E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে খুন! 

২০২০ জুলাই ২০ ১৫:৪৭:১৫
২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে খুন! 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চার সদস্যকে মাত্র ২০০ টাকা ধার না পেয়ে এবং অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে খুন করা হয়। রবিবার (১৯ জুলাই) বিকালে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত প্রধান আসামি মো. সাগর আলী (২৭) এ তথ্য জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তারকৃত মো. সাগর আলী মধুপুর উপজেলার ব্রাক্ষ্মনবাড়ী গ্রামের মগরব আলীর ছেলে।

রবিবার রাতে র‌্যাব-১২ এর কমান্ডার লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম এ বিষয়ে মধুপুরের মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রক্ষ্মনবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

এ সময় র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩ কোম্পানীর কমান্ডার মেজর আবু নাঈম মোহাম্মদ তালাত উপস্থিত ছিলেন। পরে টাঙ্গাইলে কর্মরত র‌্যাব এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে একই কথা জানায়।

র‌্যাব-১২ এর কমান্ডার লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার করার পর মো. সাগর আলী প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। তিনি র‌্যাবকে জানান, মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার মাস্টারপাড়ার আব্দুল গনি সুদের ব্যবসা করতেন। সাগর আলী তার বাসার পাশেই ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা চালাতেন। আব্দুল গনির সাথে তার আগে থেকেই সুদের টাকার লেনদেন ছিল। সাগর আলী বেশ কয়েকবার সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। গত মঙ্গলবার(১৪ জুলাই) তিনি আব্দুল গনির কাছে ২০০ টাকা ধার(হাওলাত) চাইতে যান। আব্দুল গনি টাকা ধার না দিয়ে বকাঝকা করে সাগর আলীকে তাড়িয়ে দেয়। এতে মো. সাগর আলী অপমান বোধ করেন। ২০০ টাকা ধার না পাওয়া এবং অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়ায় মো. সাগর আলী তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে আব্দুল গনিকে হত্যা এবং টাকা-পয়সা ও সম্পদ লুটের পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর আলী তার সহযোগীকে নিয়ে বুধবার(১৫ জুলাই) দিনগত রাত প্রায় ১০ টার দিকে পৌরসভার মাস্টারপাড়ায় আব্দুল গনির বাসায় যান। যাওয়ার আগে তার সহোযোগী বাজার থেকে চেতনানাশক নিয়ে যায়। মো. সাগর আলী পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্দুল গনি তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেন। মো. সাগর আলী ও তার সহযোগী আকস্মিকভাবে চেতনানাশক ব্যবহার করে আব্দুল গনিকে অচেতন করে ফেলে। পরে একে একে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে। এ সময় আব্দুল গনি ছাড়া পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিল। সবাইকে অচেতন করার পর ওই বাড়িতে থাকা কুড়াল ও তাদের সাথে আনা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

র‌্যাব কমান্ডার আরো জানান, সবাইকে খুন করার পর মো. সাগর আলী ও তার সহযোগী মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। গ্রেপ্তারকৃত মো. সাগর আলীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে তার বোনের বাড়ি একই উপজেলার ব্রাক্ষ্মনবাড়ি(মজিদ চালা) থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ও লুট করা মালামাল উদ্ধার করা হয়। মামলার স্বার্থে মো. সাগর আলীর অপর সহযোগীর নাম প্রকাশ করেনি র‌্যাব।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার(১৭ জুলাই) সকালে মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ভ্যান-রিকশা-অটোর ব্যবসায়ী আব্দুল গনি(৫২), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম(৪২), ছেলে কলেজ ছাত্র তাজেল (১৮) ও মেয়ে সাদিয়ার(৭) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার রাতেই আব্দুল গনির বড় মেয়ে সোনিয়া বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার(১৮ জুলাই) মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শনিবার বিকালে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে আব্দুল গনির পৈত্রিক বাড়ি মধুপুরের গোলাবাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test