E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুর রামসাগরে খাদ্য সংকটে চিত্রা হরিণ

২০২০ আগস্ট ১৮ ১০:০০:০০
দিনাজপুর রামসাগরে খাদ্য সংকটে চিত্রা হরিণ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ মায়াবি দূরন্ত চিত্রা হরিণগুলো খাদ্য সংকটে ভুগছে। পর্যটকদের দেয়া খাবার এবং দীঘি’তে জন্মানো পছন্দের শাপলা লতা এখন আর না পওয়া অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভূগছে হরিণগুলো।পর্যটক বিহীন কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে ইতোমধ্যে হরিণগুলো ৯টি হরিণ সাবক জন্ম দিয়েছে। তবে, এলাকাবাসী ও প্রাণিবিদদের অভিযোগ, ফুরফুরে মেজাজের চঞ্চল চিত্রা হরিণগুলো খাদ্যভাবে ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে। 

চিত্রা হরিণের প্রিয় খাবার শাপলার পাতা ও লতা। জাতীয় উদ্যান ঐতিহ্যবাহী রামসাগর দীঘিতে আগে যে শাপলা লতা জন্মাতো তা খেতে পছন্দ করতো হরিণগুলো।আগে রামসাগর দীঘি’র শাপলা পাতা ও লতা হরিণগুলোর খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশই মেটাতো। কিন্তু, সেই শাপলা আর জন্মায় না দীঘিতে। করোনা পরিস্থিতি’র আগে টিকেট দিয়ে মাছ শিকারের উৎসব ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার অবাধ বিচরণে শাপলা গাছগুলো বিনষ্ট হয়ে গেছে। দুই বিভাগের দ্বৈত শাসনে সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতি। রামসাগরের ৬৮ দশমিক ৫৪ একর পাড়ভূমি স্থলভাগ বন বিভাগের আওতায় এবং ৭৭ দশমি ৯০ একর জলভাগ দীঘি নিয়ন্ত্রন করছে জেলা প্রশাসন।

দুই বিভাগের দৈত শাসনে এই জাতীয় উদ্যানের কাংখিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। হরিণগুলোও উপরের পড়েছে, এর বিরূপ প্রভাব। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় মায়াবি দূরন্ত চিত্রা হরিণগুলো খাদ্য সংকটে ভুগছে। পর্যটকদের দেয়া খাবার এবং দীঘি’তে জন্মানো পছন্দের শাপলা লতা এখন আর না পওয়া অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভূগছে হরিণগুলো। এমন অভিযোগ স্থানীয় পশুপ্রেমি উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন, পরিবেশ সংগঠক মুকিদ হায়দার ও শিক্ষাবিদ মামুরের।

রামসাগর দীঘি’র সাবেক তত্বাবধায়ক রোটারিয়ান এ, কে.এম.আব্দুস সালাম তুহিন জানান,রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় সরকারিভাবে ৬টি চিত্রা হরিণ আনা হয়। বাড়তে আর কমতে শতাধিক হরিণ থেকে এখন জন্ম নেয়া ৯টি হরিণ সাবকসহ ৫৫টিতে দাঁড়িয়েছে। বেশকিছু হরিণ রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে দেশ-বিদেশের প্রধানরা নিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে এসব চিত্রা হরিণসহ মিনি চিড়িয়াখানার বিভিন্ন জীবজন্তুর জন্য খাবার আগের থেকে জোগাড় করে রাখতে হচ্ছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হরিণের খাদ্য বরাদ্দের বিষয়ে ক্যামরার সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে খাদ্যো ব্যবস্থা করে তা পরে বাজেট এলে সমন্বয় করা হয়। হরিণগুলোকে পর্যাপ্ত খাদ্য দেয়া হচ্ছে, বলে দাবি করছেন, রামসাগর জাতীয় উদ্যানের বর্তমান তত্বাবধায়ক মো সাদেকুর রহমান।

তবে, বিশিষ্টজন আজাদ আবুল কালামের অভিযোগ,অবহেলা করা হচ্ছে,হরিণগুলোর প্রতি।বরাদ্ধ থাকলেও হরিণগুলো বঞ্চিত তার প্রাপ্য খাবার থেকে। অবলা প্রাণির খাদ্য লুটে খাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রধান আকর্ষণ মিনি চিরিয়াখানার চিত্রা হরিনগুলো শুধু নয়, বিলুপ্ত প্রজাজির নীলগাই, বানর, হনুমান,অজগর পাখি সহ অন্যান্য প্রাণীগুলোও অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দু’টো নীল গাই মারা গেছে। ঐতিহাসিক রামসাগরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রাণিগুলো’র প্রতি যত্নবান হওয়ার তাগিদ অনেকেই।

সরজমিনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে মানুষ বাধ্যগত অবসর থাকায় এই অবলা প্রাণি মায়াবি হরিণগুলো প্রাণচাঞ্চল্য এবং স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মতো খাবার পরিবেশন করলে এবং সেবা-শশ্রু অব্যাহত রাখলে, এই হরিণগুলো ভালো থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন,প্রাণিবিদরা।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test