E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় জুতা পায়ে প্রভাত ফেরীতে ইউএনও, অধ্যক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী কর্মকর্তাগণ

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৮:২৫:৫০
আগৈলঝাড়ায় জুতা পায়ে প্রভাত ফেরীতে ইউএনও, অধ্যক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী কর্মকর্তাগণ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : মহান ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবেস ভাষা শহীদদের স্মরনে উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে প্রভাত ফেরীতে জুতা পায়ে অংশ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম, সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর সরদার আকবার আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু তাহের মিয়া, তালিকাভুক্ত রাজাকার পরিবারের সদস্য মৎস্য অফিসার রোজিনা আক্তার। 

জুতা পায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রশাসনের প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জুতা পায়ে প্রভাত ফেরীর ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়ায় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রদানের অন্যতম কারিগর শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শন ও কর্মকান্ড নিয়ে স্থানীয় জনগনের মাঝে চরম ঘৃনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়।

‘‘উপজেলা প্রশাসনের ফেইসবুক আইডিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারী রমনী রঞ্জন বিশ্বাস কর্তৃক ২১ফেব্রুয়ারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৮টা ৪০ মিনিটে পোষ্ট করা ওই ছবিতে দেখা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের ব্যানারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রভাত ফেরীতে সামনের সারিতে অংশ নেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম, সহকারী কমমিশনার (ভূমি) ফাতিমা আররিন তন্বি, সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর সরদার আকবর আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু তাহের মিয়া, শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক (অবঃ) লিয়াকত আলী হাওলাদার, মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার, সহকারী সমবায় কর্মকর্তা সৃজন সিপাহী, গৈলা ইউপি সংরক্ষিত সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সদস্য পবিত্র রানী বাড়ৈ, মৎস্য অফিসের পিওন এনায়েত সরদার, বিআরডিবি অফিসের পিওন নুর মোহম্মদসহ মুক্তিযোদ্ধা ও অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে ব্যানার নিয়ে প্রথম সারিতে অবস্থান করা একমাত্র উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত ব্যতীত সামনের সারির সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের পায়েই জুতা পরিহিত দেখা যাচ্ছে। এসকল ছবি প্রশাসনের কর্মচারীরাই তুলেছেন এবং প্রশাসনের পাতায় পোষ্ট করায় ত্যব্যি ক্ষেভোরে সৃষ্টি হয়েছে।

ভাষা শহীদদের প্রতি নগ্ন পায়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে উপজেলা পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবার প্রধান সড়কে জুতা পায়ে পোষ্ট করা হাস্যোজ্জল ছবি উপজেলার সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। জুতা পায়ে সদর সড়কের দিয়ে প্রভাত ফেরীর ওই ছবি অনেক পুলিশ সদস্যরা তুলেছেন, যা স্থির চিত্রে দেখা গেছে। ভাইরাল হওয়া ওই ছবির কারনে তীব্র সমালোচনার মুখে পরেছেন ইউএনও, অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।

নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক প্রবীন ব্যক্তি অভিযোগে বলেন, জামাত পন্থী হিসেবে আখ্যা পাওয়া অধ্যক্ষ আকবর আলী, উপজেলার তালিকাভুক্ত রাজাকার বজলু ফকিরের বোন মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার কি ভাবে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো প্রভাত ফেরীতে অংশ নেন? তাদের প্রশ্ন মুক্তিযোদ্ধারা, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা কি ভাবে জুতা পায়ে প্রশাসনের প্রভাত ফেরীতে অংশ নিলেন ? আক্ষেপ করে তারা বলেন, যারা বিষয়টি দেখবেন সেই প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাই ভাষা শহীদদের অবজ্ঞা আর অবহেলা করে চরম অন্যায় করেছেন। এজন্য তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ প্রফেসর আকবর আলী জুতা পায়ে প্রভাত ফেরীতে অংশ নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি জ্বর ও ঠান্ডায় ভুগছিলেন। নিজের অসুস্থতার জন্য তাকে জুতা প্রভাত ফেরীতে অংশ নিতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ছোট বেলা থেকেই ভাষা শহীদদের প্রতি তিনি নগ্ন পায়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছিলেন। অসুস্থতার জন্য প্রভাত ফেরীতে অংশ না নিলে সেটাও খারাপ দেখাত। অন্য কারো বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য না করে “স্যরি” বলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ছবিটি দিয়েছে তারা নষ্ট মন মানষিকতার। কারন, উপজেলা পরিষদ থেকে প্রভাত ফেরী নিয়ে যখন সড়কে উঠে তখন আমি ও আমার সাথে যারা ছিলেন তারা সকলেই জুতা খুলে তারপর প্রভাত ফেরী শেষ করি। কে বা কারা প্রভাত ফেরি শুরুর আগ মুহূর্তের ছবি পোস্ট দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, ভাষা দিবস থেকে স্বাধীনতার ডাক আসে। তাই ভাষঅ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয় সবার আগে। নগ্ন পায়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে জুতা পায়ে প্রভাত ফেরী করা শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা আর অবজ্ঞার শামিল। ইউএনও সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, প্রথমে জুতা পায়ে প্রভাত ফেরী শুরু করলেও তিনি নিষেধ করার পরে ইউএনও জুতা খুলে ফেলেন।

এদিকে সাংবাদিকেরা ইউএনওর বক্তব্য নেয়ার পরেই উপজেলা প্রশাসনের আইড থেকে জুতা পায়ে পোষ্ট করা এশাধিক ছবি সরিয়ে নিয়েছেন।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test