E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপড়ের ঘরে মানবেতর জীবন যাপন, ঘর দেবেন মাদারীপুর সদরের ইউএনও

২০২০ জানুয়ারি ২৫ ১৬:৫০:৩৭
কাপড়ের ঘরে মানবেতর জীবন যাপন, ঘর দেবেন মাদারীপুর সদরের ইউএনও

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বীরাংগল গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের নুরুজ্জামান চৌকিদার তার স্ত্রী আসমা বেগমকে নিয়ে কাপড় দিয়ে ঘর বানিয়ে সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদীতে ঘর হারিয়ে আজ তারা বসবাস করছেন একই উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের কামাল মাতুব্বরের জায়গায়। নিজের জমি নেই বলে এখানেই কাপড়ের ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ সেই দম্পতিকে ঘর দেবেন বলে শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস আশ্বাস দিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট আয়শা আকাশী পেইজে শুক্রবার বিকেলে ‘কাপড়ের ঘরে মানবতার জীবন যাপন করছেন অসহায় দম্পতি...’ শিরোনামে ছবিসহ একটি পোষ্ট দেন। সেই পোষ্ট দেখে শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ও মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা, মেম্বর আইয়ুব আলী ফকির সরেজমিনে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান। এসময় সাথে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীও ছিলেন। তারা সেখানে গিয়ে সত্যতা পেলে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ঘর তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, আজ সকালেই (শনিবার) আয়শা আকাশীর ফেসবুকে অসহায় দম্পতির স্ট্যাস্টাসটি দেখে খুব খারাব লেগেছে। তাই এখানে ছুটে এসেছি। এসে দেখি সত্যিই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এভাবে কাপড়ের দিয়ে ঘর বানিয়ে এই শীতে থাকা খুবই কষ্টকর। সামনে আবার ঝড়-বৃষ্টির দিন। তখন আরো সমস্যা হবে। তাই তাকে দ্রুতই তিন বান্ডিল টিন, ৯ হাজার টাকা দেয়া হবে। আর এখানকার মেম্বর বাশ ও ঘরের জন্য মাটি দিবেন। আশা করছি দ্রুতই তাদের ঘরের ব্যবস্থা হবে।

সরেজমিনে আসা মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, বর্তমান যুগে এই ভাবে বসবসা করা অসম্ভব ব্যাপার। আমিও তার ঘরের জন্য অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করবো।

সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, স্থানীয় পত্রিকা সুবর্ণগ্রামের স্টাফ রির্পোটর মিলন মুন্সি একটি কাজের জন্য ঐ এলাকায় যায়। তখন এই ঘটনা দেখে তার খুব খারাব লাগে। সে ছবি তুলে এনে আমাকে দেয়। আমি তা ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দেই। তা দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যেই মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ঘর তুলে দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন।

এছাড়াও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অহিদুজ্জান খান বাবর, ইতালী প্রবাসী সাগর মুন্সি, ব্যবসায়ি মো. আব্দুস সাত্তার সরদার, জেসমিন আক্তার, নৃত্য প্রশিক্ষক স্বপন মাহমুদসহ অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি দ্রুতই ঐ দম্পতির জন্য নতুন একটা ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সংগঠন স্বপ্নের সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান মুন্সি জানান, আমার টিম ঘর তৈরির জন্য মাটি কেটে সহযোগিতা করবেন।

অসহায় আসমা বেগম বলেন, নদীতে ঘর ভেঙ্গে গেছে। ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে খাবারই হয় না। আর ঘর তোলার কথা তো ভাবতেই পারিনা। তাছাড়া আমার স্বামীর মানসিক সমস্যা থাকায় কোন কাজই করতে পারেনা। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি পড়েছিলো, তখনও আমরা এই শীতের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে এখানেই থেকেছি। এখন ঘর হবে আমাদের,এর চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে।

আয়শা আকাশীর স্ট্যাস্টাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

কাপড়ের ঘরে মানবতার জীবন যাপন করছেন অসহায় দম্পতি...

এই যুগে, এই সময়ে যখন দেশে এতো উন্নয়ন, তখন এক দম্পত্বির বসবাস এই কাপড় দিয়ে মুড়োনো ঘরে। তালার উপর তালা করে ঘর বানানো এই আমাদের পক্ষে কিন্তু এই ঘরে থাকার কষ্ট ছুবে না।
ভাবতে অবাক লাগে এই প্রচন্ড শীতের মধ্যে এমন ঘরে কিভাবে জীবন যাবন করেন তারা।
অল্প কিছু টাকা হলেই তো একটু মাথা গোছানোর মতো আশ্রয় হতো তাদের। অথচ সেইটুকু অর্থও নেই তাদের।

মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বীরাংগল গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের নুরুজ্জামান চৌকিদার তার স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে জীবন যাপন করছেন। নদীতে ঘর হারিয়ে আজ তারা বসবাস করছেন একই উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের কামাল মাতুব্বরের জায়গায়। নিজের জমি নেই বলে এখানেই কাপড়ের ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকায় খাবারটুকুও ঠিকমতো খেতে পারছেন না। সেখানে কোন রকমভাবে একটু ঘর তোলা তাদের কাছে দীর্ঘ স্বপ্নের মতো।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test