E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যমুনায় পানি বেড়ে অর্ধশত পরিবার গৃহহীন, ভাঙনের ঝুঁকিতে ৯ প্রতিষ্ঠান

২০২০ মে ৩১ ১৭:০০:২৭
যমুনায় পানি বেড়ে অর্ধশত পরিবার গৃহহীন, ভাঙনের ঝুঁকিতে ৯ প্রতিষ্ঠান

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : প্রমত্ত্বা যমুনায় পানি বেড়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে অর্ধশত পরিবারের বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীর পেটে চলে গেছে। শতাধিক ঘর-বাড়ি এবং ৯টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আ. মতিন সরকার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে মাত্র ১০০ মিটার এলাকায় ৬ হাজার ৬০০ জিও ব্যাগ ফেলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে রক্ষার চেষ্টা করছে। এছাড়া স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আসার সময় গত ২৭ মে থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। আম্পানের প্রভাবে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ৫ দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনার ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া; নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা ও সারপলশিয়া গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় অর্ধশত পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাবেক মেম্বার আলীম উদ্দিন(৭০), আব্দুল জলিল(৫৫), জুলহাস জুলু(৬৫), জিন্নত আলী মাস্টার(৭০), লাল মিয়া লালু(৬২), মোক্তেল হোসেন(৫৭), আব্দুর রশিদ(৫২), আব্দুল্লাহ আল মামুন(৪৬), আল মুজাহিদ(৪০), জাহিদুল ইসলাম(৩২), ফরিদুল ইসলাম(৪৬), সাইফুল ইসলাম(৩৫), মুক্তাদির মিয়া মোক্তেল(৬৫), আব্দুস সবুর(৩৩), জুলমান মিয়া(৩০), লাল মিয়া(৬০), আহাদ আলী(৫৫), জেহাদ আলী মিয়া(৬০), আব্দুল বারেক(৬৫), খোদাবক্স মিয়া(৫৬), আব্দুল মালেক(২৮), স্বপন মিয়া(৩৫), নুরুল ইসলাম(৮৫), জুরান হাওলাদার(৭০), রতন হাওলাদার(৫০), কৃষ্ণ হালদার(৩০), হারাধন হালদার(৩৫), আ. ছামাদ(৬০), আব্দুল করিম(৬৫), সালাম মিয়া(৬৫), ফরিদ মিয়া(৩৬), শহীদ মিয়া(৫৫), মহু মিয়া(৭০), মো. মহির উদ্দিন(৫২), ইসমাইল হোসেন(৩৬), মো. সোনা মিয়া(৬০), আব্দুল মালেক মিয়া(৫২) শহীদুল ইসলাম(৪২) সহ আরো ১০-১২ জনের বাড়ি-ঘর যমুনার পেটে বিলীন হয়ে গেছে।

যমুনায় পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন শুরু হওয়ায় খানুরবাড়ী গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয় কেন্দ্র, সার্বজনীন কালীমন্দির, বেপারীপাড়া জামে মসজিদ, কস্টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভালকুটিয়া জামে মসজিদ, ভালকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ভালকুটিয়া পুরাতন জামে মসজিদ, বাইনতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ স্থানীয় শতাধিক ঘর-বাড়ি ভাঙনের মারাত্মক আশঙ্কায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও বাইনতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে ৩-৪বার করে ভাঙনের শিকার হওয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, প্রতি বছর ভাঙন শুরু হলেই কেবল পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে, আগে থেকে কাজ করলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হতো। এবারও ভাঙন শুরু হওয়ায় গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সার্বজনীন কালী মন্দিরের ভাঙন রোধে অল্প কিছু জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। তারা জানায়, তারা নিজেদের উদ্যোগে ঘন ঘন বাঁশ পুঁতে কোন রকমে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা আরো জানায়, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ ২০০-২৫০ ঘর-বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়ে নদীর পেটে চলে যাবে।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা জানান, হঠাৎ করে ২৭ মে থেকে যমুনায় পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলজিইডি’র গ্রাম্য সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি দাবি করেন, গোবিন্দাসী ফেরী ঘাট থেকে দক্ষিণে মাটিকাটা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার নদীতীরে জিওব্যাগ ফেললে ভাঙন কিছুটা রোধ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, পাউবো’র প্রধান প্রকৌশলী আ. মতিন সরকার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ ভূঞাপুরের ভাঙন কবলিত এলাকা ২৯ মে(শুক্রবার) পরিদর্শন করেছেন। আপদকালীন কাজ হিসেবে গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার্থে ১০০ মিটার এলাকায় ৬ হাজার ৬০০ জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ভূঞাপুর থেকে সদর, নাগরপুর ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যমুনার বামতীরের অরক্ষিতস্থান সমুহ রক্ষণাবেক্ষণে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের শেষ দিকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বড় প্রকল্প পাউবোতে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অমুমোদন না হওয়ায় ২৫০-৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহন করে যমুনার ভাঙন রোধে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল-২(গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি স্থানে কিছু জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অন্যস্থানে আরো জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হবে।

(আরকেপি/এসপি/মে ৩১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test