E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তিস্তার ভাঙনে জনবসতির মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ৩টি ইউনিয়ন

২০২০ জুলাই ১৮ ১৭:০৩:৪৬
তিস্তার ভাঙনে জনবসতির মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ৩টি ইউনিয়ন

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর করাল গ্রাস থেকে রক্ষার দাবিতে বিদ্যানন্দ সেবা ফাউন্ডেন এর উদ্যোগে তিস্তা পাড়ের মানুষ ও ওই ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মানববন্ধন করেছে।  

শুক্রবার (১৭জুলাই) বিকালে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট নামক স্থানে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ফাউন্ডেশনের সভাপতি এরশাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামসহ বক্তারা সর্বগ্রাসী তিস্তা নদী থেকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র যেন মুছে না যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ শতাধিক হেক্টর আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে নদীর তীরবর্তী মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে বাঁধসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কিছু এলাকার আশ্রিত বাঁধও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসত-বাড়ি হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে অন্যের জায়গায় অবস্থান করছে। সরকারের নজরদারী ও নদী শাসন না হওয়ায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঠিক তদারকী না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষজন অভিযোগ তুলেছেন।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে গেলে নদীর তীরবর্তী মানুষরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়সারাভাবে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদী রক্ষার অহেতুক চেষ্টা করেন। এতে তারাই লাভবান হন। প্রকল্প নিয়ে এসে নদীতে বালু ভর্তি কিছু ব্যাগ দিয়েই প্রকল্পে লুটপাট করে।

অন্যদিকে নদী রক্ষা তো দুরের কথা ভাঙ্গন আরো তীব্রতর হয়ে উঠে। স্থায়ী পদ্ধতিতে কেউ নদী শাসন করে না। যা শুধু দিনের পর দিন তারা শোষন করেই চলছে। এছাড়া নির্বাচনের সময় এমপি (সংসদ সদস্য) প্রার্থীরা নদী খননের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন পারি দিলেই আর তাদের দেখাও মেলে না, এসতেহারও বাস্তবায়িত হয় না। ফলে বছরের প্রতিটি মূহুর্তে নদীর তীরবর্তী মানুষজন আংতকে দিন কাটাচ্ছে।

এভাবে বিদ্যানন্দ, নাজিমখান ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী এখন আরো বিনাসী খেলায় মেতে ভাঙ্গন তীব্রতর করে এগিয়ে আসছে পূর্বদিকে। ফলে জনবসতি থেকে ওই ইউনিয়ন ৩টির মানচিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। হাজার হাজার মূল্যবান সম্পদ ও সম্পত্তি চরাঞ্চল হয়ে জল ও বালুমহল হয়ে উঠেছে। পতিত হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক জমি। ভাঙ্গন তীব্রতর দেখা দিলে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটু নড়ে চড়ে দু’একদিনের জন্য ভাঙ্গন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে। ভাঙ্গন কমে গেলে আর তাদের দেখা মেলে না।

অতি সম্প্রতি বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা মৌজার মৌলবি পাড়া, বাঁধের রাস্তা, পুর্ব হংসধর, ডারিয়ার পাড়সহ নদীর তীরবর্তীর বাসিন্দা আহাম্মদ আলী (৬০), আয়নাল হক (৩৮), আঞ্জুয়ারা বেগম (৪৮), হবিবর রহমান (৬৫), মতিয়ার রহমান (৫৫), আলমগীর হোসেন (৩২), নিশিকান্ত (৪৭), উকিল মাহমুদ (৪৫), তরনিকান্ত (৫৫), ইয়াকুব আলী (৬০), নুজাহান বেওয়া(৬০), মনসাধু (৬৫), দুলাল হোসেন(৫০) সহ প্রায় ১৫/২০টি বাড়ী-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এদের প্রত্যেকের বাড়ি কমপক্ষে ১০/১২বার করে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়া প্রায় ১০/১২ বিঘা আবাদী জমিও বিলীন হয়। এছাড়া হুমকীর মুখে রয়েছে ওই এলাকার কালিরহাট বাজারসহ কালিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিদ্যানন্দ বাজার, ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৮/১০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বসত-বাড়ি।

রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দ্দী বাপ্পী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা করা জরুরী।

ভাঙ্গণের ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, এসময়টা নদীর যৌবন কাল। প্রতিবছর এ সময় পানি বৃদ্ধি, বন্যা ও ভাঙ্গন হয়। তাই নদী রক্ষা প্রকল্প করে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এমাজেন্সিতে এবারেও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

(আর/এসপি/জুলাই ১৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test