E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংবাদ প্রকাশ করায় মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় জামিন পেলেন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ

২০২০ মার্চ ১৯ ২২:৪৩:২৩
সংবাদ প্রকাশ করায় মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় জামিন পেলেন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামে দু’ মাস ধরে চলছে কৃষি ও মৎস্য ঘের থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার রমরমা ব্যবসা। মাটি বহনকারী ৪০টি ট্রলী দানবের মতো চলাচল করায় ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এলাকার কিছু পরিবেশ সচেতন মানুষ বারবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করের প্রতিকার পাননি। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে পাথরঘাটার আজাহারুল ইসলামের দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলার আসামী ইয়ারব ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চোখের বালি দৈনিক প্রজন্মের ভাবনার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রঘুনাথ খাঁর নামে দেওয়া হয় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা। অবশেষে তিনি বৃহষ্পতিবার আদালত থেকে জামিন পেলেন।

তুজুলপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রাজীব হোসেন ও কবীর হোসেন জানান, দু’ মাস আগে থেকে ভোরের আযানের পরপরই ফারুক ও ভাই চঞ্চলের সমন্বিত চাষের জমি (ধান ও মাছ) থেকে মাটি কেটে স্থানীয় স্টার ভাটা ও ভাটপাড়ার হাবিবুর চয়ারম্যানের ভাটায় নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। বর্তমানে ওই মাটি দিয়ে ওই দু’টি ভাটাসহ আখড়াখেলা বাজারের পাশে একটি বাড়ির পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।

এক সময়কার বিএনপির সক্রিয় কর্মী নব্য আওয়ামী লীগার ফারুক হোসেন, তার ভাই চঞ্চলসহ আমজাদ সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, বাদল গাজীর ছেলে শুকুর আলী, হাফিজুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান মিন্টু, ইমদাদুল হক খোকন, ২০০৭ সালে ঢাকায় অস্ত্রসহ ও ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তুজুলপুরে ৬০০ বোতল ফেনসিডিল ভর্তি বেট্যিাক্সিসহ গ্রেপ্তার হওয়া ভেড়িপাড়ার ওয়াজেদ গাইনের ছেলে শরিফুল ইসলাম একযোগে কৃষি ও সমন্বিত চাষের জমির মাটি কেটে মোটা অংকের টাকায় ইটভাটায় ও পাঁঝায় বিক্রি করে আসছেন।

এসব মাটি বহনের কাজে ইমদাদুল হক খোকন ওরফে ছোট খোকনের ২৫টি ও জাহাঙ্গীরের হোসেনের ১০টি ট্রলি প্রতিদিন মাঠ থেকে বের হয়ে ইটসোলিং এর রাস্তা দিয়ে মালেকের মুদি দোকানের সামনে দিয়ে ভাটপাড়ার হাবিবুরের ও তুজুলপুরের স্টার ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রদানবের মত একসাথে চলা ট্রলীর শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এতে নুর ইসলামের বাড়ি থেকে মালেকের দোকানের মোড়ের ইট সোলিং রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ভেঙে দু’পাশের পুকুরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পিচের রাস্তায় মাটি পড়ে থাকায় গত সপ্তাহের সামান্য বৃষ্টিতে তুজুলপুর, আখড়াখোলা গ্রামের ছাত্র ও ভ্যানচালকসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।

বিভাগীয় কমিশনারের কাছের লোক পরিচয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটা, ট্রলীতে বহনকালে রাস্তা নষ্ট ও দুর্ঘটনার সকল শেল্টার দেন জনৈক ইয়ারব হোসেন বলে দাবি করেন তারা। তারা বিষয়টি স্থানীয় তহশীলদার, সদর সহকারি ভূমি কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের নজরে এনেও কোন সুফল পাচ্ছেন না বলেই চলে। বিষয়টি নিয়ে গত ১৪ মার্চ সকাল ১১টার দিকে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ তুজুলপুর মালেকের দোকানের সামনে যান। সেখানে তিনি সারিবদ্ধ মাটি ভর্তি ট্রলীর ছবি তোলেন। যেখানে মাাটি কাটা হচ্ছে সেখানেও যান তিনি।

সেখান থেকে ফিরে এসে তুজুলপুর মোড়ের জনৈক আনিসুরের দোকানে এক সাক্ষাৎকারে আমজাদ সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিনি ১০টি ট্রলীতে মাটি বহন করছেন। প্রতি ট্রলী হাবিবুরের ভাটায় নিয়ে যেতে ২২০ টাকা ও তুজুলপুরের স্টার ভাটায় নিয়ে যেতে ২০০ টাকা নিচ্ছেন।(বক্তব্য রেকর্ডিং আছে)। এ সময় ঝউডাঙা ডিগ্রী কলেজেন শিক্ষক তরুন ও তুজুলপুরের ভ্যানচালক নূর ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওই সাংবাদিক ও তার সঙ্গে থাকা মোটর সাইকেল চালক আব্দুর রশীদকে একটি করে স্পীড খাওয়ানো হয়।

এদিকে গত ১৫ আগষ্ট তুজুলপুরে চাঁদাবাজি মামলার আসামী ইয়ারব হোসেনের সঙ্গে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও তদন্ত ওসি মহিদুল ইসলামের সঙ্গে ভুরিভোজ করেন। ইয়ারব হোসেনের ফেইসবুক থেকে ওই ছবি নামিয়ে পরদিন প্রত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ। এতে গাত্রদাহ হয় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইয়ারব হোসেনের। একজন এনজিও কর্মকর্তা ও একজন সাংবাদিকের কাছে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মাধ্যমে ওই সাংবাদিককে সতর্ক করা হয়।

এ ছাড়া গত ১৫ ফেব্র“য়ারি মাদক ব্যবসায়ি সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের মীর শামীম হোসেন কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন তাদেরই প্রতিপক্ষ খুলনা পুলিশের সহকারি উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেনের ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ১৮ ফেব্র“য়ারি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আবুল কালামের দেওয়া মামলা রেকর্ড করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ি ও হামলাকারি মীর শামিম হোসেনে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাটি রেকর্ড করা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন গত ১৯ ফেব্র“য়ারি পত্রিকায় প্রকাশ করেন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ।

এ ছাড়াও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পারুলিয়ার কুখ্যাত চোরাকারবারি নুর আমিনের সখ্যতা, আসামী আটক ও ছেড়ে দেওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দূর্ণীতির খবর প্রকাশ করেন প্রজন্মের ভাবনার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। এতেও ক্ষুন্ন ছিলেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সর্বোপরি বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে জামিন দেন।

অভিযোগ, স্বার্থ বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করায় ইয়ারব হোসেনের সহায়তায় জাহাঙ্গীর হোসেনকে দিয়ে ১৬ মার্চ প্রজন্মের ভাবনার সাংবাদিকের নামে মিথ্যা ও কাল্পনিক চাঁদাবাজির মামলা রেকর্ড করেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। যদিও নিজস্ব স্টাইলে মোস্তাফিজুর রহমান ও ইয়ারব হোসেন কৌশলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বারবার।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test