E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুবিধা ভোগের সুযোগ হলো শরীয়তপুরবাসীর 

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৬:৩৪:৪৪
পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুবিধা ভোগের সুযোগ হলো শরীয়তপুরবাসীর 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : একটি সড়কের অভাবে পদ্মা বহুমুূখি সেতু দিয়ে চলাচল করা প্রায় দুঃস্বপ্নই ছিল শরীয়তপুর জেলার ১৯ লক্ষাধিক অধিবাসীর। জেলা সদরের সাথে মানসম্মত সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় শরীয়তপুর জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতু ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হতে চলেছিলো শরীয়তপুর জেলাবাসী। আজ একনেক সভায় প্রায় ১ হাজার ৭ শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের সড়ক প্রসস্তকরণের প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় প্রকৃত সুবিধা ভোগের সুযোগ সৃষ্টি হলো জেলা বাসীর। আর এ প্রকল্প অনুমোদনে নিরলস প্রচেষ্টা ছিল জেলার তিনজন সাংসদের। 

প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় শরীয়তপুর জেলা সদর সহ জাজিরা ও বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেতু মন্ত্রী ও শরীয়তপুরের তিনজন সংসদ সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মাওয়া পয়েন্ট থেকে শুরু করে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডুবা মৌজা পর্যন্ত সেতু নির্মানের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেন। শেখ হাসিনা তার সরকারের ৫ বছর মেয়াদের শেষ দিকে এসে ২০০১ সালের আগষ্ট মাসে মাওয়া চৌরাস্তা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এরপর ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মান বিষয়ে কোন কাজ করেনি। ২০০৭ সালের ২৮ আগষ্ট তত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মানের প্রকল্প পাস করেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন এবং ব্যয় সংশোধন করে এর সাথে রেলপথ সংযুক্ত করেন। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম প্রাক দরপত্র আহবান করেন। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারী ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন। বিশ্ব ব্যাংক ও কয়েকটি দাতা দেশের অর্থায়নে ২০১১ সালে শুরু করে ২০১৩ সালের শেষ ভাগে সেতু নির্মানের প্রধান কাজগুলো শেষ করে ২০১৫ সালের মধ্যে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের কথা ছিল।

কিন্তু কিছু ষড়যন্ত্রকারি সেতু নির্মানের প্রক্রিয়ায় মিথ্যে দূর্নীতির অভিযোগ এনে সেতু নির্মানের অনুদান বন্ধ করে দেয়। কানাডিয়ান আদালতে এ নিয়ে মামলা হয় (পরবর্তিতে মামলার অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা প্রমানীত হয়)। ইত্যবসরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেন। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর চীনের বিক্ষাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রীজ কোম্পানী পদ্মা বহুমূখি সেতু নির্মানের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা(৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ) ব্যয়ে এই নির্মান কাজ আগামী বছর শেষ হবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর ৭৭ শতাংশেরও বেশী কাজ শেষ হয়েছে। মোট ৪০টি পিলারের উপর ৪১টি স্প্যানের ২৪টি স্প্যান স্থাপিত হওয়ায় সাড়ে তিন কিলোমিটারেরও বেশী দৃশ্যমান হয়েছে। একই সাথে রেলপথ ও রোডওয়ে স্লাপ বসানোর কাজ চলামান রয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৫ কোটি মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিল্প উন্নয়নে অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এই একটি সড়কের অভাবে সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছিল খোদ শরীয়তপুরের বাসিন্দারা। পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে প্রতিবেশী মাদারীপুর জেলার প্রয়োজনীয় সকল রাস্তাঘাট নির্মান হলেও শরীয়তপুর জেলা ছিল সম্পূর্ন বঞ্চিত। জেলা সদর দপ্তর থেকে সেতু পয়েন্টে যেতে মান্ধাতার যুগের মাত্র ১২ ফিট প্রসস্ত প্রায় ৩০ কিমি দৈর্ঘ্যরে একটি সড়ক রয়েছে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের লোকেরা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বেকার রাজনৈকিত নেতাদের অযোগ্যতা ও দেউলিয়াত্বের কারনে এতদিন অতিপ্রয়োজনীয় এই সড়কটি নিয়ে কেউ ভানেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সংসদের পরিবর্তন হলে বর্তমান সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু প্রথমে উদ্যোগ গ্রহন করেন একটি প্রসস্ত সড়ক উন্নয়নের জন্য। এরপর শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও ৩ আসনের সাংসদ সাংসদ নাহিম রাজ্জাকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চার লেনের এই সড়ক নির্মান প্রকল্পের কাজ সফলতার মুখ দেখেছে।

পদ্মা সেতুর সুফল যাতে শরীয়তপুরবাসী পুরোপুরি ভোগ করতে পারেন সে জন্য এই সেতুর সঙ্গে বিদ্যমান জেলার প্রধান সড়কের সংযোগ তৈরি এবং সড়কটির উন্নয়নে এক হাজার ৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প নেন সড়ক বিভাগ।‘শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় একনেক বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক কাদির জানিয়েছেন, প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন করা হবে। প্রথমে পুরো দুই লেন সড়ক নির্মানের কাজ হাতে নেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ করা হবে। তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালে ডিপিপি প্রনয়নের পর জেলার তিনজন সংসদ সদস্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অবিরাম পরিশ্রম করেছেন। বিশেষ করে পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম এম.পি রীতিমত এই প্রকল্পের পেছনে লেগে ছিলেন।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন অপু বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল শরীয়তপুর জেলার ১৯ লক্ষ মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার সকল কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি জেলার এই প্রধান সড়কটি পদ্মা সেতুর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কেউ উদ্যোগ গ্রহন করেননি। কেউ কোন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে বলেও আমরা জানতে পারিনি। এই এ্যাপ্রোচ সড়কটির উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে শরীয়তপুরের মানুষ চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকলো। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘায়ু দান করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে যথাযথভাবে সফলতা দান করেন।


(কেএনআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test