E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদ্রাসা ছাত্রী জুলেখা হত্যার দুই বছরেও বিচার হয়নি : হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে

২০২০ জানুয়ারি ২৯ ১৮:৩৬:১৩
মাদ্রাসা ছাত্রী জুলেখা হত্যার দুই বছরেও বিচার হয়নি : হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ভুলুকা চাঁদপুরের খালেদা খাতুন নাতনি জুলেখা খাতুন জুলিকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। হত্যাকারী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাকে আইনে সোপর্দ করা যাচ্ছে না।

খালেদা খাতুন জানান, জুলিখার জন্মের দু’ বছর পার না হতেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় মেয়ে নার্গিসের। পরে নার্গিসের আবারো বিয়ে হয়। নিরুপায় হয়ে নাতনি জুলেখাকে নিয়ে নিজের বাড়িতেই মানুষ করতে থাকেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুরের খালেদা খাতুন। জুলেখাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।

বিয়ে দিতে আপত্তি করায় কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে মিকাইল সরদার। নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালিন জুলিয়াকে ফুসলিয়ে নিয়ে বিয়ে করে মিকাইল। ১৮ সালে দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই কারো সঙ্গে না বলে জুলিকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১০ নং সেক্টরের ১২ নং রোডের এপি কলোনীর ৩২ নং বাসায় ভাড়া থাকতো। মিকাইল চায়না এম্বেসিতে কাজ করতো।

মিকাইল কৌশলে বিভিন্ন মেয়েদের ফুসলিয়ে নিয়ে ফাঁদে ফেলে চায়নাদের মনোরঞ্জন করাতো বলে জুলেখার মাধ্যমে জানতে পারে খালেদা। চায়না এমবিসির এক কর্মকর্তা সানসুন ইউইউ জন এর মাধ্যমে বিদেশী বায়ারদের কাছে নারী সরবরাহ করতো মিকাইল। ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল জুলি ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ও পরে সে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে মোবাইল ফোনে খবর দেয় মিকাইল। সেখানে যেয়ে জানতে পারেন মিকাইল টাকার লোভে জুলিকে তিন চায়না যুবকের হাতে তুলে দেয়।

সেখানে গণধর্ষণের পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে জুলি। নির্যাতনের কথা ফাঁস করতে পারে ভেবে মিকাইল ও সানসুন ইউইউ জন পরিকল্পিতভাবে জুলিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (১৬/১৮) হয়। ধর্ষণ ও হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে মিকাইল ও সানসুন উত্তরা পশ্চিম থানার এক উপপরিদর্শক ও মেডিকেল কলেজের একাধিক ডাক্তারকে ম্যানেজ করে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যার কথা লিখিয়ে নেয়। নষ্ট করা হয় ধর্ষণ ও হত্যার আলামত। জানতে চাইলে খালেদাকে ধমক দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। খালেদা আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ২০১৮ সালে জুলি এ গ্রেডে দাখিল পাশ করলেও সে জেনে মরতে পারলো না।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, আরার গ্রামের মাংস বিক্রেতা জাকির হোসেন মুকুল মালী হত্যার ঘটনায় মিকাইলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৪ জুলাই হত্যা মামলা (জিআর-১৪৮ আশা) দায়ের করেন নিহতের ভগ্নিপতি রফিকুল মালাী। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত সাতজনের নামে চার্জশীট দেয় সাতক্ষীরা সিআইডি’র পরিদর্শক আমির হোসেন।

বিদেশে যাওয়ার টাকা ফেরৎ না দেওয়ায় যশোরের ঝিকরগাছার রঘুনাথপুরের মুজিবর রহমানের আট বছরের মেয়ে অন্তুকে কলারোয়ার যুগিখালি গ্রামের তার শ্বশুর ফজলুর রহমানের বাড়ি থেকে অপহরণের অভিযোগে ২৯১২ সালের ১৪ জুন থানায় অপহরণ মামলা (২৩) করা হয়। চার্জশীট হওয়ার পর মামলাটি সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ ছাড়া ভারত থেকে চন্দন কাঠ পাচারের সময় মিকাইল ও সানমুন গ্রেপ্তার হয়। বর্তমানে মিকাইল এলাকায় ঘের দখল, জমি দখলসহ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা পিবিআই এর পরিদর্শক আশরাফুজ্জামান বলেন, নাতনিকে গণধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে খালেদা খাতুন ঢাকা মেট্রোপলিটন মেজিষ্ট্রেট এর উত্তরা পশ্চিম আদালতে সম্প্রতি একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মিকাইল ও সানমুন ইউইউ জনকে আসামী করা হয়। আদালতের নির্দেশে তিনি গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, সানমুন ইউইউ জন বিভিন্ন সময়ে জুলিকে উত্যক্ত করতো। তার প্রতি কুদৃষ্টি পড়ায় মিকাইলকে জানানোয় জুলিকে নির্যাতন করা হতো।

একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল নির্যাতন থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়ে জুলি। আলামত নষ্ট না হলে ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা উঠে আসতে পারতো। তবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করানোর জন্য মিকাইল ও সানমুনকে অবশ্যই কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test