E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আ. লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের হামলায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ৫ সদস্য জখম

২০২০ জুলাই ০৭ ২৩:৫৫:০৩
আ. লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের হামলায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ৫ সদস্য জখম

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ এর কাছে আওয়ামী লীগ সমর্থিক কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, অবৈধভাবে উপার্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে একজন সৎ আইনজীবী অ্যাড. আকবর আলীকে আইনজীবী সমিতি থেকে সদস্যপদ বাতিল করে পেটে লাথি মেরে জেলা ও দায়রা জজ এর অমানবিক আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংক্রান্ত জেলা ও দায়রা জজ এর কাছে অভিযোগ আকারে একটি দরখাস্ত আদালত চত্বরে ছড়ানোর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবী বিএনপি সমর্থিত পাঁচজন আইনজীবীকে পিটিয়ে জখম করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর দু’ টোর দিকে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে এ ঘটনা ঘটে। আহত আইনজীবীরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী জানান, ভার্চুয়াল আদালতে একই মামলায় বাদিপক্ষের ওকালতনামায় ও ও আসামীপক্ষের জামিননামায় সাক্ষর করেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী এ্যাড. আকবর আলী। অ্যাড. আকবর আলী বাদিপক্ষের সাক্ষর তার নয় দাবি করায় স্পেশাল জজ শেখ মফিজুর ইসলাম তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে নির্দেশ দেন।

অভিযোগের সত্যতা মেলায় প্রতিবেদন দেওয়ার পাশপাশি সাধারণ সভা ডেকে আকবর আলীর আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ বাতিল করা হয়। একই সাথে তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য বার কাউন্সিলে আবেদন করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ ছিল বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। মঙ্গলবার দুপুরে জুনিয়র আইনজীবীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে অ্যাড.এন আমিন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জেলা ও দায়রা জজ মফিজুর রহমান সাতক্ষীরা বরাবর লিখে তা আদালত পাড়ায় বিতরণ করা হয়। দরখাস্তকারি জুনিয়র আইনজীবীগণ ইয়ং ল’ ইয়ার সাতক্ষীরা ও আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগ হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ এর বিরুদ্ধে মানবতার জজ হিসেবে মনে করে অ্যাড.আকবর আলীর পেটে লাথি মারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান আশাশুনির খাজরার আওয়ামী লীগ নেতা শরবৎ হত্যা মামলার ১২ জন আসামীকে ভার্চুয়াল ৯৫ মামলায় রিজেক্ট করিয়ে হাইকোর্টে জামিনের জন্য পাঠিয়ে দেন। একইসাথে ওইসব আসামীদের দু’টি ভার্চুয়াল মামলায় জামিন শুনানীর জন্য গত ২৮ জুন দিন ধার্য করান। ২৩ জুন হাইকোর্টের ৫নং ভার্চুয়াল আদালত থেকে নয়জন আসামী জামিন হয়ে গেলে ২৮ জুনের কথা মাথায় রেখে জজ সাহেবকে শান্ত রাখতে ছবিসহ কবিতা ও নিউজ পত্রদূতে ছাপেন ওই সাংবাদিক আইনজীবী।

২৮ জুন সাতক্ষীরার স্পেশাল জজ আদলতে ওইসব আসামীর জামিন শুনানীর আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করলে অ্যাড. বদিউজ্জামান এর উপর ক্ষুব্ধ হলেও তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেননি স্পেশাল জজ। প্রভাব খাটিয়ে বাড়ির সংস্কার করা, গ্রামে পাঁচ বিঘা জমি কেনা ও নতুন মোটর সাইকেল কেনার কথা উল্লেখ করা হয় অ্যাড. বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে।

অ্যাড. শাহ আলম, অ্যাড. তপন দাস, অ্যাড. ওকালত আলী, অ্যাড, তামিম আহম্মেদ সোহাগসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, আদালতে অধিক টাকা উপার্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া সাঈদুজ্জামান জিকো, সায়েদ, রফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান পিন্টুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল আদালতে অধিক উপার্জনের কথা বলা হয়।

অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ আনা হয় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হুমায়ুন কবীর, তার পেশকার আশরাফুল, জেপি ইদ্রিস আলী শোভনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

এ সংক্রান্ত অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার পর শাহ আলম, তামিম আহম্মেদ সোহাগ, অ্যাড. ওকালত আলী, রফিকুল ইসলাম, জিকোসহ কয়েকজন আওয়ামীপন্থী আইনজীবী মঙ্গলবার দুপুর দু’টোর দিকে আইনজীবী সমিতির দোতলায় উঠে বিএনপি সমর্থিত এ্যাড. নুরুল আমিন, এ্যাড. সরদার সাঈদউদ্দিন সাইদ, এ্যাড. তোহা কামালউদ্দিন হিরা, এ্যাড. শেখ জুলফিকার আলী শিমুল ও আকবর আলীকে চেয়ার দিয়ে, কিল ও ঘুষি মেরে জখম করেন।

নুরুল আমিনের দাঁত ও আঙুল ভেঙে ড়েছে। মাথা ফেটে গেছে তার। সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সবুজ ও শহীদুল ইসলাম পিণ্টুর হস্তক্ষেপে হামলা বন্ধ হলে আকবর আলী ব্যতীত চারজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় অভিযোগ পেয়ে আদালত চত্বরে পুলিশ এলে গ্রেপ্তার এড়াতে অ্যাড. আকবর আলী প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. শাহ আলম বলেন, অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে এ্যাড. আকবর আলীর সদস্যপদ স্থগিত করার পর কিছু সংখ্যক আইনজীবী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা আপত্তিকর লিফলেট বের করে জেলা জর্জ সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। এর জের হিসাবে মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি নিজে তাতে বাধা দেন। এ সময় তিনি নিজেও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করেন।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অ্যাড. শাহ আলম বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত করেছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test