E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশি তাণ্ডব : অভিযোগের ১২ দিনেও ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি

২০২০ জুলাই ২৭ ১৭:৩৫:১৬
জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশি তাণ্ডব : অভিযোগের ১২ দিনেও ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙায় জামায়াত নেতা আব্দুল বারীর সন্ত্রাসীরা ছয়জনকে পিটিয়ে জখম ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়া, তাণ্ডব চালিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে থানায় আনা ছয় নারীকে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কাছে অভিযোগের ১২ দিনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহীত হয়নি। 

সাতক্ষীরার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামের নাদেও আলী গাজীর ছেলে আবুল বাসার বলেন, মা জামেলা ও প্রতিবন্ধি নাবালক ভাই ইশারতের কাছ থেকে ২০০৪ সালে স্ত্রী জাহানার নামে ৩০ শতক জমি কিনেছেন বলে ২০১৯ সালে দাবি করে আসছিলেন ঝাউডাঙা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক রোকন মাওলানা আব্দুল বারী। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদেশ, থানার সিদ্ধান্ত ও স্থানীয় শালিসের সিদ্ধান্ত মানেন না আব্দুল বারী ও তার ছেলেরা।

এরই জের ধরে গত ১৩ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াতের সাবেক রুকন আব্দুল বারী, তার স্ত্রী ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক মহিলা রোকন তিনটি নশিকতা মামলার আসামী জাহানারা, তার ছেলে ২০১৩ সালে হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে ডুুমরিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫টি নাশকতা মামলার আসামী নুরুল বাসার, ৫টি নাশকতা মামলার আসামী বাবু, রজব আলী মেম্বরের ছেলে শুভ’র নেতৃত্বে যুগিবাড়ির প্রিন্সসহ সাতজন, বাবুলিয়া, বালিয়াডাঙা, আবাদেরহাট এলাকার ৭০/৭৫ জন সন্ত্রাসী হাতে দা, লাঠি, কুড়াল ও লোহার রড নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

বাধা দেওয়ায় মা জামেলাসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সাংবাদিক ও স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশের সহায়তায় বারী মোল্লা তাদের বাড়ি দখলে নিতে পারে এমন খবর পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর আলী, আরিফুল, মাজেদা ও হালিমা বাড়িতে চলে যায়। দুপুরে তিনি আবুল বাসার থানায় মামলা দিতে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নেতৃত্বে কয়েকজন মহিলা পুলিশসহ ৩৫/৪০ জন পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে।

এ সময় পুলিশের গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য রজব আলী। মহিলা পুলিশ তাদের বাড়ির মধ্যে অবস্থানরত ছয় নারী ও শিশু সুমাইয়াকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলে। ঘর থেকে বের করার পর কয়েকজন পুরুষ পুলিশ সদস্যরা নারী ও শিশুদের লাথি মেরে উঠানে ফেলে দেয়। বাড়ি লোকজন শূন্য করার পর পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নির্দেশে বারী মাওলানা ওই ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। ছবি তুলতে গেলে দু’ সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

পরে এক শিশু ও ছয় নারীকে ১৫১ ধারায় নিরাপত্তা দেওয়ার নামে থানা হাজতে রাখা হয়। রাতে তাদেরকে আনতে গেলে তালা লাগানো ঘরে কেউ ঢুকতে পারবে বলে মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এরপর আবুল বাসার ও মোশারফ বাড়িতে চলে আসেন। রাত ১২টার দিকে ওই ছয় নারীসহ পরিবারের আরো সাতজনের বিরুদ্ধে বারি মাওলানার দেওয়া মিথ্যা মামলা রেকর্ড করা হয়। ১৫ জুলাই বুধবার বিকেলে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মুহিতউদ্দিনের অফিসে যেয়ে অভিযোগ ও হামলার প্রমাণ সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ জমা দেন তিনি। কয়েকদিনে এর কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ২১ জুলাই তিনি আবারো ডিআইজি অফিসে যান।

ডিআইজি মহোদয় সাক্ষাৎ করতে না চাওয়ায় তারই নির্দেশনা অনুযায়ি তার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিমের কাছে অভিযোগ সম্বলিত সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের তাণ্ডবের ভিডিও চিত্র জমা দেন। ডিআইজি সাহেব তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। এরপর কয়েকদিন কেটে গেলেও তালা মারা থাকায় তার ঘরে উঠতে পারছেন না।

হামলার ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ১৫ জুলাই তিনি সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ করেছেন। রোববার তিনি বারি মাওলানাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩৫/৪০ জনের নামে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য (পিবিআই) পুলিশ ব্যুরো ইনভেসিবটগেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে খুলনা ডিআইজি অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম বলেন, বিষয়চি তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test