E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঝাউডাঙায় জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশি তাণ্ডব : তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পিবিআই 

২০২০ আগস্ট ১৯ ১৯:৪২:০৮
ঝাউডাঙায় জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশি তাণ্ডব : তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পিবিআই 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙায় জামায়াত নেতা আব্দুল বারীর সন্ত্রাসীরা ১১জনকে পিটিয়ে জখম, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগে খুলনা উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে সাতক্ষীরার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ে মঙ্গলবার ও আদালতের নির্দেশে বুধবার দুপুরে খুলনা পিবিআই পরিদর্শক আল মামুন ঘটনাস্থল সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙার ওয়ারিয়ায় প্রাথমিক তদন্ত করেছেন।

দু’ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে নির্যাতিতরা জেলা জামায়তের নায়েবে আমীর হাফ ডজন নাশকতার মামলার আসামী মাওলানা আব্দুল বারী, তার ছেলে জামায়াতের হেলমেট বাহিনীর প্রধান পাঁচটি নাশকতা ও একটি ডাকাতি মামলার আসামী নুরুল বাসারের সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৩ জুলাই সকালে ও বিকেলে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন , সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ও তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিকেলে পুলিশি তাণ্ডবের বর্ণনা দেন।

ওয়ারিয়া গ্রামের নাদের আলী গাজীর ছেলে আব্দুল বারী বলেন, ১৩ জুলাই জামায়াত নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে উপরন্তু বিকেলে হামলায় আহতদের দেখতে আসা ছয় নারীসহ এক শিশুকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে মারতে মারতে পুলিশের গাড়িতে তুলে থানায় নেওয়া হয়। পরে ওই ছয় নারীসহ ১৩জনের নামে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় তারা ১৫ জুলাই ও ২১ জুলাই খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড.মুঃ খন্দকার মহিদ উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করেন। জামায়াত নেতা ও পুলিশের তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজসহ অভিযোগ জমা দেন। সে অনুযায়ি গত মঙ্গলবার দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান পুলিশের হাতে নির্যাতিত ছয় নারীর জবানবন্দি নেন। অভিযোগকারি হিসেবে তার ও ভাই মোশারফের নামে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলা থাকায় তাদের সাক্ষী নেননি তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে জবানবন্দি শেষে হুবহু মিল রেখে মঙ্গলবার বিকেলে ওয়ারিয়ার নাদের আলী গাজীর মেয়ে কলারোয়ার ক্ষেত্রপাড়ার ফতেমা, ঝিকরার লায়লা, আবুল বাসারের শ্বাশুড়ি সদরের বেলেডাঙার আশুরা, তার দু’ মেয়ে খায়রুন, মুন্নি ও বাসারের স্ত্রী হালিমা বলেন, ১৩ জুলাই বারী মাওলানার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলার পর আহতদের দেখতে তারা দুপুরে সদর হাসপাতাল থেকে নাদের আলী গাজীর বাড়িতে আসেন। দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা তাদের রানা করা ভাত তরকারি ফেলে দেয়। বিকেল সোয়া চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ও তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিকেলে ৪০/৪৫ জন পুলিশ তাদেরকে ঘর থেকে টেরে হিঁচড়ে বের করে মারতে মারতে গাড়িতে তোলে। আরশাদের দু’ বছরের ছেলে সাব্বিরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সিপাহী রেহেনা।

পরে জামায়াত নেতার কেনা তালা জামেলা বেগমের ঘরের দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের গাড়িতে তুলে সিপাহী রেহেনা থানায় নিয়ে তাদেরকে পাছায় গরম আণ্ডা দেওয়ার হুমকি দেয়। রেহেনাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সিপাহী পান্না, লিমা ও দীপা। নিরাপত্তা দেওয়ার নামে থানায় আটক রাখা তাদেও ছয়জনসহ এক তিন বছরের শিশুকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে বারী মাওলানার ঘরে ও জমিতে কখনো উঠবে না এমন মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান। মুচলেকা না দেওয়ায় তাদের ছয়জনকে পরদিন বারী মাওলানার দেওয়া মিথ্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া জামেলাসহ ওই পরিবারের ছয়জনকে সকালে জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার কথা তুলে ধরে তারা বলেন, হামলার সময় তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদ ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঝাউডাঙা বাজারের পাশে এক সাবেক বিএনপি ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারিরা চলে যাওয়ার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এসে বলেন, এখনো কেউ মরিনি ? অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে জামায়াত নেতার ও পুলিশি তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়েছেন।

আক্ষেপের সঙ্গে আশুরা বলেন, বেহানসহ ছয়জন যখন সদর হাসপাতালে ভর্তি তখন তাদেরকে দেখতে এসে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো পুলিশের অন্যায় অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ দাসের মত সাতক্ষীরার তিন পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি করেন তিনি।

তারা আরো জানান, বুধবার দুপুরে তারাসহ ১২ জন গত ১৭ জুলাই আবুল বাসারের দায়েরকৃত মাওলানা আব্দুল বারীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতের মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ পরিদর্শক আল মামুনের কাছে একই রকম জবানবন্দি দিয়েছেন। দেখিয়েছেন সন্ত্রাসী ও পুলিশি তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ।

জানতে চাইলে পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক আল মামুন বলেন, নির্যাতিতদের বক্তব্য নয়, জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও পুলিশের তাণ্ডবের যে ভিডিও চিত্র তিনি দেখেছেন তা কোন সুস্থ মস্তিকের পরিচয় বহন করে না। বাস্তবতার সাথে মিল রেখে তিনি খুব শীঘ্রই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test