E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অভিযোগের এক বছরেও ভুয়া চিঠির প্রকল্পে হজম করা সাড়ে ৬ কোটি টাকার তদন্ত হয়নি 

২০২০ জানুয়ারি ০৬ ১৭:৩৮:৪৯
অভিযোগের এক বছরেও ভুয়া চিঠির প্রকল্পে হজম করা সাড়ে ৬ কোটি টাকার তদন্ত হয়নি 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ। এর অধীনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ দেখিয়ে বেশির ভাগ টাকাই নয় ছয় করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, যে চিঠির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেটি ভুয়া। চিঠিটি ভুয়া হিসেবে উদঘাটনকারি এক আইনজীবী অভিযোগ করে গত এক বছরেও প্রতিকার পাননি।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে ,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জুবাইদা নাসরিন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে (৬৪.০৪২.০১৪.৪৪.০১.০৪৮.২০১২-৩৩৫৩) জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন সম্বলিত একটি চিঠি পাঠানো হয়।

২০১৫ সালের ৯ অক্টোবরের ওই চিঠিতে বলা হয়, জেলা পরিষদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে তিন কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ১৮৭টি প্রকল্প এবং তিন কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ২৮৪টি প্রকল্প ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে রাজস্ব তহবিলের সংস্থান সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হলো।

পাঁচ দফা শর্তের মধ্যে ছিল- জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের অর্থে পর্যায়ক্রমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, তার একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেই সঙ্গে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো। কোনক্রমে সম্ভব না হলে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে।

এই অনুমোদন দেখিয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার ঈদগাহ, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে গৃহীত প্রকল্পে রাজস্ব তহবিলের টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এ অবস্থায় জেলার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মণ্ডল চিঠিটি সঠিক কিনা তা জানতে তথ্য অধিকার আইনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকারের মনিটারিং বিভাগের উপসচিব মোঃ শামছুল ইসলাম ওই আইনজীবীকে তথ্য নেওয়ার জন্য আহবান জানান। পরে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সত্য রঞ্জন জানতে পারেন প্রকল্প অনুমোদনের ওই চিঠি ভুয়া। একই স্মারকে থাকা ওই চিঠিটি মুলত ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা পরিষদে শূন্যপদে নিয়োগ সংক্রান্ত। মূলত অসৎ উদ্দেশ্যে লাভবান হওয়ার জন্য একে অপরের যোগসাজসে ভুয়া চিঠি তৈরি করে প্রকল্পের অনুমোদন দেখানো হয়।

সেইসঙ্গে যেসব প্রকল্প দেখিয়ে টাকা ব্যয় হয়েছে তাতেও গুরুতর অনিয়ম ওদূর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ না করে টাকা ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। এদিকে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর, গত বছরের ২০ ফেব্র“য়ারি, ২২ সেপ্টেম্বর দুদকে আবেদন করেন সত্যরঞ্জন মণ্ডল। গত এক বছরে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর তিনি আবারো দুদক চেয়ারম্যান বাবদ আবেদন করেন।

গত বছরের ৩০ মে তদন্ত করা হলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ না দেখায় স্থানীয় সরকার বিভাগের খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর গত ৩১ ডিসেম্বর চিঠি লেখেন সত্যরঞ্জন মণ্ডল। তবে ফাণ্ড সমন্বয়ের মাধ্যমে জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা পূরণ করা হয় বলে তৎকালিন জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন আলী সাংবাদিকদের জানান। এ ছাড়াও বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবী।

ভুয়া চিঠিতে প্রকল্প গ্রহণের সময় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন মুনসুর আহম্মদ। জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভুয়ো অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি নির্বাচনের পর তিনি শুনেছিলেন।

এরসঙ্গে কারা জড়িত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে সময়ে জেলা পরিষদে ও মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মকর্তা ছিলেন, তারাই জড়িত। তারাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। তিনি শুধু ফাইলে সাক্ষর করতেন।

জানতে চাইলে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ সাদেকুর রহমানের সঙ্গে তার ০১৭১২-১৬১৮৯২ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test