E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

২০২০ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৭:৫৪:৪৭
আগৈলঝাড়ায় নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত নব্য জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য আবু নাঈম মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। এ ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ১৩) এর ৮/৯/১০/১৩ ধারায় আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দায়ের করেছে সংশ্লিষ্ঠ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট। 

গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য নাঈমের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কথিত ইসলামের নামে রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন জেহাদী বই, জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করে বিভিন্ন প্রচারপত্র, মোবাইল ফোন, সীমকার্ডসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত। দশ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে রবিবার সকালে জেএসবি’র সদস্য আবু নাঈমকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, অর্গানাইসড ক্রাইম, ফরেনসিক ও টেরর ফিনান্স উইং, এন্টি টেরোরিজম (এটিইউ) ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রকিব উজ্জামানের নেতৃত্বে ১০ দসদ্যর একটি দল ঢাকা থেকে শনিবার বিকেলে সরাসরি আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে জসীম উদ্দিন সেরনিয়াবাতের মালিকানাধীন ‘মেসার্স মা মেডিকেল হল’ নামের ঔষধের দোকানে অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির সদস্য আবু নাঈমকে (২০) গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আবু নাঈম গৈলা ইউনিয়নের পশ্চিম সুজনকাঠী গ্রামের নজরুল ইসলাম মোল্লা ও তানিয়া আক্তারের ছেলে এবং সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ৫৩নং রোলধারী ছাত্র। নাঈম উল্লেখিত ঔষধের দোকানে কর্মচারীর হিসেবে তিন মান যাবত কাজ করে আসছিলো। তার বাবা নজরুল ইসলাম নগরবাড়ি রোডে একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করছে। নাঈমের পরিবার পূর্বে উজিরপুর উপজেলার নয়াকান্দি এলাকায় বসবাস করত।

এ ঘটনায় এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) এসআই অজিত কুমার দাশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ১৩) এর ৮/৯/১০/১৩ ধারায় শনিবার রাতে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন, নং-৩ (৮.২.২০)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ)এর ইন্সপেক্টর মো. খায়রুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত নাঈমকে ১০ দিনের রিমান্ডের আদেন জানিয়ে রবিবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

এজাহারের বরাত দিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ৮জানুয়ারি বিকেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত নব্য জেএমবি সদস্যরা মা মেডিকেল হলে একত্রিত হয়ে মিটিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই খবরে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মা মেডিকেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নব্য জেএমবির অন্যতম সক্রিয় সদস্য নাঈমকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি আধুনিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তাৎক্ষনিক নাঈমকে নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নাঈমের বাড়ি থেকে ৬২৪পৃষ্ঠার “নেদায়ে তাওহীদ,” ৩৪পৃষ্ঠা “জিহাদী প্রশিক্ষনের গুরুত্ব” ফটোকপি, “একাকী জিহাদ ” তান্ডত ও তান্ডত বাহিনীর বিরুদ্ধে একাকী জিহাদের দলিল প্রমান, আমি মুসলিম জিহাদের জন্য ট্রেনিং বা প্রস্তুতি পর্ব-১ থেকে ১২পর্ব এবং জিহাদে প্রাথমিক চিকিৎসার ৩১পাতা ফটোকপি, নাঈমের ব্যবহৃত ছদ্মনামে ফেইসবুক আইডি “আমি মুসলিম (প্রতিবাদী) জিহাদ সংক্রান্ত ২৬পৃষ্টার কাগজপত্র, ব্যাক্তিগত প্রতিবেদন ফরম ও ফটোকপি ৬পাতাসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তর আলামত জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবি নাঈম গৈলায় মা মেডিকেল হলে চাকুরীর আগে উপজেলা সদরের নূপুর ফার্মেসীতেও দীর্ঘদিন কর্মরত ছিল। ঢাকাতেও কর্মরত ও যাতায়াত করত নাঈম।

গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবি’র সদস্য নাঈমের বরাত দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. খায়রুল ইসলাম আরও জানান, নাঈম নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে “আমি মুসলিম” (প্রতিবাদী লেখক) এর মাধ্যমে দেশ থেকে ইসলাম বিরোধী কাজ কাজ দূর করে যে কোন মূল্যে কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্টা করাই তাদের দলের মুল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন অন লাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদরে মতবাদ প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের বই ও প্রচারপত্র তৈরী করে অন লাইনে তাদের সহযোগী “ইমামা মাহদীর সৈনিকসহ আরও বিভিন্ন ছদ্মনামের আইডির সাথে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জিহাদ এবং দেশ বিরোধী পরিকল্পনা করত।

নাঈমের আইডি থেকে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র, হত্যা, জনমনে ত্রাস, ভীতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করার লক্ষে পরিকল্পনা গ্রহন, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বোমা সংগ্রহের চেষ্টা করে আসছিলো। বিভিন্ন উন্নত মানের এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন “নব্য জেএমবি” কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নাঈম খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রস্তুতি গ্রহন করছিল। নাইমের ব্যবহৃত “ইসলামী বই ” নামে একটি এ্যাপসের মধ্যে সন্ত্রানস ও জিহাদসহ বিভিন্ন ধরনের ১৬০টি বইয়ের লিংক পাওয়া গেছে।

অন্য একটি এ্যাপসে ৯টি শিরোনামে ৩২টি বইয়ের লিংক পাওয়া গেছে। যার মধ্যে জিহাদ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক প্রচারনা, গনতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের খিলাফত প্রাতিষ্ঠার উদ্দ্যেশ্যে সংহতি, জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি সম্বলিত পোস্ট এবং কপি প্রচার করার তথ্য সংরক্ষন ও প্রচার করে আসছিলো।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test