E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কলাপাড়ায় ১৩ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী

২০১৪ আগস্ট ১০ ১৭:৪৭:০৪
কলাপাড়ায় ১৩ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রোববার সকালে রামনাবাদ , আন্ধারমানিক ও শিববাড়িয়া নদীর জোয়ারের পানিতে উপজেলার লালুয়া ও মহীপুর ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। স্রোতের টানে মানুষ ভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। প্রতিটি জোয়ারে গিলে খাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন ও বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু।

গত জুলাই মাসে লালুয়ার ৪৭/৫ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের প্রায় তিনশ ফুটবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর দ্রুত মেরামত না করায় রোববারের জলোচ্ছাসে লালুয়ার চাড়িপাড়া, পশরবুনিয়া, বানাতিপাড়া, ১১নং হাওলা,বানাতিপাড়া, ধঞ্জুপাড়া ও নয়াকাটা গ্রামের হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নাওয়াপাড়া ক্লোজারের ভাঙ্গা বাঁধ ক্রমশ ভাঙ্গতে থাকায় নাওয়াপাড়া,বড়পাঁচ নং, ছোট পাঁচনং ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় ছয়শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলীপ গাজী জানান। তিনি জানান, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বসত ঘর হারানোর আশংকায় অন্তত দুইশ পরিবার বাঁধের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মহীপুরের নিজামপুর বাঁধের ভাঙ্গা অংশদিয়ে পানি প্রবেশ করে তিনটি গ্রামের অন্তত সাত শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত একমাস আগে বাঁধটি ভাঙ্গলেও এখনও সংস্কারের উদ্যেগ নেয়া হয়নি।
রোববার সকালে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ্য চাড়িপাড়া ও নাওয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে শতশত মানুষ। এ গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র ব্রিজটি নির্মানের এক মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে গেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নৌকায় করে ওই গ্রামে ঢুকতেই কানে ভেসে আসে মানুষের আর্তনাদ। গ্রামের প্রতিটি বসত ঘর ২/৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। রোদ ও বৃষ্টির মধ্যেই জোয়ার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বাঁধের উপর তাদের থাকতে হবে।
চাড়িপাড়া গ্রামের হালিমা বেগম জানায়“ এইবার লইয়া তিনবার ঘর গাঙ্গে ভাইঙ্গা গ্যাছে। আর কয়বার ঘর তুলুম হইয়া কন। নিজের তো কোন জায়গা নাই। যা আছিলো সব ওই নদীর মধ্যে। এ্যাহন বান্দের পাশে ঘর উডাই, আর বর্ষা হইলে ভাঙ্গে। আর কতো মোরা ভাসমু কন”। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন ভাঙ্গা বাঁধের একপাশে আশ্রয় নিলেও সেটাও এখন হুমকির মুখে। একই অবস্থা তার মতো শতশত পরিবারের।
নাওয়াপাড়া গ্রামের জনি জমাদ্দার জানালেন, এখন জোয়ার হলে বাঁধে, ভাটা হলে ঘরে থাকতে হয়। ঘরের সব মালামাল রাখতে হয় মাঁচার উপর। হাঁটু কাঁদা ঘরের মধ্যে। রাতের জোয়ারে আরও ভয়াবহ অবস্থা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ সংলগ্ন ছোটপাঁচনং গ্রামের রুবেল বয়াতী দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে এখন বাঁধের উপর সংসার পেতেছেন। ছোট্র কুঁড়েঘর করে শুধু মাথা গোঁজার একটু খড়ের ঘর তৈরি করেছেন। তার ভাষায়“ আমাগো আর নিজ ঘরে থাহা হইবে না। জোয়ার হইলে ঘর ছাড়তে হয়, তাই আগে থেইক্যাই এইহানে ঘর তুলছি”। তার মতো অন্তত দুই শতাধিক পরিবার বাঁধের বিভিন্ন স্লোপে আশ্রয় নিয়েছে।
চাড়িপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মজিবর হাওলাদার জানান, এখন যে অবস্থা তাতে শতশত পরিবারের বসত ঘর স্রোতের টানে ভেসে যাবে। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ ক্রমশ বড় হওয়ায় পানিও বাড়ছে।
কলাপাড়া পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার জানান, তারা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছেন। বর্ষায় বাঁধ মেরামতের সম্ভাবনা কম।
বিশ্বব্যাংকের (কলাপাড়া-বরগুনা) অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লালুয়া ৪৭/৫ পোল্ডারটি বিধ্বস্ত ৮ কিলোমিটার বাঁধটি পুনঃনির্মানের একটি প্রকল্প বিশ্ব ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি ছাড় হলে প্রায় পৌনে দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক ফেলে গোটা পোল্ডারটি একসাথে নির্মান শুরু হবে। আগামী দুই/তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন হতে পারে বলে জানা যায়।
(এমকেআর/এএস/আগস্ট ১০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test