E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীশংকৈলে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৬:৩৭:৫৯
রাণীশংকৈলে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার!

খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে
অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাধীনতাকামী মানুষেরা। তারা বলছেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা জানবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই। ভাষা আন্দোলনের প্রতিক শহীদ মিনার দেখে তারা পাঠ্য বইয়ের সাথে মিলিয়ে সংগ্রামী ইতিহাস মনে ধারণ করবে। অথচ সে ধারণ থেকে অনেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকার কারণে বলে মনে করছেন স্বাধীনতাকামী মানুষেরা।

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫৬টি সরকারি প্রাথমিক, ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি কলেজ ও ১৯টি মাদ্রাসা আছে। এ ছাড়া রয়েছে অর্ধশতাধিক কিন্ডার গার্টেন।

সপ্তাহব্যাপী ঘুরে দেখা যায়, ১৫৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুদ্বিজীবি স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়া ১৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনটিতেও নেই শহীদ মিনার। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রাণীশংকৈল সরকারী বালিকা, নেকমরদ সরকারী আলিমুদ্দিন, পাইলট, রাউতনগর, কাতিহার, মীরডাঙ্গী, গোগর আব্দুল জব্বার, গাজীরহাট, রাতোর, মহারাজা, ভরনিয়া, হাজী দবির উদ্দীন চৌধুরী, ধুলঝাড়ী, চোপড়া দোশিয়া সিডি ও কাশিপুর বটতলা উচ্চ বিদ্যালয়সহ মোট ১৫টি বিদ্যালয়ের ছাড়া ৫২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭ টি বিদ্যালয়ে এবং ১২টি কলেজের মধ্যে ডিকে মহাবিদ্যালয়, রাণীশংকৈল ডিগ্রী ও নেকমরদ বঙ্গবন্ধু কলেজে ছাড়া বাকী ৯টি কলেজ নেই শহীদ মিনার এবং উপজেলা জুড়ে মোট ১৯টি মাদ্রাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার নেই। এছাড়াও কিন্ডারগার্ডেন গুলোতেও নেই ভাষা শহীদদের স্মৃতি সম্বন্বিত প্রতিক শহীদ মিনার।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তা-ও করা হয় না বলে জানা গেছে।

ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছরেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনিসুর রহমান বাকী বলেন, ১৯৮৫ সালে রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজে অধ্যায়ন করার সময় ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে সকলে শিক্ষার্থীদের নিকট অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করেছিলাম। ভেবেছিলাম দেশ উন্নয়নের সাথে সাথে এক সময় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন হবে। অথচ এখনো হিসেব করে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। আমি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানাবো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা শহীদদের ইতিহাস জানার স্বার্থে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার দ্রুত স্থাপন করে দেওয়া হোক।

রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, শহীদ মিনার দেখে নতুন প্রজন্মের কৌতুহুল জাগবে । সেই কৌতুহুল থেকে তারা জানবে বাংলা ভাষার ইতিহাস সংগ্রামের কথা। অথচ দেশ উন্নয়ন হলেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার না হওয়া দুঃখজনক। অবিলম্বে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের প্রতি ছড়িয়ে দিতে এবং বাংলা ভাষার গুরত্ব বুঝাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপন করার দাবী জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকছেদুর রহমান বলেন, সরকারীভাবে বরাদ্দ হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলী শাহরিয়ার বলেন, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। সরকারীভাবে সহযোগিতা পেলে পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদা বুধবার বলেন, সরকারী ভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করা হবে কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনারা এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

(কেএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test