E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইয়াবা পাচারকারী সন্দেহে এমপি বদির স্ত্রী আটক, পরে মুক্তি

২০১৪ আগস্ট ১৩ ০৯:৪৪:৩৪
ইয়াবা পাচারকারী সন্দেহে এমপি বদির স্ত্রী আটক, পরে মুক্তি

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ইয়াবা পাচারকারী সন্দেহে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জনতা কর্তৃক আটকের পর জিম্মিদশা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সরকার দলীয় এমপি আবদুর রহমান বদির দ্বিতীয় স্ত্রী সাকেরুন্নেছা সাকী ও তার অপর এক বান্ধবীকে। পরে তাদের থানায় নিয়ে তল্লাশি করা হয়। তবে তাদের কাছ থেকে কোন ইয়াবা উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে তারা থানায় অবস্থান করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থানা থেকে রাত ১১ টার দিকে ছাড়া পেয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। এদিকে এমপি বদির স্ত্রী চকরিয়ায় আটক হয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কক্সবাজার শহর থেকে একে একে তিনটি যানবাহন বদলে সর্বশেষ সিএনজি চালিত একটি অটোরিক্সায় করে সাকেরুন্নেছা সাকী ও তার অপর এক বান্ধবী বিকেল ৫টার দিকে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গাস্থ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নামেন। এরপরই তারা অপর একটি মাইক্রোবাস উঠলে পড়লে উৎসুক মানুষ ইয়াবা পাচারকারী সন্দেহে তাদের ঘিরে ধরে। পরে থানার টহল পুলিশের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মহিলা কনষ্টেবলসহ পুলিশ জনতার জিম্মিদশা থেকে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়।

তবে অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পর এমপি বদির স্ত্রী পরিচয় পেয়ে মহিলা কনষ্টেবলদের জন্য সংরক্ষিত রুমে তাদের বসতে দেওয়া হয়। সেখানে তারা দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অবস্থান করে। এই সময়ের মধ্যে চারিদিকে প্রচার পায় এমপি বদির স্ত্রী ইয়াবাসহ চকরিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।

আরেকটি সূত্র জানায়, সাকেরুন্নেসা সাকীর কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করতে না পারলেও তার অপর বান্ধবীর (নাম জানা যায়নি) কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এমপি বদির স্ত্রীর বান্ধবী হওয়ায় পুলিশ তা রহস্যজনক কারণে সাংবাদিকদের কাছে গোপণ করেছেন।

সূত্রটি আরো দাবি করেছেন, এমপি বদির স্ত্রী ঠিকই ইয়াবার বড় চালান পাচারের উদ্দেশে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে চকরিয়ার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। জনতা কর্তৃক আটকের সময় ইয়াবার চালানটি তার নেটওয়ার্কে থাকা অপর সদস্যরা (পুরুষ) কৌশলে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তারা ধরা পড়লেও ইয়াবা ঠিকই হাতবদল হয়ে গেছে।

সচেতন অনেক ব্যক্তি বলেছেন, এমপি বদির স্ত্রী সিএনজি নিয়ে কেন চকরিয়ায় আসলেন। আবার গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশ কেন তাদের আটক করলেন এমন অনেক রহস্যঘেরা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, সম্প্রতি (ঈদের সময়) দ্বিতীয় স্ত্রী সাকেরুন্নেসা সাকীকে নিয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমার ঘুরে আসেন এমপি বদি। গত দুইদিন আগে তারা দেশে আসেন। দেশে আসার পর সাকী সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে চকরিয়ায় এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, দ্বিতীয় স্ত্রী সাকী চকরিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন এমন খবর শোনার পর এমপি বদি নড়েচড়ে বসেন। তিনি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তার স্ত্রীর ছবি যাতে কোন সাংবাদিক তুলতে না পারেন। এ কারণে রাত ১০টার দিকে চকরিয়া থানা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের একটি নোয়া গাড়িতে তুলে দিয়ে পুলিশ প্রহরায় কক্সবাজারের উদ্দেশে কিছুদূর এগিয়ে দেন।

জনতার জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি উদ্ধারকৃতদের কোন নাম-ঠিকানা পর্যন্ত টুকে নেওয়া হয়নি বলেও জানান।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি তদন্ত মো.শহিদুল্লাহ বলেন, 'যে সময় তাদের জনতা কর্তৃক জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় তখন আমি চকরিয়ার বাইরে ছিলাম। রাত ১০টার দিকে আমি থানায় আসি। এরপর জানতে পারি বিষয়টি।' তবে এমপি বদির স্ত্রী ও তার বান্ধবীর কাছ থেকে কোন ইয়াবা পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।

কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বলেন, 'পুলিশ তাদের আটক করেনি। জনতার জিম্মিদশা থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোন ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে কি-না তা এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তিনি থানায় যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছন।

(ওএস/অ/আগস্ট ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test