E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতার বাড়িতে হামলা, বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে প্রতিপক্ষরা

২০২০ সেপ্টেম্বর ০২ ২৩:৩৯:৫৪
সাতক্ষীরায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতার বাড়িতে হামলা, বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে প্রতিপক্ষরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মকবুল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে প্রতিপক্ষরা। বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কামাননগরের আব্দুস সালাম ও তার জামাতা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাঁচ ঘণ্টাব্যাপি এ ভাঙচুর চালানো হয়।

মকবুল হোসেন জানান, তার বাবার কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে রাধানগরের কেষ্ট ময়রার ব্রীজের পাশে আড়াই শতক জমি বিক্রির জন্য ১৯৯১ সালে চুক্তিবদ্ধ হন সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের মীরাজ আলী। সে অনুযায়ি তারা ওই জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। মীরাজ আলী ১৯৯৮ সালে মারা যাওয়ার আগে ওই জমি
লিখে দিয়ে যতে পারেননি। তার ছেলেরা ওই জমি থেকে কখনো তাদের চলে যেতেও বলেননি।

মকবুল হোসেন জানান, বাবার হাতে গড়া ৩০ বছরের আশ্রয়টুকু ভেঙে জবরদখলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আব্দুস সালাম ও তার নৈশপ্রহরী জামাতা সাইফুল ওরফে জেরো সাইফুল। ২০ রোজায় ঘরের দরজা, প্রাচীর ও ছাদের একাংশ ভাঙচুর করে। পথচারীরা বাধা দিলে একপর্যায়ে তার চলে যায়। গত ৫ জুন বৃহষ্পতিবার সকাল না হতেই
সালাম ও তার জামাতা সাইফুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আবারো ভাঙচুর করলে ৫জুন রাত ৯টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। সে অনুযায়ী ৮ জুন রবিবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের বাড়িতে বসাবসির সিদ্ধান্ত হয়।

মকবুল হোসেনের অভিযোগ, পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ি বসাবসির সিদ্ধান্ত হলেও ৬ জুন শুক্রবার সকালে কেষ্ট ময়রার ব্রীজের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়ে তার বাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশনা দেন সুলতানপুরের প্রিন্স। সে অনুযায়ি সালাম ও সাইফুলের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিপক্ষ আব্দুস সালাম মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরের সঙ্গে কোনদিনও কথা না বলায় বসাবসি হয়নি। একইভাবে ৫ জুনের হামলার ঘটনায় মকবুলের দায়েরকৃত এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি পুলিশ। এরপরও প্রতিপক্ষরা তাকে (মকবুল) উচ্ছেদ করার জন্য নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।

মকবুল হোসেন আরো বলেন, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আব্দুস সালাম ও তার জামাতা সাইফুলের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সন্ত্রাসী অতর্কিতে তার বাড়িতে হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা শাবল, হাতুড়ি, গাইতি ও কোদাল দিয়ে বাড়ির দেয়াল ও ১৩টি ক্লোবসিগ্যাল গেট ভেঙে ফেলেন। ঘুরের মধ্যে ঢুকে তারা শোকেসে রাখা নগদ টাকা, সোনার গহনা, মূল্যবান কাগজপত্র মোবাইল সেটসহ ব্যবহার্য জিনিপত্র লুট করে। ভাঙচুর করা হয় আলমারি, শোফা সেট, সিলিং ফ্যান, গ্যাস ওভেন, চালের ড্রাম, টিনের চাল, ইলেকট্রিক মিটার, প্রেসার কুকারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। ১৩টি ক্লোবসিগ্যাল গেট ভ্যানে করে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে একটি দোকানে নিয়ে যায় তারা। ব্যবহগৃত জিনিসপত্র জমির সীমানার বাইরে প্রাণসায়ের খালের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়। সকাল থেকে থানায় ফোন দিলেও ৯টার দিকে পুলিশ আসে।

একপর্যায়ে উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলামের সামনে তার স্ত্রী, মেয়ে, শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকাকেও বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। স্ত্রীকে ভর্তি হরা হয় সদর হাসপাতালে। এ দিকে হামলা , ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে সাংসদ ও বাংলাদেশ
ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহকে অবহিত করা হয়। সকাল ১১টার দিকে সাংবাদিক, ভূমিহীন নেতা, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ¡ ছুটে এসে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। ঘটনান্থলে আসে পুলিশ। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জাসদ নেতা প্রভাষক ইদ্রিম আলী, ওয়ার্কার্স পার্টির সদর শাখার সভাপতি স্বপন কুমার শীল, জাসদ নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, জেলা ছাত্রলীঅগের সাবেক সভাপাতি কাজী আক্তার হোসেন, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, শহীদুল ইসলাম, মুনসুর আলী, ভূমিহীন নেতা কওছার আলী, আব্দুস সামাদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দেশের প্রচলিত আইনের উর্দ্ধে যেয়ে যারা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে মকবুল হোসেন ও তার পরিবারকে উচ্ছেদ করতে ভাঙচুর, লুটপাট শেষে বাড়ি ঘর ভেঙে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। রাধানগর সদর থানা থেকে ঢিঁল ছোঁড়া দূরত্বে হলেও ভাঙচুরের ঘটনা শুরুর তিন ঘণ্টা পর পুলিশ আসা ও পুলিশের উপস্থিতিতে নারীদের মারপিট করার সমালোচনা করেন তারা।

এ ব্যাপারে আব্দুস সালাম বলেন, তাদের জমিতে জোরপূর্বক দখল করে থাকা মকবুল হোসেন চলে না যাওয়ায় তাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজামান মকবুল হোসেনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের কথা স্বীকার করেই বলেন, খবর পেয়ে উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এজাহার পেলে মামলা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test