E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে ইউক্যালিপটাস গাছ 

২০২০ আগস্ট ২২ ১১:২১:৪৯
দিনাজপুরে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে ইউক্যালিপটাস গাছ 

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর হিড়িক পড়েছে। ফসলের আইল, পুকুর পাড়, বাড়ি পাশ, মাঠসহ যত্রতত্র নিষিদ্ধ হিড়িক চলছে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর।অতিমাত্রায় পানি শোষণ ও কার্বনডাই অক্সাইট নিঃসরণ করে ফসল, জীববৈচিত্র এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইউক্যালিপটাস গাছ। এ ধরনের গাছ লাগানো নিরুৎসাহিত করার তাগিদ দিয়েছে পরিবেশবিদরা। অতিমাত্রায় পানি শোষণ ও অক্সিজেন গ্রহণকারী এই গাছ কার্বনডাই অক্সাইট নিঃসরণ করেফসল, জীব-বৈচিত্র এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে পরিবেশবিদরা।

পরিবেশ উপযোগী না হওয়ায় ২০০৮ সালে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে দেশে ইউক্যালিপটাসের চারা উপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু,কৃষকরা না জেনে ইউক্যালিপটাসের চারা বপন করছেন। এভাবেই গড়ে উঠেছে শত শত ইউক্যালিপটাসের বাগান। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। নিষিদ্ধ গাছটির চারা উৎপাদনের সরকারি নিয়ম-নীতির কথা জানেন না স্থানীয় নার্সারি মালিকরা।

অন্যান্য বনজ বা ফলদ চারার চেয়ে এই চারা উৎপাদনে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি লাভ হয়। এই লোভে তারা বেশি করে চারা উৎপাদন করছেন আর সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এসব নিষিদ্ধ চারা রোপণে উৎসাহিত করছেন কিছু নার্সারি মালিক ও গাছের চারা বিক্রেতা। এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের। বিরল উপজেলার ভবানীপুর এলাকার মিজানুর রহমান জানালেন, ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়ে তিনি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। তার পুকুরের মাছ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ফসলেও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

বিরল উপজেলার ১০ নং রানীপুকুর ইউপি’র চেয়ারম্যান ও পরিবেশবাদি মো. ফারুক আযম জানালেন, ইউক্যালিপটাসের পাতার মধ্যে কেমিকালটি পাওয়া যায় তা একধরনের আন্টিসেপটিক - সে কারণে এই পাতা বেশিরভাগ পোকা-মাকড়ের জন্য ক্ষতিকারণ। এই পাতা পড়ানো ধোয়া দিয়ে মশা-মাছি ও পোকা তাড়ানো হয় অনেক সময়। সুন্দর পৃথিবীকে পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য রাখতে গাছের কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের মোট ভূ-ভাগের প্রায় ২৫ ভাগ বনভূমি দরকার। গাছ মানুষের বন্ধু ও পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপকরণ। কিন্তু সব গাছ মানুষের জন্য উপকারী কিংবা পরিবেশবান্ধব নয়। মানুষের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে রাক্ষুসি গাছ ইউক্যালিপটাস।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানালেন, আমাদের জলবায়ুর জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ মোটেই উপযোগী নয় উপরন্তু মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। তাই, এই ইউক্যালিপটাস সহ সব বিদেশী গাছের চারা এবার রোপণ বন্ধ করেছে,স্থানীয় বন বিভাগ।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্প সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসার, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্ত-ঘাটে, খেলার মাঠে, হাটবাজারসহ ফসলের মাঠজুড়ে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে ব্যাপকভাবে শোভা পাচ্ছে ইউক্যালিপটাস গাছ। এই গাছগুলোর নিচে অন্য কোনো গাছ জন্মায় না, এমনকি পাখিও বসে না। আকাশমণি গাছের রেনু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে অ্যাজমা হয়। এর কাঠ জ্বালানি হিসেবে বা আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না।"

তিনি আরও বলেন, "দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন চরগুলোর মধ্যে যেগুলো টিকবে, সেগুলোতে সামাজিক বনায়ন করা হবে। ধানি জমির দুই পাশে ধইঞ্চা গাছ লাগানো হবে। সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল, সারীতত্ব ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শ্রীপতি শিকদারের মতে, প্রতিদিন একটি পানিখেকো ইউক্যালিপটাস গাছ ৪০ থেকে ৫০ লিটার পানি শোষণ করে মাটিকে নিরস ও শুষ্ক করে ফেলে। এছাড়া মাটির নিচের গোড়ায় ২০-৩০ ফুট জায়গা নিয়ে চারদিকে থেকে গাছটি পানি শোষণ করে বলে অন্যান্য ফলদ গাছের ফলন ভালো হয় না। এই গাছে কোনো পাখি বাসা বাঁধে না।

ইউক্যালিপটাস গাছের ফলের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করলে অ্যাজমা হয়। এমনকি যে বসতবাড়িতে অধিক পরিমাণে ইউক্যালিপটাস গাছ আছে সেসব বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যে ফলের বাগানে এ গাছের সংখ্যা বেশি সেখানে ফল কম ধরতে পারে।

ইউক্যালিপটাস গাছের প্রভাবে শুধু পরিবেশেই বিনষ্ট হচ্ছে না, হুমকির সম্মূখিন হয়ে দাঁড়িয়ে জীব-বৈচিত্র্য। তাই, ইউক্যালিপটাস গাছ বর্জন করে দেশীয় গাছ লাগনোর তাগিদ দিচ্ছেন, প্রকৃতিবিদ এবং পরিবেশবাদীরা।

(এস/এসপি/আগস্ট ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test