E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলাসহ নিত্য পণ্য কেনার হিড়িক

২০২০ মার্চ ২৫ ১৮:৩৮:৩২
নড়াইলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলাসহ নিত্য পণ্য কেনার হিড়িক

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নড়াইলের লোহাগড়ায় ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কয়েকটি শাখা ব্যাংকের টাকাও ফুরিয়ে যায়। পরে তারা অন্য ব্যাংক থেকে টাকা এনে গ্রাহকের চাহিত টাকা দিয়েছেন। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় কি না, এমন উদ্বেগ ছিল বেশির ভাগ গ্রাহকের। ব্যাংকের পাশাপাশি বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটাও প্রচুর বেড়েছে। আর এসব করতে গিয়ে বাজার ও ব্যাংকে লোকসমাগম বেড়েছে কয়েকগুন। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মন্তব্য একাধিক চিকিৎসকের।

বুধবার (২৫মার্চ) উপজেলা সদরের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিট ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রাহকদের প্রচন্ড ভিড়। সবাই এসেছেন টাকা তুলতে। টাকা পাবেন কি না, এ আশঙ্কাও দেখা গেছে অনেকের মাঝে। সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপাশা শাখায় টাকা তুলতে এসেছিলেন একজন ব্যবসায়ি। তিনি বলেন, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় কি না বা, পরে টাকা পাওয়া যাবে কি না, এমন আশঙ্কা থেকে তিনি টাকা তুলতে এসেছেন।

ইসলামী ব্যাংক লোহাগড়া বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শেখ মাহমুদুর রহমান জানান, সবচেয়ে বেশি গ্রাহক টাকা তুলতে এসেছেন। লোহাগড়া বাজারের সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা, লক্ষ্মীপাশা সোনালী ও বড়দিয়া জনতা ব্যাংকে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে টাকা ধার চেয়েছিল, তা দিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন,‘গ্রাহকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে টাকা তুলছেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ব্যাংকগুলোতে টাকার কোনো সংকট নেই। উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ব্যাংক খোলা থাকবে। প্রতিদিনই টাকা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় “কুইক রেসপন্স টিম” গঠন করা হয়েছে। গ্রাহকদের সেবা ও অর্থনীতি সচল রাখতে এ টিম কাজ করছে।

সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপাশা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস জনিত পরিস্থিতি এবং এ থেকে সৃষ্ঠ উদ্বেগের কারনে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন।

এ দিকে, আতংকিত মানুষজন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ কিনছেন বেশি বেশি করে। লোহাগড়া, লক্ষীপাশা, দিঘলিয়া, বড়দিয়া, ইতনা, রাধানগর, এড়েন্দা, মানিকগঞ্জ ও লাহুড়িয়ার কালিগঞ্জ বাজারের সবজি ও মুদি দোকান গুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অধিকাংশ ক্রেতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ পণ্য কিনছেন। পৌর শহরের রাজুপুর এলাকার গ্যারেজ মালিক রুবেল শেখ ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন।

তার মধ্যে উদ্বেগ, পরে পাওয়া যাবে কি না, দাম বেড়ে যায় কি না এসব। তিনি জানালেন, এর আগে এক-দুই কেজি করে কিনতেন। লোহাগড়া বাজারের মুদি দোকানি সজল সাহা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রেতারা অতিরিক্ত পণ্য কেনাকাটা করছেন। সবচেয়ে বেশি কিনছেন চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, ও শিশুখাদ্য। অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি কিনে নিচ্ছেন। তাদের বুঝিয়েও থামানো যাচ্ছে না।

একই বাজারের চাউল ব্যবসায়ি মফিজ শেখ বলেন, এক সপ্তাহ ধরে চালের ক্রেতা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। যারা দু’এক বস্তা কিনতেন, তারা এখন কিনছেন পাঁচ-ছয় বস্তা করে।

পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবসায়ী ইউনুছ শেখ বলেন, যে ব্যক্তি আগে দু’এক কেজি করে কিনতেন, তিনি এখন কিনছেন আট-দশ কেজি। পাঁচ-ছয় দিন ধরে চলছে এ অবস্থা।

লোহাগড়া বাজারের ইউনাইটেড ফার্মেসীর চন্দন কুন্ডু জানান, ছয় দিন ধরে সকল প্রকার ওষুধের বিক্রি বেড়ে গেছে। কয়েকজন ক্রেতা বলেন, আগামী ১০-১৫ দিন ঘর থেকে বের হওয়া যাবেনা। এসব কারণে তারা অতিরিক্ত কেনাকাটা করছেন।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, বাজারে পণ্য ও ব্যাংকে টাকার ঘাটতি হবে না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোন কারণ নেই। এখন প্রয়োজন জনসচেতনতা। জনগণ এসব বিষয়ে সচেতন না হলে দু’এক দিনের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএম/এসপি/মার্চ ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test