E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজারহাটে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম ক্রয়ের টাকার হদিস নাই

২০২০ জুন ০৯ ১৬:১১:৫৭
রাজারহাটে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম ক্রয়ের টাকার হদিস নাই

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ১২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ২৫ লাখ টাকাা হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। 

উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকারের দেয়া স্লিপের ফান্ড থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের জন্য প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে ২৫ হাজার করে টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে রেখে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও বেশীর ভাগ প্রধান শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, রাজারহাট উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৯ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে-দেড় হতে দুই লাখ টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্সে-৪০ হাজার টাকা, স্লিপে ৪০ হতে ১ লাখ টাকা, ওয়াশবন্টন মেইনটেনেন্সে-২০ হাজার টাকা, বাউন্ডারি নির্মাণে-৭ লাখ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে-১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের দেয়া স্লিপের ফান্ড থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের জন্য রাজারহাট উপজেলায় ১২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ২৫ হাজার করে টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে রেখে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

পরর্বতীতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় স্থগিত দিয়ে নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র ক্রয় না করার জন্য। এরই সুবাদে রাজারহাট উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনার ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে নেয়। কিন্তু ওই টাকা কী করা হয়েছে তা কেউ জানে না।

উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁরা ডিজিটাল হাজিরা বায়োমেট্রিক কিনার জন্য ২৫ হাজার টাকা রেখে দিয়েছিলেন কিন্তু পরর্বতীতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কেনার নির্দেশনা দিলে ওই টাকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে।

কিন্তু কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই সব বিদ্যালয়ের ২৫ হাজার টাকার কোন কাজ করা হয়নি। বিল ভাউচার দেখতে চাইলে তারা বিল ভাউচার দেখাতে পারেনি এমনকি তারা কি কাজ করেছেন জানতে চাইলে, স্লিপের টাকায় পূর্বে যে কাজ করা হয়েছে তারা পুনরায় ওই কাজগুলো দেখান।

অনেক প্রধান শিক্ষক বলেন, অনেক প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে টাকা না রেখে নিজের ব্যাক্তিগত একাউন্টে টাকা রাখার কথাও স্বীকার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের উন্নয়নে নতুন করে কাজ করতে দেখি নাই। উপজেলায় ১২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০/১২টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কাউকে তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের কাজের নামে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনার ২৫ হাজার টাকা ভাগ-বাটোয়া করে নিয়েছে বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতি রাজারহাট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম কেনার জন্য কোন সরকারী বরাদ্দ নেই। এবার কেনার জন্য স্লিপের বরাদ্দ থেকে টাকা কেটে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে অন্য জিনিস পত্র কেনা হয়েছে। যদি আবার কেনার দরকার হয় তাহলে আগামী স্লিপ প্রকল্প থেকে তা কেনা হবে।

মঙ্গলবার (৯ জুন)উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সোলায়মান মিয়া বলেন, রাজারহাট উপজেলায় ১২৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে ২৫ হাজার করে টাকা রেখে দেওয়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকদের ব্যক্তিগত একাউন্টে টাকা জমা রাখার কোন নিয়ম নেই। ওই টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকবে। পরবর্তীতে নির্দেশ আসার পর প্রধান শিক্ষকদের ওই টাকা দিয়ে শহীদ মিনার করার জন্য বলা হয়।

(পিএম/এসপি/জুন ০৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test