E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভাটুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : প্রধান শিক্ষকেই ভরসা!

২০২০ জানুয়ারি ২৯ ১৬:৫০:৩৭
ভাটুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : প্রধান শিক্ষকেই ভরসা!

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ পাঁচটি। দুজন দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে। একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। একটি পদ শূণ্য। আছেন শুধু প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থী প্রায় দুই শ। প্রধান শিক্ষককে একসঙ্গে সামাল দিতে হয় চারটি ক্লাস। আবার দাপ্তরিক কাজে ২৮ কিলোমিটার দূরের লোহাগড়া উপজেলা সদরে যেতে হয়। তিনি প্রয়োজনে নিতে পারছেন না ছুটি। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম হচ্ছে ব্যাহত। গলদঘর্ম অবস্থা প্রধান শিক্ষকেরও।

এ চিত্র নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ভাটুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
গত বুধবার সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শিক্ষক-সংকটের এই চিত্র চোখে পড়ে। উপজেলা সদর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে নড়াইল ও মাগুরা জেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকা ভাটুদহ গ্রামে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।

প্রধান শিক্ষক জানান, ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষার্থী গত ডিসেম্বরে ছিল ১৯১ জন। এর ৫০ ভাগ ছাত্রী। বর্তমানে ভর্তি চলছে। এ বছরও দাঁড়াবে প্রায় দুই শ জন। গত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ২০ জন পরীক্ষা দিয়ে সাবাই পাস করেছে। এর ছয় জন জিপিএ-৫। অন্যরা জিপিএ-৪ এর ওপরে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয় হলেও প্রতি বছরই শিক্ষায় সাফল্যের পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা রেখে চলেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। এলাকার ভাটুদহ, মদনপুর ও নালিয়া গ্রাম এ বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকা। এসব গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে এখানে।

প্রধান শিক্ষক আরো জানান, প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদের মধ্যে একটি পদ শুণ্য। বিদ্যালয়ে পদায়ন আছেন চারজন শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক হিমিকা রানী গত পাঁচ মাস ধরে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। অন্য দুজন সহকারী শিক্ষক লক্ষণ দত্ত ও ওসমান গনি গত ১ জানুয়ারি থেকে নড়াইল পিটিআইতে দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে গেছেন। তখন থেকে শুধু প্রধান শিক্ষকই আছেন বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ে আছে পাঁচ কক্ষের সুরম্য দ্বিতল ভবন। চত্বরে আছে বড় খেলার মাঠ, বিশাল শহীদ মিনার। শ্রেণি কক্ষগুলো সাজানো গোছানো।

শিশু শ্রেণির জন্য আছে সজ্জিত ও দর্শনীয় শ্রেণিকক্ষ। বুধবার দুপুর ১২টায় বিদ্যালয় চত্বরে অ্যাসেম্বলিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছিছিলেন প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম। একাই তাদের সামলাচ্ছিলেন। এরপর শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেন। দুই পালার (শিফট) এ বিদ্যালয়ে ১২টা থেকে শুরু হয় তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। নিচতলায় পঞ্চম শ্রেণির এবং দোতলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। তিনটি শ্রেণি একই সঙ্গে সামলাতে গিয়ে ওপরে-নিচেয় উঠানামা করছিলেন বারবার।

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম পালায় পঞ্চম শ্রেণিসহ চারটি ক্লাস এবং দ্বিতীয় পালায় তিনটি। সব ক্লাস একা একা সামলাতে হয়। এক ক্লাসে পড়তে ও লিখতে দিয়ে অন্য ক্লাসে যাই, আবার সে ক্লাসে আসি। এতে পরিপূর্ণ পাঠদান কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা এলে আরো বিপদে পড়তে হবে। বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এ ছাড়া ক্লাস্টার সভাসহ আরো নানা কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। গত ১ জানুয়ারির পর গত ১২ জানুয়ারি উপজেলায় মাসিক সভায় অংশ নেওয়া ছাড়া বিদ্যালয় থেকে বের হইনি। জরুরি প্রয়োজনেও ছুটি নিতে পারছি না।’

পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে কথা হয় শিক্ষার্থী দীপ্ত সরকার, তামজিদ, নাফিজ, আব্দুর রহমান, ঋতু, পৃতিশ, চৌতি, সম্পা, রেহেনা, জিম, শিমলা, মানছুরা, সুপ্তী, অর্ঘ্য, দেবদাস, তানভীর, উজ্জ্বল, আজাদ, মুন ও শুভ্র দেবের সঙ্গে। তারা জানায়, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রধান শিক্ষক বেশি সময় দেন। অন্য ক্লাসে পড়তে ও লিখতে দিয়ে এখানে চলে আসেন।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে হইহট্টগোল করছিল। শিক্ষক ছিলেন অন্য কক্ষে। এ শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ, দিপু, রহমত, দুর্জয়, তিশা, বন্যা, সুষ্মিতা, ফাতেমা, সাথী, পারমিতা, অর্থ, সীমন্তী, সুমাইয়া, মীম, রুবি, মরিয়ম, সবুজ ও মোস্তাকিন সমস্বরে বলছিল, স্যার অন্য ক্লাসে গেলে দৌড়োদৌড়ি-হুড়োহুড়ি করি। কিন্তু স্যার বাইরে যেতে দেন না।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক নালিয়া গ্রামের রমা রানী চক্রবর্তী বলছিলেন, এ অবস্থায় পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলায় রাখাও কঠিন।

বিদ্যালয়ের সভাপতি বিশ্বরূপ চক্রবর্তী বলেন, এ বিষয়ে আমাদেরতো কোনো হাত নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এ বিষয়ে বলেছি দ্রুত সমাধান করতে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান খান বলেন, ‘দ্রুতই দুজন শিক্ষককে প্রেষণে (ডেপুটেশন) ওই বিদ্যালয়ে দেওয়া হবে।’ একসঙ্গে দুজন শিক্ষককে দেড় বছরের প্রশিক্ষণে পাঠানো কতটুকু যৌক্তিক, জানতে চাইলে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘নড়াইল পিটিআইর চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের ডিপিএড প্রশিক্ষণে পাঠাতে হয়েছে।’

প্রশিক্ষণরত শিক্ষক লক্ষণ দত্ত বলেন, ‘শিক্ষা অফিস আমাদের পাঠিয়েছে, তাই আমরা গিয়েছি। না পাঠালে যেতাম না।’

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test