E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশব্যাপী জেএমবি’র বোমা হামলা

সাতক্ষীরার ৬টি মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে

২০১৪ আগস্ট ১৬ ১২:২৩:৩৩
সাতক্ষীরার ৬টি মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : রবিবার সাতক্ষীরা তথা দেশের বহুল আলোচিত একটি দিন।  ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)  দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। এরই অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে বোমা হামলা চালানোর ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে পরদিন সাতক্ষীরা সদর থানায় পৃথক পাঁচটি ও ওই সালের পহেলা অক্টোবর আরো একটি মামলা দায়ের করে।

বর্তমানে সাতক্ষীরার অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক জিয়া হায়দারের আদালতে এসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আসামীরা একাধিক মামলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলখানায় অবস্থান করছে। ধার্য দিনে তাদেরকে আদালতে হাজির না করাতে পারা ও গত ১০ মাস যাবৎ বিচারক শুন্যতার কারণে সাক্ষীরা বার বার ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে স্পর্শকাতর এসব মামলার বিচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩ টি জেলায় প্রায় একই সময়ে বোমা হামলার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা শহরের তৎকালিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায়, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে, খুলনা রোড়ের মোড়ে ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় (পাঁচটি স্থানে) বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা শহরতলীর বাকাল ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশন আলীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ একই এলাকার জেএমবি জঙ্গি নাসিরউদ্দিন দফাদারকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ শহরের ইটাগাছার মনিরুজ্জামান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জল, কাসেম পুরের গিয়াসউদ্দিন, খড়িয়াবিলার মোঃ বেল্লাল হোসেন, মোঃ আসাদুল হক, খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতর খালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটনসহ নয় জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের নূর আলী মেম্বারসহ আরও তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এসব ঘটনায় পরদিন ১৮ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানায় যথাক্রমে তৎকালিন উপপরিদর্শক একে নজিবুল্লাহ, জসিমউদ্দিন,আবু তাহের, হযরত আলী ও সফিকুল ইসলাম পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেন।

ওই সালের পহেলা অক্টোবর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম হোসেন বাদি হয়ে নাসিরউদ্দিন দফাদারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পুলিশের হাত ঘুরে গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত শাখায় (সিআইডি) ন্যস্ত হয়। সাত মাস পর গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখার সহকারি পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুল ইসলাম ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ প্রতিটি মামলায় ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ জুন সাতক্ষীরা থেকে এ ছয়টি মামলা খুলনার দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিচারের জন্য পাঁচটি মামলা ফেরত পাঠানো হয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে এ পাঁচটি মামলার সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের তৎকালিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায় বোমা হামলা মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের বোমা হামলা মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে ১৩ জনের , বাস টার্মিনালের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতিমধ্যে ১২ জনের, খুলনা রোড়ের মোড়ের বোমা হামলা মামলায় ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতিমধ্যে ১১ জনের ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতিমধ্যে ১১ জনের ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলায় (জিআর- ৮৮৭/০৫) ১১জনের সাক্ষী শেষ হয়েছে।

সাতক্ষীরার ছয়টি মামলার আসামি জেএমবি জঙ্গী সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের নূর আলী মেম্বার, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাসেমপুর গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, ইসলামপুর চর এলাকার মোঃ নাসিরউদ্দিন, শহরের ইটাগাছা গ্রামের মনিরুজ্জামান মুন্না, খড়িবিলা গ্রামের মোঃ বেল্লাল হোসেন, ইসমাইল হোসেন, মোঃ আসাদুল হক, আখড়াখোলা গ্রামের সাইফউদ্দিন, খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটন ও মৃতদন্ড প্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হোসেন ওরফে রাসেল বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

ছয়টি মামলার অভিযোগপত্রভূক্ত ১৯ জন আসামির মধ্যে উপরোক্ত ১০ জন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ তলুইগাছা গ্রামের মমতাজউদ্দিন, সাতানি গ্রামের মোঃ আবুল খায়ের, পাথরঘাটা গ্রামের ফকরউদ্দিন আল রাজী ও কলারোয়া উপজেলার পুটুনি গ্রামের নাঈমউদ্দিন (চারজন) পালাতক রয়েছে। এছাড়া, জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর ইসলাম ওরফে বাংলাভাই ও সামরিক প্রধান আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়েছে।

এদিকে দেশ জুড়ে জেএমবি’র বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতারকৃত কয়েকজন আসামীর পরিবারের সদস্যরা জানান, আট বছরের বেশি সময় ধরে তাদের স্বজনরা জেলে রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন থানায় এ ধরণের মামলা থাকায় কোন মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এমনকি তাদের জামিন ও মিলছে না। উপরন্তু তারা দেশের কোন কারাগারে অবস্থান করছে তা জানতে না পেরে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। গত এক বছরে সাতক্ষীরার মামলাগুলোর নতুন কোন সাক্ষী না হওয়া বা কার্যক্রম এতটুকু না এগোনোয় তারা হতাশা ব্যক্ত করেন।

জেএমবি মামলা সংক্রান্ত সরকারি দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ জানান, সাতক্ষীরায় জেএমবি’র বোমা হামলা মামলার আসামিরা বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আব্দুর রব হাওলাদার বদলী হওয়ায় পদটি শূন্য ছিল। এক মাস আগে ওই আদালতের বিচারক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতের বিচারক জিয়া হায়দার যোগদান করেছেন। ফলে গত বছর এ সময় যে কয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দানের কথা বলা হয়েছিল তার পর থেকে মামলার কার্যক্রম কোনভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া আদালত ও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের ধার্য দিনে হাজির করালেও দেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা আসামীদের আদালতে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সাক্ষী গ্রহণ না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।

(আরকে/এইচআর/আগস্ট ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test