E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সর্বস্ব হারালেও পরিবারকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সেলাই দিদিমনিরা

২০২০ আগস্ট ২৬ ১৭:০৮:৪৫
সর্বস্ব হারালেও পরিবারকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সেলাই দিদিমনিরা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সেলাই দিদিমনি নামটা সবেই যোগ হয়েছে তাদের নামের পাশে। এর আগে কেউ ছিলো গৃহস্থ্য বাড়ির গৃহবধু, কেউ ছিলো কৃষাণী, কেউবা ছিলো স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। পায়রা বন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহন করায় এসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। সরকার এদের ক্ষতিপূরণ দিলেও কেউ হারিয়েছে পৈত্রিক ভিটা, কেউবা চাষের জমি। কয়েকশ বছরের সহায় সম্ভল হারিয়ে নতুন ঠিকানায়, নতুন পেশায় যোগ দেয়া এসব হাজারো পরিবারের নারী সদস্যদের ৫০ জন এখন সেলাই দিদিমনি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উপকূলের জনপদে। পারিবারিক দৈন্যতা কাটিয়ে তারা সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তারা স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো অসহায় নারীদের। 

পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সরকারের জমি অধিগ্রহনের আওতায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার এখন নতুন ঠিকানার প্রতীক্ষায়। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা গ্রামে হয়তো কিছুদিন পরই উঠবে অট্রালিকা। পায়রা বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে সেখানে কর্মসংস্থান হবে হাজারো মানুষের।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহন করলেও লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় দশ বছর। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ না নেয়া প্রতিবছর বর্ষা, ঝড়, জলোচ্ছাস হলেই পানি বন্দী হয়ে পড়ে ১০ টি গ্রামের মানুষ। তখন কর্মহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। প্রতিবছরের মতো এ দূর্ভোগ গত ১১দিন ধরে চলছে।

সেই দূর্গত এলাকার বাসিন্দা নার্গিস. পাপিয়া, নাজনীন ও রিপা। জমি অধিগ্রহনে তাদের বসত ভিটা হারালেও ভবিষত কর্মসংস্থানের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছে সংসারের। পায়রা বন্দর কর্তুপক্ষ উন্নয়ন সংস্থা ডরপ এর মাধ্যমে তাদের মতো কর্মউৎসাহী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের সদস্য মাকসুদা ও সালমা। তারা জানায়, নিজেদের বসত ঘর, চাষের জমি হারিয়ে অথই সাগরে পড়েছিলেন। সরকার যদিও তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু কর্মহীন হয়ে পড়েছে বাড়ির উপার্জনক্ষমরা। সেই মুহুর্তে ডরপ এর মাধ্যমে তিন মাস মেয়াদী সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা প্রতিমাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জণ করছেন। তাদের পথে চলে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে সেলাই প্রশিক্ষনে।

এভাবে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতি মাসে মুন্সীপাড়া গ্রামের রিপা পাঁচ হাজার, বানাতিপাড়া গ্রামের পাপিয়া ১০ হাজার, কাজল বেগম তিন হাজার, চাড়িপাড়া গ্রামের নাজনীন তিন হাজার, সুমি পাঁচ হাজার, সাবিনা তিন হাজার, রাশেদা বেগম ১০ হাজার কলাপাড়ার নার্গিস ১০ হাজার, হাসনাপাড়া গ্রামের নুসরাত জাহান সাত হাজার, মনিরা আক্তার তিন হাজার টাকাসহ ৫০ জন নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।

সেলাই প্রশিক্ষণে সহায়তাকারী প্রশিক্ষক রোকসানা পারভীন ও সমাপ্তি হালদার বলেন, গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করাই তাদের লক্ষ্য। এজন্য তাদের সেলাইয়ের বিভিন্ন্ ডিজাইন শেখানো হয়েছে। উদ্যোগী এ নারীরা এখন নিজ নিজ অবস্থানে সফল। গত ২৩ আগষ্ট এ সফল ৫০ নারীর হাতে সনদ তুলে দেয়া হয়।

পায়রা বন্দর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহনে ৪২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। সরকার তাদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পূণর্বাসণেরও উদ্যোগ নেয়। সেই সাথে প্রতি ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার থেকে একজন করে সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ডরপ এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের ১৯৩৫ জনকে ২২ টি গ্রেডে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়ে কর্মক্ষম করে তোলে। পর্যায়ক্রমে ৪২০০ জনকেই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ডরপ এর ডেপুটি টিম লিডার শ্যামল চন্দ্র পাল বলেন, শুধু সেলাই না, এসব নারীরা প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে হাঁস,মুরগী ও গরু পালন করছে। স্বাবলম্বী করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই এ নারীরা প্রতিমাসে উপার্জণ করছে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের এ আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।

(এমকেআর/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test