E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটায় চালক মনিরুলকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ইজিবাইক ছিনতাই, আরো এক আসামি গ্রেপ্তার

২০২০ জুলাই ১০ ১৬:৫৯:২৪
দেবহাটায় চালক মনিরুলকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ইজিবাইক ছিনতাই, আরো এক আসামি গ্রেপ্তার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক চালককে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার ইজিবাইক ছিনতাই  এর ঘটনায় পুলিশ আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে দেবহাটা উপজেলার গাজীরহাট বাসস্টাণ্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের দাবি। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি দেবহাটার কামটা গ্রামের কৌশিক সেনগুপ্তের মালিকানাধীন একটি পুকুর থেকে পুলিশ খায়া যাওয়া ইজিবাইকের তিনটি চাকা, হ্যাণ্ডেল, বর্ডিও উপরের অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম রমজান আলী (৩৫)। সে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের সোনাটিকারী গ্রামের শহর আলী সরদারের ছেলে।

এদিকে সোনটিকারি গ্রামের শহর আলী সরদারের স্ত্রী জহুরা বেগম বলেন, তার ছেলে রমজানকে গত ৩০ জুন মঙ্গলবার দিবাগত একটার দিকে বাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ে ৫/৬জন ধরে বাড়ির সামনে রাস্তায় রাখা একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায়। দেবহাটা থানা, জেলা ডিবি পুলিশের কার্য্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকালে তিনি তার জামাতা সাত্তারকে নিয়ে কালিগঞ্জ থানায়ও গিয়েছিলেন জিডি করতে। তখন ওসি সাহেব বলেন সে দেবহাটার মনিরুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দেবহাটা থানায় আছে।

মনিরুল হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক উজ্জ্বল কুমার মৈত্র জানান, সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে গাজীরহাট বাসস্টাণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রমজানকে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি কামটা গ্রামের কৌশিক সেনগুপ্তের লীচ দেওয়া মাছের হ্যাচারি পুকুর থেকে নিহত মনিরুলের ব্যবহৃত ইজিবাইকের তিনটি চাকা, একটি হ্যাণ্ডেল ও ইজিবাইকের চাল উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার আদালতে পাঠানো হবে।

সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে কামটা গ্রামে গেলে কৌশিক সেনগুপ্তের পুকুর পাড়ে গেলে মুরগি ব্যবসায়ি দেবাশীষ পাল বলেন, দেবহাটা সদরের ইউপি সদস্য বসন্তপুর গ্রামের আরমান আলী শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মোটর সাইকেলে যাওয়ার সময় কৌশিক সেনগুপ্তের পুকুরের পানির মধ্যে ইজিবাইকের একটি অংশ চকচক করছে বলে তাকে ডেকে দেখান। মনে হয় এটি নিহত মনিরুলের হবে। এ কথা বলে তিনি দ্রুত নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন বলে চলে যান। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইপি সদস্য নির্মল মণ্ডলকে জানান। নির্মল মণ্ডল জানালে দুপুর ১২টার দিকে এসে পুকুর থেকে ইজিবাইকের অংশ বিশেষ ও পার্শ্ববর্তী একটি বাগান থেকে ইজি বাইকের খুচরা যন্ত্রাংশ উদ্ধার কওে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাদের ব্যবহৃত ভ্যানে করে হেলমেট পরা একজনকে নিয়ে আসা রমজান পরিচয়ে পুলিশের সামনে সে জানায় রাজুর বাড়ির আশে পাশে ইজিবাইকের বাকী অংশ মিলতে পারে।

তবে কৌশিক সেনগুপ্তের পুকুর ভাড়া নিয়ে গত পহেলা বৈশাখ থেকে মাছ চাষকারি কামটা পাটবাড়ির গোপাল গোস্বামী বলেন, একদিন পরপর তিনি মাছের খাবার দেন পুকুরে নেমে। পুকুরে জাল ও ফেলেন। গতকাল বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টাও তিনি পুকুৃরে মাছের খাবার দিয়ে নিয়ম অনুযায়ি মাছ জাল দিয়ে ধরে ধরে ছেড়ে দেন। তখন ইজিবাইক কেন একটি গাছের ডালও পড়েনি জালে। অথচ বসন্তপুরের আরমান মেম্বর কিভাবে জলের মধ্যে ইজি বাইকের অংশ বিশেষ দেখতে পেলেন সেটা অনেক প্রশ্নবিদ্ধ।

মামলার বাদি নিহত মনিরুলের ভাই আমিনুর রহমান বলেন, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত একটা ৪৮ মনিটে ০১৭২৪-২৩২৩৩১ নং মোবাইল ফোন থেকে বসন্তপুরের আরমান মেম্বর তাকে ফোন করে দু’টি আসামী ধরা পড়েছে বলে তাকে কামটায় যেতে বলেন।

দেবহাটার সুশীল সমাজের নেতারা বলেন, সদর ইউনিয়ন ইউপি সদস্য আরমান আলী ও তার মাদক বাহক একই গ্রামের আলিমুজ্জামান লিন্টু ২০১৩ সালে পুষ্পকাটিতে বিজিবি সদস্য জব্বার হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। আরমান ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য ভারত থেকে নিয়ে এসে লিন্টুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়। তাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক ডজনেরও বেশি মাদক মামলা রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে তার রয়েছে সখ্যতা। সেই আরমান মেম্বর মামলার বাদিকে বৃহষ্পতিবার রাতে মোবাইল করে দু’ আসামী ধরা পেড়েছে বলে চলে আসতে বলে। এর আট ঘণ্টা পরই আরমান মেম্বর কামটার কৌশিক সেনগুপ্তের পুকুরে পানির মধ্যে ইজিবাইকের অংশ বিশেষ চকচক করছে বলে নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে মুজিবর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে চলে যান।

এদিকে চেয়ারম্যান মুজিবরের সঙ্গে নিহত মনিরুলের স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করায় মনিরুলের বাবা ইসমাইল গাজীকে মারপিট করার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়। ইসমাইল গাজী সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। প্রতিশোধ নিতে আপোষে জামিন নিয়ে মামলা তুলে মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়াকে দিয়ে শ্বশুর ইসমাইল গাজীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা আসামী করে জেলে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে ১০ দিন আগে পুলিশ পরিচয়ে রমজান আলীকে বাড়ি থেকে তুলে এনে শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার স্বীকারোক্তিতে ইজিবাইকের অংশবিশেষ উদ্ধার, আরমান মেম্বরের প্রথম দেখা ও দেখে নোয়াপাড়া পরিষদে যাওয়াটা মনিরুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোন কেউকেটা প্রভাব খাটিয়ে নাটকীয় কায়দায় পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন নাতো? এখনো ইজিবাইকের চ্যাচিজ উদ্ধার হয়নি। তবে মনিরুলের গাড়ীর চ্যাচিজ নং ও ইঞ্জিন নম্বর না মিলিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যদের না দেখিয়ে পুলিশ কিভাবে বুঝলো ওই গাড়ি মনিরুলের খোয়া যাওয়া গাড়ি?

সাতক্ষীরার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ২ জুলাই বিচারক বিলাস মণ্ডলের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মনিরুলের স্ত্রী ২৫ জুন সন্ধায় হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ি তার স্বামীর অবস্থান মোবাইল ফোনে জেনে অবহিত করেছিলেন সাঈদুর রহমান রাজুকে। রাজুর সঙ্গে এক বছর সম্পর্ক ছিল তার। এর বাইরে রাবেয়া কিছু বলেননি। আবার সাঈদুর রহমান রাজু জবানবন্দিতে বলেন. যে তার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ছিল তাকে সে চিনতো না। বউদির মোড় থেকে মনিরুলের ইজিবাইকে বসে থাকা অবস্থায় সেও উঠে পড়ে। সখীপুর মোড় থেকে কোন দড়ি দিয়ে দুজন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর যে যার মত চলে যায়।

তবে রাজুর মুরগির দোকানে কাজ করার সময় রমজানের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে রাবেয়াসহ বিভিন্ন স্থানে কথা বলতো রাজু। ২৫ জুনও দুপুরে রমজানের মোবাইল থেকে রাবেয়াসহ বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেছে রাজু।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে আরমান মেম্বরের ব্যবহৃত ০১৭৮৫৫৯৩১৯৪ ও ০১৭২৪-২৩২৩৩১ নং মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা ও নোয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে মনিরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপানোর নিউজের প্রতিবাদ দিয়ে তিনি বলেন, মনিরুলের পরিবার তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেছে। তবে মনিরুল হত্যার বিচার চান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২৫ জুন রাতে বাড়ি ফিরে না আসা শিমুলিয়া গ্রামের ইজিবাইক চালককে ২৬ জুন সকালে দেবহাটার কামটা গ্রামের মিঠুর রাইস মিলের পাশ থেকে তার লাশ দেখে জনতা পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমিনুর রহমান ২৬ জুন রাতে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ২৭ জুন নিহতের স্ত্রী রাবেয়া, নিহতের শ্বাশুড়ি ফতেমা ও কামটা গ্রামের সাঈদুর রহমান রাজুকে আটক করে।

পরবর্তীতে একই এলাকার সুমন, আব্দুর রশীদ ও মামা আজিজুর রহমানের বাড়িতে থাকা আশাশুনির বসুখালি গ্রামের আব্দরি রাজ্জাককে আইনপ্রায়াগকারি সংস্থার সদস্য পরিচয়ে আটক করে। পহেলা জুলাই দুপুরে সুমন দেবহাটা থানা থেকে ও রাতে পাওয়ার হাউজ মোড় ধেকে রশীদ ও রাজ্জাক মুক্তি পায়। ৭ জুলাই বিকেলে মুক্তি পায় ফতেমা।।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test