E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেন্দুয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মহিলা কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৬:১১:৩৮
কেন্দুয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মহিলা কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে গড়ে উঠছে মহিলা কওমি মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসায় কোনটিতে আবাসিক ছাত্রীদেরকে ফুসলিয়ে ধর্মীয় ফতোয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ কেন্দুয়া পৌর এলাকার বাদে আঠারোবাড়ি মহল্লার মা হাওয়া মহিলা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালী ও রোয়াইলবাড়ি বাজারের মহিলা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হালিম নেওয়াজ সাগরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

মহিলা কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের মনগড়া আইন তৈরি করে এসব মাদ্রাসা পরিচালনা করার পর গোপনে গোপনে আবাসিক ছাত্রীদের উপর নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা দিন দিনই বেড়ে যাওয়ায় ছাত্র অভিভাবকগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সোমবার সকালে মাসিক উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অভিভাবকগনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা।

তিনি মহিলা কওমি মাদ্রাসার প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, কোন আবাসিক ছাত্রীকে তার মা বাবার সঙ্গেও দেখা করতে দেয়া হয় না। এছাড়া আবাসিক ছাত্রীদের কক্ষে শিক্ষক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতেও পারে না। এ সুযোগে অপরাধমূলক কার্যক্রম বেড়ে চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম, পৌর মেয়র মোঃ আসাদুল হক ভূঞা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ খবিরুল আহসান, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসিব আহসান, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সহ বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম মহিলা কওমি মাদ্রাসার এসব কার্যক্রম তদারকি করার জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করার দাবী জানান।

তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গড়ে উঠছে মহিলা কওমি মাদ্রাসা। কিন্তু এসব মাদ্রসায় সরকার বা উপজেলা প্রশাসনের কোন তদারকি নেই। তারা নিজেদের মতো আইন করেই চালাচ্ছে মাদ্রাসা। আবাসিক ছাত্রীরা একমত বন্দি জীবন যাপন করছে। ধর্মীয় অনুসাসনের ভয়ে এসব ছাত্রীরা শিক্ষকদের কাছে একমত জিম্মি। এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে প্রথমেই মাদ্রাসার তালিকা তৈরি করতে হবে, হতে হবে নিজেদেরকে সচেতন এবং বাড়াতে হবে তদারকি কার্যক্রম। তিনি এসব মাদ্রাসার কার্যক্রম তদারকি করতে একটি কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান।

ওই সভায় কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, পৌর শহরের বাদে আঠারোবাড়ি মহল্লার মহিলা মা হাওয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালী ও রোয়াইলবাড়ি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হালিম নেওয়াজ সাগর গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠালে ছাত্রীদের ধর্ষনের দায় স্বীকার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক বেলালী স্বীকার করেন এক বছরে ৭/৮ জন ছাত্রীকে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করেছে। মাদ্রাসার একটি কক্ষে এই শিক্ষক রাত্রী যাপন করতেন।

ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গত বছরের ৬ জুলাই মা হাওয়া কওমি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওঃ আবুল খায়ের বেলালীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে ধর্ষিতা ছাত্রীর বাবা। এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি রোয়াইলবাড়ি মহিলা কওমি মাদ্রাসার ধর্ষিতা ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন।

সোমবার সভা শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, সভায় মহিলা কওমি মাদ্রাসার প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে। এসব মাদ্রাসার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test