E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারি-বেসরকারি ৪টি হাসপাতালে চিকিৎসক না পেয়ে প্রসূতির অকাল মৃত্যুর অভিযোগ

২০২০ এপ্রিল ০৪ ২৩:২০:৫৬
সরকারি-বেসরকারি ৪টি হাসপাতালে চিকিৎসক না পেয়ে প্রসূতির অকাল মৃত্যুর অভিযোগ

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : প্রসব ব্যথা নিয়ে  ৪ টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে সুজিনা বেগম (২৮) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সুজিনার স্বামী জানিয়েছে, চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্ব অবহেলায় তার স্ত্রীর অকালে মৃত্যু হয়েছে ।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শোকে স্তব্ধ। নিহত সুজিনা বেগম জেলার উলিপুর উপজেলার মিয়াজীপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যান চালক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় (১ এপ্রিল) জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ভ্যান চালক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুজিনা বেগমের প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। রাতেই শফিকুল তার খালা শ্বাশুড়ী আমিনা
বেগমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এর আড়াই ঘন্টা পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার না থাকার কথা জানিয়ে রাতেই সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক স্থানীয় আখরুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে প্রথমে ২০০ পরে ৫০০ টাকার বিনিময়ে সুজিনাকে ভর্তি করান।

এরপর সিজারের কথা বলে একগাদা ওষুধ কিনে নেন। আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ডাক্তার আসার কথা বলে পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন টালবাহানা করেন। এসময় রোগির অবস্থার চরম অবনতি হলে তড়িঘরি করে হাসপাতালের লোকজন ৮০০ টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পৌঁছার পর ২০ টাকা দিয়ে ভর্তি করালেও সেখানকার একটি চক্র পাশ্ববর্তি গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও ২ হাজার৩'শ ৫০ টাকা দিয়ে ভর্তি করে সিজারের কথা বলে একগাদা ওষুধ কিনে নেন। পরে ডাক্তার না থাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে আবার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠান গ্রীন লাইফ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সুজিনাকে ইনজেকশন পুশ করা হলে কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার রাতেই স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

এদিকে, খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সার্বিক খোজঁ খবর নিয়ে অনুদান প্রদান করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সুজিনার খালা আমিনা বেগম জানান, ডাক্তাররা আমার ভাগ্নিকে একটা ইনজেকশন দিল তারপর তারা জানায় সে মারা গেছে।

নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, ওরা ওই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতাল করে একে একে চারটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় কিন্তু আমি কোথাও চিকিৎসক পেলাম না । ডাক্তারদের কতনা হাতে-পায়ে ধরলাম তবুও তারা আমার স্ত্রীর সিজার করল না। আমি গরিব মানুষ, অনেক টাকা পয়সা খরচ করলাম তবুও আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না। তিনি আরও জানান, আমার ৮ বছরের একটা মাছুম সন্তান এতিম হয়ে গেলো। সুষ্ঠ তদন্ত করে আমি এর বিচার চাই।

উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাইদুল ইসলাম ভোরের কাগজ কে বলেন, বিষযটি আমার জানা নেই, তবে এমনটা হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. ঈরশাদুল হক চাঁদ বলেন, রাতে রোগি ভর্তি হলে সকালের দিকে প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সাথে খিঁচুনি শুরু হয়। এ অবস্থায় আমাদের এখানে সিজার করা সম্ভব ছিলনা। পরে দুপুরে গাড়ি ভাড়া করে তাকে কুড়িগ্রামে প্রেরণ করেছি।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। তবেবিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

(পিএম/এসপি/এপ্রিল ০৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test