E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলের চারাবাড়ি সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের চলাচল 

২০২০ জুন ২৪ ১৮:৪২:২৮
টাঙ্গাইলের চারাবাড়ি সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের চলাচল 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর চারাবাড়িঘাট সেতুর বাম তীরের অ্যাপ্রোচ ধ্বসে পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিদিন চরাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর লোহার পাত ব্যবহার করে অ্যাপ্রোচের ধ্বস ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও প্রবল ¯্রােতের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদ নগর ও নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর চারাবাড়িঘাট নামকস্থানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিগত ২০০৬ সালে ১৭০.৬৪২মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করে। ২০০৬ সালের ৯ জুন তৎকালীন এমপি মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। নির্মাণের পর বন্যা ও বর্ষায় কয়েক দফায় পূর্ব ও পশ্চিম তীরের অ্যাপ্রোচে ধ্বস নামে। তাৎক্ষণিকভাবে এলজিইডি স্থানীয়দের সহায়তায় বালুর বস্তা ও লোহার পাত দিয়ে সাময়িক সংস্কার করে ধ্বস ঠেকায়।

সরেজমিনে ওই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী মো. আমিনুল ইসলাম, ভ্যান চালক সাব্বির মিয়া, অটোরিকশা চালক আব্দুল হামিদ, যাত্রী ছাহাতন বেওয়া, রমজান চাকলাদার, রোকসানা বেগম সহ অনেকেই জানান, এ সড়ক দিয়ে ব্রিজ পাড় হয়ে চলাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, তাঁত শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, অটোভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে থাকে।

তারা জানান, শুস্ক মৌসুমে নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ব্রিজের নিচে ও নদীতীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় পানি এসে ওইসব গর্তে ঘুর্ণি সৃষ্টি হয়। নদীর প্রবল ¯্রােত ও গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে ব্রিজের অ্যাপ্রোচে ধ্বস দেখা দিয়েছে।

কাতুলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান সুমন জানান, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বেড়ে ব্রিজের নিচে পশ্চিমপাশে বালু পড়ার কারণে পূর্বপাশে পানির চাপ বেশি হওয়ায় অ্যাপ্রোচে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত প্রদক্ষেপ না নিলে এ ব্রিজ ভেঙে চরাঞ্চলের মানুষেরম দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। তিনি জানান, বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।

কাতুলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের আবাদী জমির উৎপাদিত পণ্য-শস্য শহরে নেওয়ার একমাত্র সড়কে এ ব্রিজ। ব্রিজটি ভেঙে গেলে তাদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ও যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, বিগত বন্যা ও নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এবার ব্রিজের অ্যাপ্রোচে যেভাবে ধ্বস বাড়ছে তাতে যেকোন সময় ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী(এলজিইডি) একেএম হেদায়েত উল্লাহ জানান, তিনি সেতুর অ্যাপ্রোচ পরিদর্শন করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত চারাবাড়িঘাট ব্রিজের অ্যাপ্রোচের ধ্বস বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী জানান, অ্যাপ্রোচে ধ্বস শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডিকে জানান। কিন্তু টাঙ্গাইল পাউবো কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। এলজিইডিও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না নিয়ে কোন রকমে ধ্বস ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে চারাবাড়ি ব্রিজটিই ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ব্রিজটি নির্মণ করেছে এলজিইউডি, দেখভাল করার দায়িত্বও তাদের। ওখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কিছু করার নেই।
(ওএস/এসপি/জুন ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test