E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু, আ. লীগ নেতা আটক

২০২০ আগস্ট ১৮ ১১:১৫:৫৮
ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু, আ. লীগ নেতা আটক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মাছ চুরির অভিযোগে আটককৃত ছেলেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে তার বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত দু'টোর দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নলবুনিয়া এলাকায় খালের গেট নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের ছেলে আহত সেলিম নিকারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই নির্যাতনের নেতৃত্বদানকারি তালা উপাজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক, উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান ও তালা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমানকে উপজেলা পারিষদের সামনে থেকে ক্ষুব্ধ জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটককৃত মশিয়ার রহমান ও তার দু’সহযোগীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকার নিকারী সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা তালা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

নিহতের নাম লুৎফর ফকির (৬০)। তিনি তালা উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের মৃত আজিজুর ফকিরের ছেলে।
আটককৃত মশিয়ার রহমান সরদার (৪০) তালা উপাজেলার বারুইআটি গ্রামের মৃত নূর আলী সরদারের ছেলে।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সেলিম নিকারী (২৭) জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে তিনি হাজরাকাটি ও জিয়ালা নলতা গ্রামের সীমান্তবর্তী নলবুনিয়া সরকারি খালের গেটে মাছ ধরতে যান।

এ সময় বেড়িবাঁধের পাশে তালা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানের মালিকানাধীন চিংড়ি ঘেরে অবস্থানকারি তালা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাজরাকাটি গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে শেখ তুহিন হোসেন ও বারুইআটি গ্রামের রনি তাকে ধরে বেড়িবাঁধের উপরে নিয়ে মারপিট করতে থাকে। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সরদার মশিয়ার রহমান এসে তার গলায় গামছা বেঁধে হত্যার চেষ্টার পাশাপাশি মারপিট করে। বিষয়টি বাবা লুৎফর ফকির জানতে পেরে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে ছুঁটে এসে প্রতিবাদ করায় তাকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে সরকারি খালের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।

জিয়ালা নলতা গ্রামের রুহুল আমিন জানান, খবর পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন যেয়ে খালের পানি তে পড়ে থাকা চাচা লুৎফর ফকির ও বেড়িবাঁধের উপর থেকে চাচা চাচাত ভাই সেলিমকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন । এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সোহান চাচা লুৎফরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ভর্তি করা হয় সেলিম নিকারীকে।

রুহুল আমিন আরো বলেন, চাচার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সোমবার দিবাগত রাত দু'টোর দিকে তালা উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সরদার মশিয়ারকে ক্ষুব্ধ জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। মঙ্গলবার সকালে এলাকার নিকারী সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ক্ষুব্ধ কয়েক’শ এলাকাবাসী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি তালা উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে সরদার মশিয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তার নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তুহিন শেখ ও রনিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরদার মশিয়ার রহমানের সঙ্গে তার ০১৭১১-১৩১৪০১ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ পাওয়া যায় তালা সরকারি কলেজ ছাত্রললীগের সভাপতি তুহিন শেখের ০১৭৫৯- ৩২৩৮৬৬ মোবাইল ফোনটি।

তবে নির্যাতনকারী ও সরদার মশিয়ারের ঘের কর্মচারি রণি হোসেন বলেন, মশিয়ার সরদারের ঘেরে মাছ চুরি করার সময় হাতে নাতে ধরে ফেলা হয় সেলিম নিকারীকে। তাকে ও তার বাবাকে কয়েকটি চড় থাপ্পড় মারা হয়।

তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ সোহান বলেন, মৃতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কালণ নিশ্চিত করা যাবে না। এ ছাড়া সেলিম নিকারীর মুখমণ্ডল, মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কারণে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।

তালা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, সেলিম নিকারী খালে মাছ ধরতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা মশিয়ার রহমান ও তার সহযোগিরা মারপিট করে। খবর পেয়ে বাবা লুৎফর নিকারী ছুঁটে গেলে তাকেও মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে লুৎফর মারা যান। সরদার মশিয়ারকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। লুৎফর নিকারীর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test