E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবিরাম বর্ষণে নিদারুণ কষ্টে বানভাসি মানুষ  

২০২০ জুলাই ২০ ১৯:০০:০৩
অবিরাম বর্ষণে নিদারুণ কষ্টে বানভাসি মানুষ  

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামে গত দু'দিনের অবিরাম ভারী বর্ষনে বানভাসী মানুষ অসহনীয় কষ্টের মুখে পড়েছে। চর দ্বীপচরসহ নদী অববাহিকার বন্যাকবলিত মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রায় ২৩ দিন আগে বাঁধের রাস্তা, রেলপথ, উচুস্থান ও আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেয়। গত দু’দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত যেন তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির কারণে উণুনে আগুন জ্বালাতে না পেরে অনেকের ভাগ্যে খাবার জোটেনি। প্রবল বৃষ্টির মাঝে  অসংখ্য পরিবার তাদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও পরিবারের লোকজন নিয়ে ত্রিপল ও ভাঙ্গাটিনের চালার নীচে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে । 

অনন্তপুর বাঁধের রাস্তা থেকে চিলমারীর কাঁচকোল বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে বানভাসিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ গত ২২ দিনেও কোন সরকারি অথবা বেসরকারি সাহায্য পায়নি। চড়খেয়ার পাড় বাঁধের রাস্তায় অবস্থান নেয়া আবুল কাশেম সাংবাদিকদের বলেন “বাড়িতে পানি উঠছে ২৪ দিন হয়, তখন থাকি বাঁধের সড়কে আছি। এখন আর কোন মেম্বার চেয়ারম্যান আমার কাছে আসে না বাহে।” এমন কথা শোনালেন ওই গ্রামের বাঁধে আশ্রিত আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্দুল খালেক, জব্বার ও শাহাবুদ্দিন। গোটা বাঁধের রাস্তায় আশ্রিত মানুষের একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে ।

বর্তমানে এসব এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবারের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হলেও সরকারিভাবে ঘোষিত ক্ষতিগ্রস্থ লোকের তুলনায় তা একেবারেই নগন্য। এছাড়া এসব বিতরণেও রয়েছে নানা রকম স্বজনপ্রীতি। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা সরকারি সাহায্যর বাহিরেই থেকে যাচ্ছে।

এদিকে, পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে বাঁধের বাহিরে ও ভেতরে নতুন নতুন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এসব বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ নিদারুণ কষ্টের মুখে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের সারাডোব ও উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে । ফলে বাঁধের ভেতর উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী, তবকপুর, গুনাইগাছ, ধরনীবাড়ি ও বুড়াবুড়ি এবং চিলমারী উপজেলার সদর, থানাহাট, রানীগঞ্জ ও রমনা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ গ্রামীণ জনপদের নতুন নতুন এলাকার ঘর-বাড়ি রাস্তা ঘাট প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষজন তাদের গবাদি পশু, হাঁস মুরগিসহ শিশু সন্তানদের নিয়ে গ্রামীন সড়কে ত্রিপাল ও টিনের চালা তুলে অবস্থান করছে। বিরামহীন বৃষ্টিপাতে এসব মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগির সাথে গাদাগাদি করে নিদারুণ কষ্টের মুখে পড়েছে।

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ায় মানুষের কষ্ট চরমে উঠেছে বলে তারা জানিয়েছে। কুড়িগ্রামের সোমবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার,ব্রক্ষপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো'র কন্ট্রোল রুম সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ২০৪.৪ মিলিমিটার, সোমবার (২০জুলাই) তা কমে ১৯.৫ মিলিমিটারে পৌঁছিছে।

আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত এ এলাকায় অব্যাহত ভারী ও মাঝারী বর্ষন অব্যাহত থাকবে থাকবে ফলে সৃষ্ট বন্যা স্থায়ী হবে বলেও জানান তিনি।

(পিএম/এসপি/জুলাই ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test