E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেকার ভাতার কথা বলে ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আ. লীগ নেতা!

২০২০ আগস্ট ১৯ ১৩:২১:৪১
বেকার ভাতার কথা বলে ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আ. লীগ নেতা!

আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে বেকার ভাতার কথা বলে ৩০ জনের নিকট ৪৮ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়,পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৩০ যুবক যুবতি কে সরকারিভাবে বেকার ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার হতে ৩০ হাজারসহ নানাভাবে এ পর্যন্ত মোট ৪৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী যুবক যুবতিরা। এ টাকা নিয়ে প্রতিজন যুবক যুবতিকে সরকারিভাবে বেকারভাতা হিসাবে প্রতিজনকে ১ লাখ ৬০ হাজার করে টাকা দেওয়া কথা বলে এসব টাকা গ্রহন করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আজাদুল ইসলাম ।

পরে ভুক্তভোগীরা এসব বেকারভাতা সুবিধা টাকা না পাওয়া নিজেদের দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে এর বিনিময়ে আজাদুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ৫১১২০০১০১৩৩২৬ নাম্বার মের্সাস আজাদ টের্ডাসের একাউন্ট এর একটি চেকে গত ২৯ -৬-২০২০ সালে তাসলিমা আক্তার হিরাকে ৩০ লক্ষ টাকার একটি চেক দিয়েছেন। এছাড়াও ন্যাশনাল সার্ভিস এর সুবিধাভোগী পৌর এলাকার শিবরামপুর গ্রামের চান মিয়ার কন্যা চাম্পা আক্তার কে ন্যাশনাল সার্ভিসের বেতন উত্তোলন করার কথা বলে কৃষি ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখা সঞ্চায়ি হিসাব নং – ১২২৪৮ নং একাউন্টের তিনটি চেক বহির তিনটি পাতায় একটিতে আজাদুল ইসলামের স্বাক্ষর ও ২ টিতে বিদ্যুৎ নামে স্বাক্ষর করা রয়েছে ।

কৃষি ব্যাংকের পলাশবাড়ী শাখার হিসাব নং ১২২৪৮ নং একাউন্টের তিনটি চেকের মাধ্যমের ৭০ লক্ষ টাকার উল্লেখ্য করে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীরা আজাদুল ইসলামের নিকট থেকে পাওয়া ২ টি একাউন্টের ৪ টি চেকের মাধ্যমে মোট ১ কোটি টাকার চেক নিয়ে টাকা উদ্ধারে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও থানা পুলিশেল নিকট বিচার চেয়ে ধর্ণা দিয়েছেন। এরপরেও টাকা গুলো উদ্ধার না হওয়ায় তারা হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে এ ঘটনাটি জানাজানি হলে পলাশবাড়ীতে বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সুত্রে জানা যায় , যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে বেকার ভাতা বলে কোন সরকারি সুবিধা নাই এসব ভুয়া ও প্রতারণা মুলক বিষয় । যারা এসব বলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা নিছক অভিনব কায়দায় সাধারণ বেকার যুবক যুবতিদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তবে আরো জানা যায়, সরকার করোনা কালে বেকার যুবক যুবতিদের জন্য ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা যায় তবে তা এখনো পাশ হয়নি বা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখা হতে এই একাউন্ট দুটির মালিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

এদিকে কৃষি ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখার হিসাব নং-১২২৪৮ নং একাউন্টের মালিক চাম্পা আক্তার জানান, ন্যাশনাল সার্ভিসের বেতন উত্তোলনের জন্য আজাদুল ইসলাম কে চাম্পা আক্তার তাহার চেক বহি দিয়েছিলেন। সেই চেক নিয়ে এবং আমার একাউন্টে টাকা দিবে মর্মে আমার চেকের পাতায় নিজে ও বিদ্যুৎ চেয়ারম্যানের কথা বলে বিদ্যুৎ স্বাক্ষরিত আমার হিসাব নং এর চেক দিয়েছেন। যা আমরা সে সময়ে বুঝতে বা ধরতে না পারলেও বর্তমান সময়ে বুঝেছি। তারা আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার তাল বাহানা করে আমাদের চেক দিয়ে আমাদেরকেই বুঝ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অভিযুক্ত আজাদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার তার বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। এবং তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভাবে আমাকে ঘায়েল করতে একটি চক্র গভীর ষরযন্ত্রের লিপ্ত হয়েছে । এরচেয়ে আর কিছু বলার নেই আর যদি কিছু বলতে হয় তবে সেটা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট বলবো। তিনি আরো জানান যে সোনালী ব্যাংকের চেকটি আমার তবে সেটা চেক বহিসহ আমার নিকট হতে চুরি হয়েছে যে বিষয়ে থানা জিডি করা হয়েছে। তবে তিনি এসময় পলাশবাড়ী থানার জিডির নাম্বারটি দেননি। তবে সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখা সুত্রে জানা যায়,গত ১৬ আগস্ট ২০২০ তারিখের চেক হারানোর একটি জিডি কপি সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখায় জমা দিয়েছেন।

এদিকে ভুক্তভোগী হিরা,ফারুক,চাম্পাসহ কয়েকজন দাবী করেন, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতা আজাদুল ইসলাম আমাদের বেকার ভাতার কথা বলে টাকা নেওয়ার পর আমাদের রিসিভ মানির প্রত্যায়ন দিয়েছেন। আজাদুল ইসলাম আমাদের সকলের বাড়ীতে তিনি গিয়েছেন খাওয়া দাওয়া করেছেন। এবং লটারী মাধ্যমে আমাদের কয়েক জনকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। এছাড়াও একই ঘটনায় বেশ কয়েক জনের নিকট থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়েছেন আজাদুল ইসলাম। যার ভিডিও এবং কাগজপত্রাদি আমাদের নিকট রয়েছে ভুক্তভোগীদের দাবী আমাদের যে টাকা দেওয়ার কথা ছিলো সেই টাকা আমাদের ফিরিয়ে দিতে হবে । এজন্য আমরা আইনিসহ সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এবং আমাদের নিকট হতে অভিনব কায়দায় এসব টাকা নিয়ে এখন ফেরত না দিয়ে নানা ধরণের তালবাহানা করছে। আমাদের নানা ভাবে হুমকি ধামকি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে ভুক্তভোগীরা আরো জানান,এরপর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট গেলে তিনি বিষয়টি সমস্ত ডুকুমেন্ট দেখতে ও বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু পরে আর আমরা তার কাছে যাই নাই। এরপর দিনের পর দিন গেলেও এঘটনায় কেউ কোন ব্যবস্থা নেননি বা আমরাও আর আমাদের টাকা গুলো পাই নাই।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর এলাকার একজন ভুক্তভোগী জানান, আমার নিকট হতে বেকার ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে অভিযুক্ত আজাদুল ইসলাম টাকা নিয়েছিলেন পরে তাকে চাপ দিলে তিনি তার পিয়ারী মার্কেটে থাকা মের্সাস আজাদ টের্ডাসের ব্যবসা প্রতিষ্টান হতে আমাকে আমার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন ,এভাবে উপজেলা জুড়ে বেকার যুবক যুবতিদের কয়েকটি গ্রুপের নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এর মধ্যে আমিসহ একাধিক ব্যক্তিকে আজাদুল ইসলাম টাকাও ফেরত দিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে ও আজাদুল ইসলামের করা চেক সংক্রান্ত জিডির বিষয়ে থানা পুলিশের নিকট জানতে চাইলে দায়িত্বরত থানা অফিসার ইনচার্জ তদন্ত মতিউর রহমান বিষয়টি জানেন না বলে জানান । তিনি আরো বলেন থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান ছুটিতে আছেন। এরপর এ প্রতিবেদককে তিনি থানার দায়িত্বরত মুন্সি নিকট বিষয়টি জানতে বলেন। সে অনুযায়ী থানায় দায়িত্বরত মুন্সি জানান,জিডি হয়েছে কিনা জানি না তবে আজাদুল ইসলাম চেক সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় কয়েকজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আলহাজ্ব একেএম মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও ভুক্তভোগী ছেলে মেয়েদের কাছে বিষয়টি শুনেছি তাদের নিকট তথ্য প্রমান গুলোর কপি চেয়েছিলাম তারা সেগুলোর আংশিক কিছু আমাকে দেখালেও ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোন ডুকুমেন্ট না দেওয়ায় বা পরবর্তীতে আমার কাছে না আসায় এ বিষয়টি দেখা বা কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বেকার ভাতা দেওয়া কথা বলে বেকার যুবক যুবতিদের নিকট হতে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া এটা নেক্কারজনক ঘটনা বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ।

উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন ,যদি কেউ বেকার যুবক যুবতিদের নিকট হতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধ ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে সে যেই হোক তাকে আইনের মুখোমুখি দাড় হতে হবে ।

উল্লেখ্য, আজাদুল ইসলাম পৌর এলাকার জামালপুর গ্রামের মৃত নছের উদ্দিন সরকারের ছেলে পলাশবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি এছাড়াও তিনি পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাধারে ঠিকাদার,পরিবহন ব্যবসায়ি এছাড়াও ঢোলভাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজের লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।

(এ/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test