E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশের উপস্থিতিতে জামায়াত নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় ঘরবাড়ি দখল!

২০২০ জুলাই ১৩ ২৩:১৬:৪৭
পুলিশের উপস্থিতিতে জামায়াত নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় ঘরবাড়ি দখল!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জামায়াতের সাবেক রুকন ও তার ছেলে জামায়াতের হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য বাসারের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে এসে ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পর একই পরিবারের ছয়জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। 

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে জামায়ত নেতার ঘর দখলে দিতে পুলিশ বিকেলে সংঘর্ষ এড়ানোর নামে একই পরিবারের দু’ শিশুসহ সাতজনকে আটক করে ঘর শূন্য করে জামায়াত নেতার কেনা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওয়াড়িয়া গ্রামের নাদের আলী গাজীর স্ত্রী জামেলা খাতুন জানান, তিনি একই গ্রামের জামায়াত নেতা বারী মোল্লার কাছে ছয় শতক জমি বিক্রি করেন। এ ছাড়াও তার নাবালক প্রতিবন্ধি ছেলে ইশারত এর পক্ষে তিনি (জামেলা) ছয় শতক জমি বিক্রি করেছেন মর্মে দাবি করে আসছিলেন বারী মোল্লা। এ ছাড়াও ইশারতের ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক সাড়ে ১০ শতক জমি যাহা ছেলে মোশারফের কাছে ২০০২ সালে বিক্রি করলেও ওই জমি ২০০৪ সালে বারী মোল্লার স্ত্রী জাহানারার নামে কেনা হয়েছে মর্মে দাবি করে আসছিল। তিন বছর আগে নাবালক প্রতিবন্ধি ইশারত মারা গেলে দাবি জোরদার হয়। তারা বারী মোল্লার ন্যয্য প্রাপ্য জমি একটি দাগ থেকে ১৯ শতক ও বাকী জমি আদালতে বন্টননামার মাধ্যমে দিতে রাজী হন।

এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বারী মোল্লাসহ চারজনকে বিবাদী করে মামলা করা হয়। আদালত যে যে অবস্থানে আছে সে অবস্থান বজায় রাখার জন্য আদেশ দেয়। এরপরও বিষয়টি নিয়ে থানায় উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ গত ঈদের এক সপ্তাহ পর উভয় পক্ষকে ডেকে বসান। এ নিয়ে আইনজীবীদের মতামত চার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান। মতামতও দেওয়া হয়। এরপর তিনি উভয় পক্ষকে জমি নিয়ে মামলা করতে বলেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা করা হয়নি। এ ছাড়া ওই জমি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকবার বসাবসি হয়েছে।

জামেলা খাতুন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াতের রুকন ছয়টি নাশকতা মামলার আসাী আব্দুল বারী মোল্লা, তার স্ত্রী ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক মহিলা রোকন তিনটি নশিকতা মামলার আসামী জাহানারা, তার ছেলে ২০১৩ সালে হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে ডুুমরিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫টি নাশকতা মামলার আসামী আবুল বাসার, ৫টি নাশকতা মামলার আসামী বাবু, রজব আলী মেম্বরের ছেলে শুভ’র নেতৃত্বে যুগিবাড়ির প্রিন্সসহ সাতজন, বাবুলিয়া, বালিয়াডাঙা, আবাদেরহাট এলাকার ৭০/৭৫ জন সন্ত্রাসী হাতে দা, লাঠি, কুড়াল ও লোহার রড নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাধা দেওয়ায় তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়।

পিটিয়ে জখম করা হয় ছেলে আকবর আলী, আশরাফের ছেলে শরিফুল ইসলাম, আশরমের ছেলে আরিফুল, ইসমাইলের স্ত্রী মাজেদা ও আবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমাকে। খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সাংবাদিক ও স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশের সহায়তায় বারী মোল্লা তাদের বাড়ি দখলে নিতে পারে এমন খবর পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর আলী, আরিফুল, মাজেদা ও হালিমা বাড়িতে চলে যায়।

আকবর আলী, আশরাফ আলী ও মোশাররফ হোসেন জানান, বারী মোল্লা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়ি দখল করতে না পেরে পুলিশকে ম্যানেজ করে দখল করার চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নেতৃত্বে কয়েকজন মহিলা পুলিশসহ ৩৫/৪০ জন পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে।

এ সময় পুলিশের গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য রজব আলী। মহিলা পুলিশ তাদের বাড়ির মধ্যে অবস্থানরত লায়লা খাতুন, ফতেমা খাতুন, হালিমা খাতুন, আশুরা, শিমু মুন্নি, শিশু স্মৃতি ও ভ্যান চালক আগলঝাড়ার টোটোকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলে। ঘর থেকে বের করার পর কয়েকজন পুরুষ পুলিশ সদস্য নারী ও শিশুদের লাথি মেরে উঠানে ফেলে দেয়। বাড়ি লোকজন শূন্য করার পর পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নির্দেশে বারী মাওলানা ওই ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়।

সাংবাদিক সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, পুলিশ ঘরের মধ্যে ঢুকে নারী ও শিশুদের টেনে হিচড়ে বের করে আনার চেষ্টার সময় সাংবাদিকদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীদেও ফেলে রেখে যাওয়া বাঁশের লাঠি ও লোহার রড পুলিশ গাড়িতে কওে নিয়ে আসে। নারী ও শিশু নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় দু’জন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম। মোবাইল থেবে ছবি মুছে ফেলে পরে মোবাইল দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশের নিন্দনীয় আচরনের ২৩ মিনিটের ভিঙিও চিত্র একটি ছাদ থেকে ধারণ করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন সাজুসহ কয়েকজন জানান, সম্প্রতিকালে জামায়াত নেতাদের পক্ষ নিয়ে নারী ও শিশুদের টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার যে দৃশ্য, সাংবাদিকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার যে তারা দেখেছেন প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। এটি এ এলাকার কয়েক বছরের মধ্যকার চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লেখা আছে পুলিশ কোন জমি বা পাওনা টাকা নিয়ে নিয়ে শালিস করে না। তাই বলে কি পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নারী ও শিশুদের টেনে হিচড়ে থানায় নিয়ে আটক রেখে জামায়াত নেতার জমি দখল করিয়ে দেবে? তিনি বলেন, পুলিশ বারী মোল্লার কেনা তালা লাগিয়ে চাবি তারই কাছে দিয়ে এলাকায় পুলিশ রেখে বারী মোল্লাকেই ঘর দখল করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারী মোল্লার ছেলে জামায়াতের হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য আবুল বাসারের ০১৮৭০-৮০৫০৫৭ মুঠোফোনে সোমবার রাত পৌনে নয়টায় কয়েকবার রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেনননি।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান কাউকে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে বারী মোল্লার ঘর দখল করিয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, যে কোন সময় সংঘর্ষ হতে পারে। তাই দু’জন শিশু ও কয়েকজন নারীকে ১৫১ ধারা প্রয়োগ মতে নিরাপত্তা দিতে থানায় আনা হয়েছে। আদালতের রায় ছাড়া যাতে কোন পক্ষ ওই ঘরে যেতে না পারে সেজন্য তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শান্তি রক্ষায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test