E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করল অভিযুক্ত শিক্ষক সাগর

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৫:৪৭:৫০
মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করল অভিযুক্ত শিক্ষক সাগর

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী বাজারের আশরাফুল উলুম জানাতুল মাওয়া মহিলা কওমী মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণীর এক  ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর অন্তঃস্বত্ত্বা ছাত্রীকে পরিকল্পিত গর্ভপাত ঘটানোর দায় আদালতে স্বীকার করল ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হালিম নেওয়াজ সাগর। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে পুলিশ প্রহরায় নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আব্দুল হালিম নেওয়াজ সাগর ওই মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর অন্তঃস্বত্ত্বা ছাত্রীকে কলা খাইয়ে পরিকল্পিত গর্ভপাত ঘটানোর কথাও অকপটে স্বীকার করে। পরে বিচার তাকে নেত্রকোনা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বুধবার সন্ধ্যার পর কেন্দুয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে এ্যানালগ পদ্ধতিতে নানা নাটকীয় অভিযানের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাগর পুলিশের নিকটও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে।

পুলিশ জানায়, বছরে ২০ হাজার টাকা জায়গা ভাড়া নিয়ে রোয়াইলবাড়ি বাজারে দুই বছর আগে ওই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় লোকজন আব্দুল হালিম নেওয়াজ ওরফে সাগরকে ওই মহিলা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালক নিয়োগ দেন। স্থানীয় লোকজন সরল বিশ্বাসে তাদের মেয়েদের ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করান ধর্মীয় শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার জন্য। ওই মাদ্রাসায় আবাসিক কক্ষে প্রায় ৩০ ছাত্রী থাকে। শিক্ষক সাগর এবং তার স্ত্রী দুজনই ওই মাদ্রাসায় থেকে পড়াশুনা করাত। তাদের নিয়ম এত কঠিন ছিল যে, কোন ছাত্রীর মা বাবারও দেখা করা সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। বিশেষ প্রয়োজন হলে পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হত।

এছাড়া নতুন কেউ মাদ্রাসায় প্রবেশ করলে পরে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা খুবই কঠিন হত। সাগর পুলিশকে জানায় মাদ্রাসার আবাসিক এবং অনাবাসিক ছাত্রীদের কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারত না, ক্লাসও হত আলাদা কক্ষে। এভাবেই মাদ্রাসার আবাসিক কাঠামো গঠন করা হয়। কিন্তু শিক্ষক সাগরের বাহিরের আচার আচরনে স্থানীয় অভিভাবকরাও খুব খুশি থাকতেন। আবাসিক রুমগুলোতে তার অবাধে বিচরন ছিল বলে পুলিশকে সে জানায়।

এছাড়া ৩ মাস পর পর প্রত্যেক ছাত্রীকেই কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাত। ওই ছাত্রীকে ধর্ষন করার পর অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে শিক্ষক সাগর তাকে তার গর্ভপাত করানোর জন্য জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কলার সাথে অন্যান্য ঔষধ মিশিয়ে সেবন করায়। এতে ওই ছাত্রীটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে তাকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই বেড়িয়ে আসে শিক্ষক সাগরের কু-কর্ম ও ছাত্রীকে ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ১৯ জানুয়ারি ধর্ষিতা ও ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের আগে থেকেই শিক্ষক সাগর নিজের বসত বাড়ির ঘরে তালা লাগিয়ে গা ঢাকা দেয়।

মামলার তদন্তাকরী কর্মকর্তা পেমই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, ধর্ষিতা ছাত্রীর ডাক্তারি পরিক্ষা ও ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট জবানবন্দি দেয়া ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test