E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চালু নেই জরুরী বিভাগ

জনবল সঙ্কটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৮:০৩:৪৯
জনবল সঙ্কটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ১৯১১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও জনবল সংকটের কারণে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে সমস্যায় পড়েছে সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষ। মেডিকেল কলেজ থেকে ইতিমধ্যে তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থী পাশ করে গেলেও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। কয়েক বছর আগেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন হলেও অত্যাবশ্যকীয় জরুরী বিভাগসহ ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির প্রায় পুরোটাই অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। 

জরুরী বিভাগসহ ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সাতক্ষীরার এ বিশাল জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে তাঁদের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে। তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাঁদের লব্ধ জ্ঞান হাতে কলমে প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্লিনিক্যাল ক্লাসের সুযোগ ছাড়াই পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের। অপর দিকে পূর্ণাঙ্গ জনবল পদায়ন ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ। স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষর্থীদের দাবির মুখে সরকারের উচ্চমহল থেকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হলেও পূর্ণাঙ্গরূপে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করা হয়নি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্র“তিতে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করে। মোট ৪০ দশমিক ৯ একর জমির উপর ৩ শত ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রথমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ায় ২০১৫ সালে বহির্বিভাগ ও জরুরী বিভাগসহ ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র বহির্বিভাগসহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করা হয়। ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামোর মঞ্জুরীকৃত ৫৮টি চিকিৎসক কর্মকর্তার পদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন কর্মরত এবং ৪০টি পদ শুন্য রয়েছে, মঞ্জুরীকৃত ৪১টি কর্মচারীদের পদের মধ্যে ১৮ জন কর্মরত এবং ২৩টি পদ শুন্য রয়েছে, মঞ্জুরীকৃত ৮৬ টি নার্সিং কর্মকর্তাদের পদের মধ্যে ৭৮ জন কর্মরত এবং ৮টি পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে মঞ্জুরীকৃত ১০টি সিনিয়র কনসালটেন্ট পদের মধ্যে ইএনটি পদে ১ জন কর্মরত ছাড়া বাকী ৯টি পদই শুন্য রয়েছে এবং মঞ্জুরীকৃত ১২টি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের মধ্যে সব পদই শুন্য রয়েছে। এছাড়া আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদটিও শুন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্যাথালজি বিভাগেও কোন বিশেষজ্ঞ নেই।
[
জরুরী বিভাগ চালু না হওয়ায় এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজস্ব ও নিয়মিত সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্ট না থাকায় অন্তবিভাগে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও প্রভাষক দ্বারা অনিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে মাত্র। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়া তাঁদের পাওয়া যায় না।

এমনকি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অনুরোধও উপেক্ষা করতে শোনা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক বার ফোন করেও তাঁদের পাওয়া যায় না। রোগীদের বাধ্য করা হয় তাঁদের চেম্বারে অথবা ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে। যার প্রেক্ষিতে সাধারণ রোগী ছাড়া জরুরী ও মরাত্মক রোগী এখানে ভর্তি হতে সাহস করছেন না বলে জানাগেছে।

এসব রোগীদের খুলনা বা ঢাকা অথবা ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপকরা কোন মতে নির্ধারিত ক্লাস নিলেও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ছেড়ে তাঁদের নিজস্ব ক্লিনিক ও প্রাইভেট প্রাকটিস করতে তাঁরা কখনও ভুলে যান না। ইন্টার্ন চিকিৎসক দ্বারা কোন মতে চালানো হচ্ছে সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষের আশা আকাঙ্খার সুবিশাল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

জরুরী বিভাগসহ ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি বেড়ে চলেছে দিন দিন। কয়েক কোটি টাকার পর্যাপ্ত মেডিকেল চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ থাকলেও সেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বিশেষজ্ঞ না থাকায় বিকল হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া কোন প্যথালজি ডাক্তার ছাড়া কিছু অর্বাচিন দারা চলছে প্যাথালজি বিভাগ। গাইনি বিভাগ থাকলেও রোগীর সংখ্যা এক ধেকে দু’জন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরাকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল কাঠামো নিয়োগ দিয়ে জরুরী বিভাগসহ ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করা গেলে সাতক্ষীরার চিকিৎসা সংকট কমবে।

অপরদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ সুত্র জানা যায়, ২০১১-২০১২ অর্থ বছর থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত নির্মাণ ছাড়াই ভাড়া করা ভবনে শুরু করা হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের যাত্রা। পরবর্তীতে সম্প্রতি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হলেও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ চলছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ চালু করার সময় প্রথম পর্যায়ে মঞ্জুরীকৃত ৭৭টি শিক্ষক পদের মধ্যে মাত্র ৫৩ জন কর্মরত এবং ২৪টি পদ শুন্য রয়েছে, মঞ্জুরীকৃত ২২টি কর্মচারীদের পদের মধ্যে ১১ জন কর্মরত এবং ১১টি পদ শুন্য রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৫৬২টি পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াধীন থাকলেও তা এখনও পদায়ন হয়নি। যার প্রেক্ষিতে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা শিক্ষা আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না বলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের বাস, গ্যারেজ, গেষ্ট হাউজ, স্টোর নির্মাণ প্রয়োজন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ পদসৃষ্টি ও পূর্ণাঙ্গ জনবল পদায়ন হলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হতে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক তৈরী করা সম্ভব হবে এবং সাতক্ষীরার জনগণের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদ্ধতিগত জনবল পদায়ন ও জরুরী বিভাগ চালু করা হলে সাধারণ মানুষের জরুরী ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ একান্ত জরুরী।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test