E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালিশের মাধ্যমে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর সাথে ধর্ষকের বিয়ে!

২০২০ জুলাই ০৫ ১৮:০৭:৩৩
সালিশের মাধ্যমে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর সাথে ধর্ষকের বিয়ে!

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমরাখালি গ্রামে ধর্ষক সোহাগ মুন্সির (২২) সাথে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ধর্ষণের শিকার ঐ কিশোরীকে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ করেছেন ধর্ষিতার বাবা।

স্থানীয়, ধর্ষিতার বাবা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমরাখালি গ্রামের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে গত ২ জুন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ফসলী গ্রামের সোহাগ মুন্সি নামে এক যুবক অপহরণ করে নিয়ে যায়।

পরে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় গত ৮ জুন মাদারীপুর সদর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার পরিবার। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ফসলী গ্রামের সোহাগ মুন্সিকে।

এ ঘটনায় গত ২০ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সবুর মেম্বার, শহিদসহ স্থানীয়রা বিষয়টি সালিশ মিমাংসা করে দেয়ার জন্য দুই পক্ষকে ডাকে।

এ সময় সালিশদার পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত সোহাগের সাথে ওই কিশোরীর বিয়ে দেয়ার রায় দেন। একই সাথে সোহাগকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এসময় স্থানীয় অর্ধশত লোক উপস্থিত ছিলেন বলেন জানান ধর্ষিতার বাবা।

এ ব্যাপারে কিশোরীর বাবা বলেন, সোহাগের বোনের বাড়ি আমার বাড়ির পাশে। সেই সুবাদের এখানে আসত। সোহাগ আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আমরা থানায় মামলা করলে পরে পুলিশ আমার মেয়েকে উদ্ধার করেছে। আমার মেয়ে জানিয়েছে তাকে জোর করে ধর্ষণ করেছে। সেই সোহাগের হাতেই আমার মেয়েকে তুলে দিয়েছে সালিশদাররা। আমি গরীব মানুষ। চেয়ারম্যানের পায়ে ধরেছি। তবুও শোনেন নি। জোর করে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।

শালিস মিমাংসার ব্যাপারে পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সবুর মেম্বার বলেন, জোড় করে নয়। দুই পক্ষের সম্মতিতেই সালিশ হয়েছে। মেয়ের বাবাকে ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিলো ছেলে পক্ষের। সেই টাকা না দেয়ার কারণেই হয়তো সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছে মেয়ের বাবা।

পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমার বলেন, দুই পক্ষই গরীব মানুষ। দুই পক্ষ একত্রে হয়ে আমার কাছে আসছিল। পরে আমি বলেছি তোমরা মিলমিশ হয়ে যাও। ধর্ষণ ও অপহরণ সালিশ যোগ্য নয়। আমি কোন সালিশ করিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্রবাস কুমার বসু বলেন, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা সালিশ যোগ্য নয়। আমি শুনেছি স্থানীয়রা নাকি এই ঘটনা মিমাংসা করে দিয়েছে। মামলার আসামীকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জজ কোর্টর এপিপি এডভোকেট আবুল হাসান সোহেল বলেন, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সালিশ করার এখতিয়ার নাই। আইনগতভাবে এটা তারা করতে পারেন না।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, মামলা চলাকালে সালিশদের মাধ্যমে বিয়ে হওয়া এটি আইননানুকভাবে হয় না। সালিশ যারা করেছেন তারা কাজটি সঠিক করেননি। বিয়ের বাপারে আমরা কিছুই জানিনা। ভিকটিমকে আমাদের পুলিশ উদ্ধার করেছে এ পর্যন্ত জানি।


(এএস/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test