E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাটেশ্বরী নদীতে পুকুর তৈরি করে চলছে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৮:০৯:৩৫
পাটেশ্বরী নদীতে পুকুর তৈরি করে চলছে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : এক কালের খরস্রোতা পাটেশ্বরী নদী এখন প্রভাবশালীদের দখলে। নদী দখল নিয়ে পুকুর তৈরি করে অবাধে চলছে মাছ চাষ। নদীর গতি প্রবাহ রোধ করে নদীর ভেতর পুকুর খনন করা হচ্ছে একের পর এক। কিন্তু এই নদী দেখার যেন কেউ নেই। নদীর বুক ছিড়ে ক্ষত বিক্ষত করে পাল্টিয়ে দেয়া হচ্ছে নদীর রূপ। এর ফলে মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে পারছেনা সাধারন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকেরা। গতি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নৌপথে পন্য পরিবহন করাও সম্ভব হয়ে ওঠছেনা।

কেন্দুয়া উপজেলার গোগ বাজার এলাকায় পাটেশ্বরী নদীর উৎপত্তিস্থল। সূতি সাইডুলি নদীর শাখা নদী হিসেবে পাটেশ্বরী নদী একসময় ছিল খরস্রোতা। বর্তমানে মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে গোগ বাজার এলাকার ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরী করা হয়েছে। এতে মা মাছেরা সময়মত ডিম দিতে পারলেও সংরক্ষনের তেমন কোন পাহারার ব্যবস্থা নেই।

এক কালে এই পাটেশ্বরী নদী পথে সিলেট, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, নারায়ানগঞ্জ, তাড়াইল, ইটনা, মিটামইন, খালিয়াজুড়ি, মোহনগঞ্জ এলাকা থেকে নৌপথে বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হতো। ফলে অনেক মানুষের কর্মের সংস্থানও ছিল এই বাণিজ্যিক এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে তা নেই বললেই চলে।

কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য গোগ গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম রুমন ও ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাসিম উদ্দিন জানান, পাটেশ্বরী নদীতে আগে বড় বড় নৌকা স্টিমার আসত। গোগ বাজারে ছিল বেশ কয়েকটি পাটের গুদাম। কিন্তু নদীতে এখন সারা বছর পানি না থাকায় নৌকা চলাচল খুব একটা হয় না।

ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম রুমন বলেন, এই নদী খনন করা হলে নদী পথে যেমন নৌকা চলবে, তেমনি কম খরচে পন্য আসবে। তাছাড়া নদীর পানি শত শত একর কৃষি জমিতে সেচ কাজেও কম খরচে ব্যবহার করতে পারবে কৃষকরা। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।

নদী ভরাটের কারণ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দুটি কারণে নদী ভরাট হয়। একটি প্রাকৃতিক আর অন্যটি মানবসৃষ্টি। তিনি বলেন, জৈষ্ঠ আষার মাসে যখন উজান থেকে নদীতে পানি আসে, তখন পানির সঙ্গে পলি আসে নদীতে। আবার যখন পানি চলে যায় তখন পলি নদীতেই থেকে যায়।

এছাড়া, মানবসৃষ্টির ভরাটের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীতে অতিরিক্ত বর্জ্য ফেলা, নদীর গতি প্রবাহ রোধ করে বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছ ধরা, ছোট বড় পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করার কারণে নদী দিন দিনই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি নদীর গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এবং নদী বাঁচাতে নদী খননের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানান।

গোগ বাজার এলাকায় ব্রীজ সংলগ্ন পাটেশ্বরী নদীতে মৎস্য অভয়াশ্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে নিয়মিত পাহারাদার না থাকায় অনেক সময় তা সংরক্ষন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ খবিরুল আহসানের সঙ্গে নদীর ভেতর পুকুর তৈরি করে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন নদীর ভেতর কোন ব্যক্তি পুকুর খননের কাজ করেন বা সংস্কার করেন তা আমরা জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

তিনি বলেন, যারা নদীতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ ও নদীকে ক্ষত বিক্ষত করে নদীর গতি প্রবাহ রোধ করছেন এ বিষয়ে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হবে। তদন্তে সত্য প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূল ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test