E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মুকতাদির

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৭:১৬:২০
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মুকতাদির

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর : জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্নক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ৯জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার। 

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পদক মনোনীত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। ওই তালিকায় অনুযায়ী চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কৃতি সন্তান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ. কে. এম. এ মুকতাদির পাচ্ছেন স্বাধীনতা পদক ২০২০।

স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত অন্যরা হলেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), মরহুম কমান্ডার আব্দুর রউফ, মরহুম মো. আনোয়ার পাশা ও আজিজুর রহমান। চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডাঃ মো. ওবায়দুল কবির চৌধুরী, সাহিত্যে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ (মুক্তিযোদ্ধা) এবং সংস্কৃতিততে কালীপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন। আর শিক্ষায় ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনাতয়নে এ পুরস্কার দেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ডা. এ.কে.এম এ মুকতাদির ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদির ও তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় নিজ জন্মভূমি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে ২০০৪সনে ২৬মার্চ গড়ে তোলেন নিজ নামে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল।

ডা. মুকতাদির ১৯৭৬সন থেকে ২০০৩ইং সন পর্যন্ত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির শুরু করেন। বিনামূল্যের চক্ষু শিবিরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ছুটে আসে। চক্ষুশিবিরে ক্যাম্পে ৯৭ হাজার মানুষের অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরে বিনামূল্যে প্রায় ২০হাজার রোগী চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে। ছানি অপারেশন ৩৭হাজার ৩শ ৪৩জন, নালি অপারেশন ৪হাজার ৩০২জন, চোখের মাংস বৃদ্ধির অপারেশন ৮৩৮জন, গ্লোকোমার ৬৬৪জন, শিশুদের নেত্রনালির ১হাজার ১৬৪, চোখে পাথর সংযোজন ৬১৮জন, চোখের পাতার অপারেশন ৭২৪জন, গুটি অপারেশন ৮৭৫জন, টিউমার অপারেশন ৫৮৩জন, টেরা চোখ অপারেশন ৭৩জন।

গৌরীপুরের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা ডা. একেএমএ মুকতাদির ২০০৪সনে মাত্র ১০শয্যা নিয়ে নিজ গ্রামে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। চাহিদার প্রয়োজনে ক্রমে ক্রমে হাসপাতারের কলেবর বৃদ্ধি করে ৩০শয্যা, পরবর্তীতে ৪তলা ভবনে নতুনভাবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ ১০০শয্যার উন্নীত করা হয়।

হাসপাতালে রয়েছে ৩টি এসি কেবিন, ৬টি নন এসি কেবিন, মহিলাদের পৃথক নামাজখানা, রেস্ট রুম, ষ্টাফ ক্যান্টিন, হাসপাতালের আগত রোগী ও আত্মীয় স্বজনের জন্য একটি পৃথক ক্যান্টিন, ডাক্তারদের রেস্ট রুম, ২টি অপারেশন থিয়েটার, মনিটরের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারের দৃশ্য সরাসরি আত্মীয় স্বজনদের দেখার সুবিধা, প্রতিটি ফ্লোরে আনন্দ বিনোদনের জন্য রঙিন টেলিভিশন।

সার্বক্ষনিক রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন ৩জন মেডিকেল অফিসার, ২১জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতি শুক্রবার সার্জিক্যাল টিমের মাধ্যমে ল্যান্স সংযোজন, ছানি অপারেশন ব্যবস্থা। হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম এ মুকতাদির জানান, জীবনের সমস্ত অর্জন দিয়ে তিলে তিলে এ হাসপাতালটি গড়ে তোলেছেন। দেশের রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে সেবা করা হয়। বিদেশী রোগীরাও এক সময় এদেশে আসবে।

৪ একর জমির মাঝখানে হাসপাতাল ভবন, সামনে দর্শনার্থীদের জন্য নয়নাভিরাম পার্কের ব্যবস্থা। পাশেই বায়তুল আমান জামে মসজিদ। একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে চোখে জুড়ানো হরিণের পাল। পুরো হাসপাতালে ধাপে ধাপে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দেশী-বিদেশী কাচ, টাইলস, সৌন্দর্যবর্ধন চিত্র।

ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য ইতিপূর্বে ভারতের তিরুচিরাপল্লীতে এ্যাসোসিয়েশন অফ কমিউনিটি অফথ্যালমলোজি ইন ইন্ডিয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ্যাওয়ার্ড, ২০০২সালে লায়ন্স এফ্রিসিওয়ান এ্যাওয়ার্ড, ২০০৫সালে এএফএও কর্তৃক ডিসটিংগোয়িং সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড, একেদাস এ্যান্ডওমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, ২০১৫সালে ভারতে গোল্ডমেডেলসহ দেশ ও বিদেশে ১৯টি এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন।

স্বাধীনতা পদক দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test