E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোবিন্দাসী গরুর হাট ক্রেতা শূন্য, অনলাইন মার্কেটে ঝুঁকছে খামার মালিকরা 

২০২০ জুলাই ১৬ ১৮:৫১:৫৪
গোবিন্দাসী গরুর হাট ক্রেতা শূন্য, অনলাইন মার্কেটে ঝুঁকছে খামার মালিকরা 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের গোবিন্দাসী গরুর হাট ক্রেতা শূন্য। বিক্রেতাদের আনাগোনাও কম। হাট উন্নয়নে সরকারি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অধিক মূল্যে ইজারা এবং সর্বোপরি করোনার প্রভাব ও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ও স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি এ গরুর হাট ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় খামার মালিকরা হাটে গরু না উঠিয়ে অনলাইন মার্কেটের প্রতি ঝুঁকে পড়ায়ও হাটে ক্রেতা-বিক্রোর উপস্থিতি কমে গেছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ৩১ কিমি., ভূঞাপুর উপজেলা সদর থেকে ৬ কিমি. এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে যমুনার কোল ঘেঁষে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসীতে অবস্থিত এ হাট। গোবিন্দাসীতে সপ্তাহের রোব ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন হাট বসে। তবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিনই গরু কেনাবেচা হয়। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদুল আযহার আগে ১৯, ২৩, ২৬ ও ৩০ জুলাই এ চার দিন হাটবার। অথচ হাটে তুলনামূলকভাবে কম গরু থাকলেও ক্রেতা নেই, জমে ওঠেনি গরুর হাট। প্রতিবছর এ সময়ে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক সমাগম ঘটত।

প্রতিদিন গরুভর্তি শ’ শ’ ট্রাক গরু ক্রেতা-বিক্রেতারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যেত। হাটে পা ফেলার জায়গা থাকত না। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় অধিক ইজারা মূল্য, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতা ও স্থানীয়দের অসম প্রতিযোগিতা এবং করোনা ভাইরাসের প্রভাব ও বন্যার কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এ গরুর হাটের ঐতিহ্য আজ ¤্রয়িমান। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’।

সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৯০ সালের আগে গোবিন্দাসী গরুর হাট খুব ছোট ছিল। স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধার নেতৃত্বে স্থানীয়রা হাটটির প্রসারে নানা প্রণোদনা দেন। ফলে জমে ওঠে গোবিন্দাসী গরুর হাট। এক পর্যায়ে দেশের দ্বিতীয় বৃৃহত্তর হাটে পরিণত হয়। মূলত ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গোবিন্দাসী গরুর হাটের যৌবনকাল ছিল। গোবিন্দাসী গরুর হাটকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় এ সময়ে গড়ে ওঠে ‘গরুর আবাসিক হোটেল’।

আবাসিক হোটেলে গরুর খাবার-দাবার ও গোসল করানো সহ নানা সুবিধা দেওয়া হত। এ হাটকে কেন্দ্র করেই ভূঞাপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গরুর খামার গড়ে ওঠে। বর্তমানের হাটের দূরাবস্থায় আবাসিক হোটেল তো দূরের বিষয় ইজারামূল্যের ৫০ভাগ অর্থ উঠাতে ঠিকাদার হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ এবারও শুধুমাত্র ভূঞাপুর উপজেলায় দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করে প্রায় ১৭ হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

এদিকে, গোবিন্দাসী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কম হওয়া ও মহামারি করোনার প্রভাবের কারণে টাঙ্গাইলে অনলাইন গরুর হাটের দিকে ঝুঁকছে স্থানীয় খামারিরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন খামারে প্রায় ১৭ হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেক খামারী ঋণ নিয়ে খামার পরিচালনা করেছেন। হাটের দূরাবস্থার কারণে তারা ‘অনলাইনে’ গরু বিক্রির ব্যবস্থা নিয়েছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম ইত্যাদিতে অ্যাকাউন্ট করে ‘পেইজ’ খুলে গরু, ছাগল ও ভেড়ার ছবি পোস্ট করছেন। ছবিতে দাম, প্রাণির ধরণ, ওজন, রঙ ইত্যাদির উল্লেখ করছেন।

ভূঞাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ উপজেলায় স্থায়ী, মৌসুমী খামার ও পারিবারিকভাবে গরু, ছাগল, মেষ ও ভেড়াসহ ১৬ হাজার ৮৫৬ টি গবাদিপশু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাড় ১০ হাজার ৬০২টি, বলদ এক হাজার ৭৫৪টি, ছাগল তিন হাজার ৮৫০টি ও ভেড়া ৬৫০টি রয়েছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস জানায়, জেলার ছোট-বড় ১৫ হাজার ১৪১টি খামারে এবার ৯০ হাজার ৪৭৭টি গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করে কোরবানীর ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনার প্রভাব ও বন্যার কারণে খামারীরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

গোবিন্দাসী গরুর হাটের ইজারাদার মো. লিটন মন্ডল জানান, তিনি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য গোবিন্দাসী গরুর হাট ইজারা নিয়েছেন। এর সাথে ১৫% ভ্যাট যুক্ত করে মোট ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়। করোনা মহামারীর সাথে বন্যা যোগ হয়ে হাটের বারোটা বাজিয়েছে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা নেই বললেই চলে।

তিনি জানান, ঈদুল আযহার আগে হাটে তিল ধারণের জায়গা থাকেনা। অথচ আর মাত্র চারটি হাটবার আছে- কিন্তু হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। এবার হাট থেকে মোট ইজারার অর্ধেক টাকাও উঠানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছেনা।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ড. মো. আবু সাঈদ সরকার জানান, ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট-বাজারগুলোতে যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, ‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ একটি নতুন ব্যবস্থা এখনো ক্রেতা-বিক্রেতারা এটায় অভ্যস্ত নয়। তবুও কোন কোন খামারী অনলাইনে তাদের গরু, ছাগল ও ভেড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ১৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test