E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা 

তদন্তে এসে আসামিদের সঙ্গে ভুরিভোজ করলেন পিবিআই ইনসপেক্টর রফিকুল ইসলাম!

২০২০ জানুয়ারি ২৬ ১৫:৫০:৫৬
তদন্তে এসে আসামিদের সঙ্গে ভুরিভোজ করলেন পিবিআই ইনসপেক্টর রফিকুল ইসলাম!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : যাত্রাদলের নায়িকা ধর্মান্তরিত টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর তার শরীরে কোরাসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেছেন।
অভিযোগ, তদন্ত শেষে তদন্তকারি কর্মকর্তা ও তার টিমের সদস্যরা দু’টি প্রাইভেটকারে এসে আসামিদের সঙ্গে ভুরিভোজ করেছেন। ফলে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

মামলার আসামিরা হলেন,আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সাইফুল্লাহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের রিপন সরদার(৩০), আবু মুছা (৩০), একই উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম ওরফে ডাকাত ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), লাভলু গাজী (৩৫), মহসিন সরদার (২৪), খায়রুল ইসলাম (২৮) চেউটিয়া গ্রামের তারামনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আাসামী কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)।

আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল সরদারের ছেলে শহীদুল সরদারের দায়েরকৃত মামলা থেকে জানা যায়, সাড়ে নয় বছর আগে যাত্রাদলের নায়িকা হিসেবে সাতক্ষীরার আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামের সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে গান করতে আসা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে(২৫) ফুসলিয়ে নিয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াাজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে তাকে বিয়ে করেন একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত বহু বিবাহের নায়ক সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তাদের মরিয়ম নামে পৌনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে।

খাজরা ইউপি’র সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তহমিনাসহ একের পর এক পাঁচজনকে বিয়ের কথা গোপন রেখে তাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লার বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিবাদ করায় সাইফুল্লাহ টুম্পাকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় জোরালো কোন প্রতিবাদ না করেই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে থাকে টুম্পা। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ৯ জুন দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্বামীর বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১৪/১৫ জন টুম্পার উপর ঝাপিয়ে পড়ে গনধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও কাথা জড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন টুম্পা মারা যায়।

পিরোজপুরে টুম্পার লাশ দাফন করা হয়। মামলার বাদি শহীদুল ইসলাম নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই হিসেবে চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে বিচারক আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা রেকর্ড করলেও ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আক্তারুল ইসলাম সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল বাদি চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল করলে ২৮ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক হোসনে আরা আক্তার সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এ ঘটনায় টুম্পার বাবা ও মা সাতক্ষীরা আদালতে এসে আসামী ও বাদি পক্ষের হয়ে পাল্টপাল্টি এফিডেফিড দেন। ২০১৮ সালের তিন সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিচারক এজাহারভুক্ত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনকে (পিবিআই) পূণঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুর একটার দিকে পিবিআই এর পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, সহকারি উপপরিদর্শক রসিভ হোসেনসহ কয়েকজন দু’টি প্রাইভেটকারে পিরোজপুর গ্রামে আসেন। তারা কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন। যান মামলার বাদি শহীদুলের বাড়িতে। পরে বিকেল তিনটার দিকে পিরোজপুর কপোতাক্ষ নদের ধারে যে হ্যাচারিতে টুম্পাকে পুড়িয়ে মারা হয় সেখানে বসে আসামী শাহানেওয়াজ ডালিম, সাইফুল্লাহসহ কয়েকজন আসামীর সঙ্গে ভুরিভোজ করেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা যদি আসামীদের সঙ্গে ভুরিবোজ করেন ও তাদের টাকায় প্রাইভেট কারে এসে তদন্ত করতে আসেন তাহলে মামলার ভবিষ্যৎ কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? কোন সাক্ষীর বুকের পাটা আসে যে ডালিম চেয়ারম্যানের মত আসামীদের বিপক্ষে সাক্ষী দেবে ?

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম প্রাইভেটকারে আসা, আসামীদের সঙ্গে একসাথে ভুরিভোজ করার কথা স্বীকার করেই বলেন, তাতে মামলার তদন্তে প্রভাব পড়বে না। মামলার এজাহারভুক্ত দু’ সাক্ষী ও বাদিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনে বাদি ও সকল সাক্ষীদের নিরাপদ স্থানে বা তার অফিসে ডেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test