E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কটির অবস্থা চলচলের অনুপযোগী 

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৮:৩৯:৩০
সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কটির অবস্থা চলচলের অনুপযোগী 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : প্রতিবছর কম-বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই  সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে সড়কটির ছাল চামড়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও।  

সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট মোড় থেকে (জিরো পয়েন্ট) শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের এ সড়কটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে একটি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা থেকে দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলা সদর হয়ে একেবারে সুন্দরবন ঘেঁষা মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য। সড়ক পথে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি। অথচ এ সড়কটির দুরাবস্থা দীর্ঘদিনের। বছরের পর বছর ধরে খোয়া, পিচ ওঠে চলাচলের অযোগ্য হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে মেরামত করা হলেও ৩-৪ মাস বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের পর আবার চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। ১৮ ফুট প্রস্থ এ সড়কটি দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট বাড়িয়ে ২৪ ফুট প্রস্থ, মজবুতকরণ ও ওভারলেপিং করার জন্য ৩১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভাঙ্গাচোরা এ সড়কটি ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর থেকে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ১৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পৃথক দুইটি প্রকল্পে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক মেরামত করার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সোয়া দুই কিলোমিটার সড়ক মেরাতমের জন্য ১ জানুয়ারি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলার মোজাহার ইন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়েছে। ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সোয়া দুই কিলোমিটার সড়ক মেরামতের আর একটি প্রকল্পের টেন্ডার ৯ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কাজটিও পেয়েছেন বাগেরহাট জেলার মোজাহার ইন্টারপ্রাইজ। তবে এখনও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

শ্যামনগর উপজেলার ছোট ভেটখালির গ্রামের হোসেন আলী জানান, জমি-জমা বিষয়ে সাতক্ষীরা জজকোর্টে মামলা রয়েছে তার। এ জন্য তাকে প্রায়ই সাতক্ষীরায় আসতে হয়। কিন্তু রাস্তার ভোগান্তির কারণে সাতক্ষীরায় আসার কথা মনে হলেই ক্লান্তি পেয়ে বসে। কিন্তু উপায় না থাকায় এ ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ঝাকুনি খেতে আসতে হয়। এ ধরণের কথা বলেন কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা সমীর কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, মামালা-মোকর্দ্দমা ছাড়াও ব্যবসার কারণে প্রায় তাকে সাতক্ষীরায় আসতে হয়। সাতক্ষীরায় একবার আসলে ২-৩দিন লাগে সুস্থ হতে। শরীর ব্যথা হয়ে যায়।

পারুয়িার অনুপ বিশ্বাস, কুলিয়ার সাহেব আলী, বহেরার শাওন আহম্মেদসহ কয়েকজন জানান, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে যেখানে যান বাহন ও পায়ে হেঁটে চলাচল মুশকিল হয়ে পগেছে সেখানে রাস্তার দু’ ধার পরিষ্কার করে গাছের গোড়ায় সাদা রঙ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করা হয়েছে। এটা এদেশেই সম্ভব।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি অ্যাড.ফাহিমুল হক বলেন, সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটির মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত অবস্থা খুবই খারাপ।

সড়কজুড়ে গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল অযোগ হয়ে পড়েছে। ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। তবে গর্ত সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাস্তার দু’পাশে বেশ কয়েকটি ইটভাটা আছে। এসব ভাটায় মাটি ও ইট বহনকারি ট্রলি চলাচল রাস্তার বেহাল অবস্থার অন্যতম কারণ। রাস্তার উপর মাটি পড়ে থাকায় সামান্য বৃষ্টি বা কুয়াশায় ভারী যানবাহন উল্টে যাচ্ছে। সড়কটি সাতক্ষীরা-২,৩ ও ৪ আসনের তিনজন সাংসদের এলাকার উপর দিয়ে গেছে। তারও এ সড়কের উপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। অথচ সেই রাস্তার এই করুণ দশা খুবই দু:খজনক। সাড়ে চার কিলোমিটার নয়, সড়কটি সম্পূর্ণ মেরামত করে চলাচল উপযোগী না করা হলে সাতক্ষীরাকে অচল করে দেওয়ার মতো আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন তারা।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন জানান, সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কটি ১৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য ৩১১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে মানুষের চলাচলের ভোগান্তি দুর করতে ৯০লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ কিলোমিটার সড়কের কিছু কিছু অংশ মেরামতের দুইটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যটির দ্রুত সময়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আলীপুর থেকে সখিপুর পর্যন্ত আরও ১০ কিলোমিটার সড়ক সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেরাই ৮-১০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ সড়কে ২০১৮ সালে ছোট মেরামত (মাইনর পিএমপি) প্রায় ৪০ লাখ টাকা ও ২০১৯ সালে ২৫ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এত দীর্ঘ সড়ক মেনটেন্সের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ প্রয়োজন হয় তা না পাওয়া যাওয়ায় বেশি খারাপ স্থানগুলো মেরামত করা হয়ে থাকে। কিন্তু ৫০-৬০ টন পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করার কয়েক দিনের মধ্যে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test