E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রামগঞ্জে যুবদল কর্মীকে থানা হেফাজতে দুইদিন নির্যাতন !

২০১৪ আগস্ট ০৯ ১৪:৫০:১৮
রামগঞ্জে যুবদল কর্মীকে থানা হেফাজতে দুইদিন নির্যাতন !

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার সাইফুল ইসলাম সুমন (৩২) নামের এক যুবদল কর্মীকে দু’দিন ধরে থানা হেফাজতে আটকে রেখে নির্যাতনের পর তাঁর দু’চোখ নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে ওসিসহ দুই এএসআই শরীফ হোসেন ও মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার যুবদল কর্মী সুমন উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের চঙ্গিরগাঁ গ্রামের সামছুর নুর পাটওয়ারীর ছেলে ও ইউনিয়ন যুবদলের সংক্রিয় কর্মী ছিলেন। আর অভিযুক্ত ।

এছাড়াও গত ১৫ মে দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর ওসি’র বিরুদ্ধে এসপি’র কাছে ১৩ লাখ টাকা চাঁদা অভিযোগ করায় তোলপাড় শুরু হয় রামগঞ্জ জুড়ে। ওই ব্যবসায়ী উপজেলার উত্তর হরিচ্চর গ্রামের মাওলানা মো. শাহ আলমের ছেলে। অভিযোগের কয়েক দির পরে ওই ব্যবসায়ীকে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করনে। এদিকে গত ১৯ ও ২১ এপ্রিল সাইফুল ইসলাম সুমনের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র রফিকুল ইসলাম (রবিন) ও মো. সুজনকে মিথ্যা ৪টি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠান পুলিশ। এ মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তারা বাবা সামছুল ইসলাম পাটোয়ারী এমপি, চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও কোন বিচার পানি তারা। বর্তমানে রবিনও কারাগালে আছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে গ্রেফতার করলেও স্থানীয় কোন সাংবাদিক ও আত্মতিয় স্বজনদের দেখতে না দিয়ে গুব গোপনে শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে রামগঞ্জ থানার পুলিশ সুমনকে পুলিশ ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসে। এ সময় তিনি চোখ খুলতে পারছিলেন না। তাঁর পাঁসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওসিসহ এএসআই শরীফ ও মহিউদ্দিন আমার এ অবস্থা করেছে। তারা সুই দিয়ে আমার দু’চোখ গুলিয়ে দেয়। আমি গত নির্বচনে স্থানীয় এমপির পক্ষে কাজ না করায় ও যুবদল করার কারণে এ দু’দিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে।
এছাড়াও রামগঞ্জে অর্থ বাণিজ্যের মিশনে নেমেছে থানা পুলিশ। পুলিশের উপরি বাণিজ্যের কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা তাদের। এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে গ্রেফতার আতঙ্ক। চাহিদা মতো অর্থ দিতে না পারলেই তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে নানান মামলায়। কোনো মামলা না থাকলেও গত সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়কার মামলার অজ্ঞাত আসামীর তালিকায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। যারা যারা অর্থ দিতে পারছে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে থানা হাজত থেকেই। এ উপরি বাণিজ্যের কারণে অনেক প্রকৃত আসামীও টাকার জোরে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও টনকনড়েনি কর্তৃপক্ষর।
সুমনের পিতা সামছুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওসি লোকমান মিয়া যোগদান করেই বড় ছেলে সুমনকে ধরতে মড়িয়া হয়ে উঠে। এবং তাকে না পেয়ে নানান ভাবে আমাকে নির্যাতনসহ হুমকি দিয়ে আসছিল। অবশেষে ৪টি মিথ্যা মামলায় তার ৭ম শ্রেনীর কিশোর ছেলে রবিন ও সুজনকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আমি একটি মসজিদে সামান্য ইমামের চাকুরী করি। আমার ছেলেদের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ গণমান্য ব্যক্তিদের অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছেনা। আর আজ বিএনপির রাজনৈতিক করা বড় ছেলে সুমনকে নির্মম নির্যানত করে তাকে জীবনের জন্য অন্ধ করে নিয়েছে। সঠিক বিচারের জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ জানাই।
সুমনের স্ত্রী সিমু আক্তার জানান, সাইফুল ঢাকার মিরপুরে প্রেস ও ঝুট ব্যবসা করেন। বুধবার রাতে ঢাকা থেকে রামগঞ্জের নিজ বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে একই ইউনিয়নের যুবলীগকর্মী লিটন হাজারী মুঠোফোনে সাইফুলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে খাবারের সাথে নিষা খাইয়ে অস্ত্র দিয়ে রামগঞ্জ থানার এএসআই শরীফ হোসেন, এএসআই মহিউদ্দিনকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁকে বেদম মারধর করে আহত করে। পরে থানায় নিয়ে তাঁকে দফায় দফায় পেটায় এবং খুঁচিয়ে তাঁর দু’চোখ নষ্ট করে দেয়। সে অপরাধী হলে তার বিচার হবে আদালতে।
সিমু আক্তার বলেন, তিনি থানায় গেলে পুলিশ তাঁকেসহ কোন আত্মীয় স্বজনকে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। গত নির্বাচনের সময় স্থানীয় এমপির পক্ষে ভোট না করার কারণে পুলিশ দিয়ে এভাবে নির্যাতন করেছে। তিনি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক বলেন, তাকে ওসি তদন্তের রুমে ফেলে রাখা হয়েছে। কোন সাংবাদিকে তার ছবি ও তার সাথে স্বাক্ষাত করা অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন এবং সবগুলো কথাই মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
(এমআরএস/এএস/আগস্ট ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test