশ্ন তুললেও ঝামেলা এড়াতে কাছের লোক হিসেবে পরিচিত বিশ্বজিৎ সাধুর বিরাগভাজন হতে চানটি স্বপন শীল। জেলা কারাগারের ফটক থেকে ডিবি পুলিশে তুলে নিয়ে আসা মহিতোষ হাজরার মায়ের আকুতিতে সাড়া দিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ আগষ্ট সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলনে হাজির থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেও সেখানে এসে কোন কারণ ছাড়াই চলে যান স্বপন শীল ও নিত্যানন্দ আমিন। তাদের কাছে লিখিত দরখাস্ত করলে তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে প্রেসক্লাব ছেড়ে চলে যান।

গত বছরে ইউপি সদস্য মহাদেব মণ্ডল এর উপর হামলার ঘটনায় আহুত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ হলেও সংবাদ প্রকাশে ব্যবহার করেন তার ছবি। সংগঠনের বর্ধিত সভাসহ আরো একটি সভায় আখড়াখোলা বাজারে সাধুদের জমি তারা নিজের উপস্থিতিতে দখলমুক্ত করেছেন বলে দাবি করেছেন স্বপন শীল। এ ছাড়া নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা প্রতিকার চেয়ে তার কাছে আসলে অধিকাংশ সময় তিনি বলেছেন, তাদের কাছে দরখাস্ত করুন, সংবাদ সস্মেলন করুন তারপরই বিষয়টি নিয়ে তারা ভূমিকা রাখবেন।

উপর্যুপরি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলায় কত সংখ্যক মন্দির, শ্মশান আছে তার পরিসংখ্যন দিতে পারেন না। গত পাঁচ বছরে কতগুলো মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে, কত সংখ্যালঘুর জমি জবর দখল করা হয়েছে, কত নারীকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, এসব ঘটনায় কত মামলা হয়েছে সেসবের পরিসংখ্যান তাদের কাছে আছে এমনটি কারো জানা নেই। সর্বোপরি উপজেলা কমিটিগুলোকে নিজের পকেট কমিটি বানানোর চেষ্টা করেছেন স্বপন শীল।

জানতে চাইলে গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল ও হেনরী সরদার বলেন, যেখানে পদের কোন মূল্যায়ন হয় না, সংগঠণে চলে স্বেচ্ছাচার সেখানে থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভাল।

তবে বিশ্বজিৎ সাধু ও স্বপন শীল বিভিন্ন সময়ে কথপোকথনতালে বলেছেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তারা সংগঠণের কাজ করে থাকেন। এখানে তাদের রাজনৈতিক দলের উর্দ্ধে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকক্ষেত্রে নির্যাতিতরা পরে আর যোগযোগ রাখেন না। সেক্ষেত্রে কাজে সফলতা ও ব্যর্থতা থাকবে। তারা যদি নিষ্ক্রিয় হন বা যথাযথভাবে ভূমিকা না রেখে থাকেন শনিবারের কাউন্সিলে কাউন্সিলররা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নতুন নেতা নির্বাচিত করবেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test