E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহাখালীতে নাইটকোচে গার্মেন্টকর্মী ধর্ষণের শিকার

২০১৪ আগস্ট ০৮ ১৩:১০:৩০
মহাখালীতে নাইটকোচে গার্মেন্টকর্মী ধর্ষণের শিকার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের ভেতর এক গার্মেন্টকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঈদের ছুটি শেষে শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে ঢাকায় পৌঁছার পর বুধবার ভোরে বাসচালক তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বুধবার রাতে নালিতাবাড়ীর বারমারী বাজারে ফিরতি ট্রিপে বাসটির বদলি চালক ও হেলপারকে স্থানীয় জনতা আটক করে।

জনতার দাবি, বাসের মূল চালককে ধরে আনা হলে এ দুজনকে ছাড়া হবে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তেজনা ও নানা দেনদরবারের পর সিদ্ধান্ত হয়, আটককৃতদের নিয়ে শুক্রবার সকালে ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকার তেজগাঁও থানায় মামলা করা হবে।

ঘটনার পর থেকে বাসের মূল চালক রফিকুল ইসলাম পলাতক। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ঘাটপাড়া গ্রামে। স্থানীয় বাস মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, অভিযুক্ত বাসচালক রফিকুলকে ঢাকায় বা তার ফুলপুরের গ্রামের বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের গৃহবধূ ঢাকায় একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নালিতাবাড়ী থেকে ঢাকায় নাইট কোচ হিসেবে চলাচলকারী লিজা-অনিক পরিবহনের একটি বাসে ওই গার্মেন্টকর্মীকে তুলে দেন তাঁর স্বামী।

এ সময় স্ত্রীকে নিরাপদ হেফাজতে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য বাসটির চালক রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করেন গৃহবধূর স্বামী। তবে বুধবার ভোরে বাসটি ঢাকার মহাখালী টার্মিনালে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা সবাই নেমে গেলেও ওই গৃহবধূকে নিরাপত্তার কথা বলে নামতে দেয়নি চালক রফিকুল। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা স্টাফদের কৌশলে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমে ওই গৃহবধূর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং জোরপূর্বক তাঁকে ধর্ষণ করে। ছাড়া পেয়ে ওই গৃহবধূ গার্মেন্টকর্মী মোবাইল ফোনে বিষয়টি স্বামীকে জানান।

পরে বুধবার রাতে ফের বাসটি যাত্রী আনতে বারমারী বাজারে গেলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ধর্ষিত গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় লোকজন নিয়ে বাসের চালক, হেলপারসহ গাড়িটিকে আটক করে রাখে। কিন্তু অভিযুক্ত চালক রফিকুল বুধবার রাতে গাড়িতে না গিয়ে অন্য চালককে পাঠানোয় তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে না পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে রাখে। তাদের ছাড়িয়ে নিতে পরিবহন শ্রমিক নেতারা অনেক চেষ্টা করেন। পরে আটক বাসচালক শহিদ (৩৫), হেলপার আব্দুল কাদির (৩৬), আলম মিয়াকে (২৮) নালিতাবাড়ী উপজেলার পোরাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ মিয়ার জিম্মায় তাঁর বাড়িতে রাখা হয়।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী থানার ওসি এ কে এম আমিনুল হক বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ঘটে থাকলেও এ মামলা ঢাকায় করতে হবে।’

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার ওই গার্মেন্টকর্মী ঢাকা থেকে নালিতাবাড়ীতে পৌঁছেন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুকসেদুর রহমান লেবুর কাছারিপাড়ার বাসায় ধর্ষিত নারী, তাঁর পরিবারের সদস্য, বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিক নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওই গার্মেন্টকর্মী আটক ব্যক্তিরা ধর্ষণকারী নয় বলে শনাক্ত করেন। পরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকার তেজগাঁও থানায় মামলা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা মুকসেদুর রহমান বলেন, ‘তাঁর কাছ থেকে শোনার পর ঘটনা সত্য বলে মনে হয়েছে। এ কারণে আমরা তেজগাঁও থানায় মামলার জন্য তাঁকে পাঠাচ্ছি। আমরা ঘটনার ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’

বাসটির মালিক ও নালিতাবাড়ী বাস-কোচ মালিক সমিতির সহ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘ওই মহিলার পরিবারের লোকজন আগে জানায়নি। জানালে আমরা চালককে আটকাতে পারতাম। আমরাও মানবিক এবং ব্যবসার স্বার্থে ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।’ শেরপুর আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নালিতাবাড়ী শাখার সভাপতি দুলাল হুসাইন বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমাদের মনে হয়েছে ঘটনা সত্য। আমরাও ওই নারীকে আইনগত সহযোগিতা করব।’

জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকালে মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাসহ আটক ব্যক্তিদের নিয়ে ঢাকায় গিয়ে থানায় মামলা করা হবে।

ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মী বলেন, ‘বাসটি থামার পর সব যাত্রী চলে গেলেও আমাকে নামতে দেয়নি নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে। পরে চালক দুই হেলপারের একজন গাড়ি ধোয়ার জন্য পানি আনতে পাঠায়, আরেকজনকে খাবার আনতে পাঠায়। তারা চলে গেলে চালক গাড়ির দরজা লাগিয়ে আমার সর্বনাশ করে। একপর্যায়ে একজন হেলপার এলে তার ডাকাডাকিতে চালক আমাকে ছেড়ে দেয়। দরজা খোলামাত্র সিটের ওপর থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে দৌড়ে আগে নিজের প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করি। পরে পরিস্থিতি বুঝে গার্মেন্টে গিয়ে স্বামীকে ফোন দিই।’

(ওএস/এটিঅার/আগস্ট ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test