E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আরেক জাহালাম হয়ে সাজা ভোগ করছেন বরিশালের কাদের!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৭:৪৮:৩৩
আরেক জাহালাম হয়ে সাজা ভোগ করছেন বরিশালের কাদের!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে স্ট্যাম্প বিক্রি করে এবং বাড়িতে একটি মুরগীর খামার নির্মাণ করে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন যাপন করছিলেন সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলের সাবেক কর্মচারী এইচএসসি পাস করা যুবক আব্দুল কাদের (৩৯)। 

দেশব্যাপী আলোচিত টাঙ্গাইলের জাহালামের মতো আব্দুল কাদেরের বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানায় মিল থাকায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকার একটি মামলার আসামি জুয়েল রানার পরিবর্তে পুলিশ আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।

শুধুমাত্র বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানায় মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত জুয়েল রানার পরিবর্তে আব্দুল কাদের দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে সাজাভোগ করছেন। এদিকে অর্থাভাবে ঋণগ্রস্থ হয়ে তার পরিবার এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে পুলিশের দাবি সঠিক আসামিকেই গ্রেফতার করেছেন তারা।

জানা গেছে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) ঢাকার বংশাল শাখা থেকে জাঁলিয়াতি করে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২০০৮ সালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে সড়ক বিভাগ। দুদক ওই মামলার তদন্ত করে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। চার্জশীটের চার নম্বর আসামির নাম জুয়েল রানা। ২০১৬ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক চার্জশীটে অভিযুক্ত জুয়েল রানা নামের আসামির ১০ বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ছাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আউয়াল। সাজাপ্রাপ্ত আসামি জুয়েল রানার পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন থাকা সত্বেও শুধুমাত্র বাবার নাম ও গ্রামের নামের মিল থাকায় আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতারের বিষয়ে এএসআই আউয়াল বলেন, আব্দুল কাদেরই এলাকায় জুয়েল নামে পরিচিত। মামলায় তার বাবার নাম, ঠিকানাও ঠিক রয়েছে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম-নিবন্ধন এগুলো ঢাকা থেকে এসে পরে ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যাচাই-বাছাই করে দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সঠিক আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখিত মামলার রায়ে জুয়েল রানা নামের আসামির ১০ বছরের সাজা হয়।

অপরদিকে অন্যের হয়ে কারাগারে সাজাভোগ করা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী হেপি আক্তার বলেন, আমার স্বামীর নাম জুয়েল নয়, তার নাম আব্দুল কাদের। এছাড়া তিনি যদি ব্যাংকের টাকা আত্মসাতই করতেন তাহলে গ্রেফতারের আগে তিনিসহ আমরা কেন এতো কস্টইবা করবো। আর তিনিও কেন প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াবেন।

আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে আমি দুই সন্তানকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পরেছি। বন্ধ হয়ে গেছে আমার স্বামী আব্দুল কাদেরের মুরগীর খামারটি। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনেও কোনো সুরাহা করতে পারিনি।

কান্নাজড়িত কন্ঠে হেপি আক্তার বলেন, আমি আমার নির্দোষ স্বামী আব্দুল কাদেরের নিঃশ্বর্ত মুক্তির দাবিতে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের সর্ব্বোচ আদালতের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসি পাস করা আব্দুল কাদের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে স্ট্যাম্প বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিলেন। এর আগে আব্দুল কাদের বরিশাল নগরীর রূপাতলীস্থ সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। তার বাবার নাম মৃত আয়নাল ঢালী। জুয়েল রানা নামের অন্য কেউ থাকলেও আব্দুল কাদের অন্যকোনো নামে পরিচিত নয়; তিনি আব্দুল কাদের নামেই পরিচিত।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলায় যখন চার্জশিট হয়েছে তখন আসামীর দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এখানে কোথাও একটা ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আব্দুল কাদের না জুয়েল রানা এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করলেই মূলরহস্য বেরিয়ে আসবে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) খাইরুল আলম বলেন, অতিসম্প্রতি আমি এ খবরটি জানার পর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারো বিরুদ্ধে কোন গাফিলতির প্রমান পাওয়া গেলে নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test