E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ায় বাসা ছাড়তে বাধ্য হলেন এসিল্যান্ড

২০২০ জুন ২০ ১৫:৪০:১৫
হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ায় বাসা ছাড়তে বাধ্য হলেন এসিল্যান্ড

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভাড়া বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলেন সন্মুখ করোনা যোদ্ধা জামালপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম। শুক্রবার (১৯ জুন) বাড়ি ছেড়েছেন তিনি।

জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় ভাড়া বাসায় হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বাড়ির মালিক ও ফ্লাটের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা। এই করোনা যোদ্ধাকে তাড়াতে বাইরে থেকে এসে ফ্ল্যাটে রোজকার দুধ দেয়াকে কেন্দ্র করে বাড়ির মালিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংবাদ সন্মেলন করে করোনা যোদ্ধা মাহমুদা বেগমের অনুভুতিতে আঘাত হেনে ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে বাসা ছাড়াতে বাধ্য করেন বাড়ির মালিক আকলিমা খাতুন। করোনা যুদ্ধে সাহসী ও মানবিক মানুষ এসিল্যান্ড মাহমুদার বাসা ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় জামালপুরের সাধারণ মানুষ মর্মাহত হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেছেন।

জানা যায়, ঘরে ৮ মাসের কন্যা শিশুসহ ৪ বছর বয়সী জমজ ছেলেমেয়েদের মায়া ত্যাগ করে মানবতার টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দিনরাত কাজ করেন জামালপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম।

তিনি চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদর ভূমি অফিসে যোগদান করেন। যোগদানের কিছুদিন পরেই বাংলাদেশে করোনার সংক্রমন শুরু হয়। ৮ মাস বয়সী কন্যাশিশু মাহনুর মাশিয়াত ফালাক্ব, চার বছর বয়সী জমজ ছেলে তাহমিদ তাজওয়ার ও মেয়ে মুশাররাত ই উলফাত নামে তিন সন্তানকে ঘরে রেখে করোনা সংক্রমন থেকে মানুষকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন। এ জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই অদ্যাবধি মাঠ পর্যায়ে এই মরণব্যাধির সংক্রমন প্রতিরোধে অকুতোভয় সন্মুখ যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করে গেছেন এই মানবিক সাহসী মানুষটি। তিনি করোনা বিস্তাররোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনতা সৃষ্টি, অসহায় ও সংকটাপন্ন মানুষের ঘরে ঘরে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন।

রাতে দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে বেরিয়েছেন মাঠে ঘাটে গ্রামে গ্রামে। ঘর সংসার সন্তান জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তার সাহসী ভূমিকা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করায় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অভিনন্দিত হয়েছেন।

২ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এই সন্মুখযোদ্ধা মাহমুদা বেগম। সেদিন থেকে ১৫ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশন এবং ১৫ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেন শহরের দেওয়ানপাড়ার ভাড়া বাসায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাটা ভালভাবে নেয়নি বাড়ির মালিক আকলিমা খাতুনসহ ফ্ল্যাটের অন্যান্য ভাড়াটিয়া। বাইরে থেকে এসে ফ্ল্যাটে রোজকার দুধ নেয়া নিষেধ করেন বাড়ির মালিকের ভাতিজা সত্তম । এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তাকে বাড়ি থেকে বের করার সুযোগ খুঁজতে থাকে বাড়ির মালিক। তাকে ফোনে নানা কথা বলে উত্তেজিত করে কল রেকর্ড করে তুচ্ছ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সাংবাদ সন্মেলন করেন।

সাহসিকতার সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ বালু মহালের বালু উত্তোলন বন্ধ, বালু জব্ধসহ নানা অনিয়মে বিরুদ্ধে। তিনি যোগদানে পর থেকে সদর ভূমি অফিসে ভূমি সংক্রান্ত অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে ভূমিদস্যুরাও ক্ষেপে যান তার বিরুদ্ধে। বালু লুটেরা ও ভূমি দস্যুরা বাড়ির মালিকের ভাতিজার সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এই সাহসী ও মানবিক মানুষটিকে থামিয়ে দেয়ার জন্য। নানামুখী চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক সূত্র ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম বলেন, ভাড়া বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেয়াই ছিল আমার অপরাধ। সুবিধালোভিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অবৈধ কার্যক্রমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন প্রয়োগ করায় এই কুচক্রীরা সম্মিলিত হয়ে হুমকি দেয়ার নামে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সন্মেলন করে আমাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে ভাড়া বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

(ওএস/এসপি/জুন ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test