E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশের রোষানলের শিকার সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ

২০২০ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৮:৩৪:৩২
পুলিশের রোষানলের শিকার সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ

জামালপুর প্রতিনিধি : ‘শরিফ দারোগা আমাকে হাত ও পিঠমোড়া করে বেঁধে থানায় নিয়ে যায়। পরে আবার ওসি স্যার, আমাদের এলাকার মেম্বার ছামিউল হক নেদা ও সাংবাদিক শাহীনের কারণে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়।’

পুুলিশের নির্যাতন, ঘটনা ভিন্নখাতে নেবার চেষ্টা ও ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মো. তাজমল এভাবেই অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দেন।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরের বকশীগঞ্জের মেরুর চর হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার পর পুলিশের অপ-তৎপরতা ও অমানবিক আচরণের বর্ণনায় ওই ছাত্রীর দাদা মো. তাজমল (৭০) আরও বলেন, ‘ওইদিন আমার ছেলে ও ছেলের বউ বাড়িতে ছিল না। রাতে আমার নাতনী প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে যায়। এ সুযোগে চিনারচর গ্রামের কুদ্দুছের ছেলে মোস্তাইন বিল্লাহ রনি ঘরে ঢুকে চৌকির নিচে লুকিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক ক্রিয়া সেরে আমার নাতনী ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলে রনি আমার নাতনীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে।নাতনীর চিৎকারে আমিসহ বাড়ি ও আশেপাশের লোকজন গিয়ে নাতনীকে উদ্ধার করি এবং রনির পরিবারকে খবর দেই। রনির পরিবারের কেউ তাকে নিতে আসেনি। পরদিন রনির ভাই ফুরকান আলী জজ মিয়া থানা থেকে শরিফ দারোগাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি তখন ক্ষেতে কাজ করছিলাম। শরিফ দারোগা খবর পাঠায় আমাকে সাক্ষী দেবার জন্য। আমি বাড়িতে আসলে শরিফ দারোগা আমাকে হাত ও পিঠমোড়া করে বেঁধে থানায় নিয়ে যায়।’

‘ঘটনার পর আমি থানায় মামলা করতে গেলে শরিফ দারোগা রনির পক্ষ নিয়ে আমাকে ধমকাধমকি করে এবং মামলা করতে নিষেধ করে। আমি তার কথা না মানলে তাড়াহুড়ো করে একটি মামলা লেখে ধমকিয়ে আমার নাতনীর স্বাক্ষর নেয়। আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। ওই দারোগার ভয় এবং লজ্জায় আমার ছেলে-ছেলের বউ ও নাতনী ঢাকা চলে যায়। তারপরেও ওই দারোগা চক্রান্ত করে রনির ভাইকে দিয়ে আমিসহ আমার ছেলে, ছেলের বউ, আমার বেয়াই ও স্কুলের সভাপতি সাংবাদিক শাহীন আলআমীনের নামে একটি মিথ্যা মামলা করায়। সেই মিথ্যা মামলাটি সত্য বলে রিপোর্ট দেয় ওই দারোগা। ওই ঘটনার পর থেকেই ওই দারোগার কারণে আমি ও আমার পরিবার নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইত্তেফাকের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি শাহীন আলআমীন বলেন, ‘স্কুলের সভাপতি হিসেবে মো. তাজমলের বর্ণিত তার নাতনী ও স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনাটি জানতে পারি। আমি সাংবাদিক হিসেবে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর সংবাদপত্রে রিপোর্ট করি। এছাড়া ঘটনার পরদিন (১৮/০৯/২০১৯) আমিসহ আরও কজন সাংবাদিক থানায় গিয়ে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে এসআই শরিফ আহম্মেদ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে বকশীগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি হযরত আলীর হস্তক্ষেপে নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর দাদার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই এসআই বিভিন্ন সময়ে বেআইনিভাবে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে আমার সাথে ওই স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে নানা আপত্তিকর ও মানহানিকর পোস্ট দেন।’

‘ধর্ষণচেষ্টা ঘটনার পরদিন (১৮/০৯/২০১৯) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা ওই স্কুলছাত্রীর মামলায় গ্রেফতার হন রনি। কয়েক দিন পর তিনি জামিনে বের হয়ে এলে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর তার ভাই বাদী হয়ে ‘রনিকে মারপিট কাগজে স্বাক্ষর নেয়া’ অভিযোগে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ওই স্কুলছাত্রীর মা-বাবা, দাদা-নানা, চাচা-মামা ও আমাকেসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও বকশীগঞ্জ থানার কর্মরত সাংবাদিক এমএ ছালাম মাহমুদ, মনিরুজ্জামানসহ আরও তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছেন এসআই শরিফ।’

সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর দাদা মো. তাজমল, সাংবাদিক শাহীন আলআমীন, এমএ ছালাম মাহমুদ ও মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তারা জেলা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযুক্ত এসআই শরিফ আহম্মেদের রোষানলের শিকার হতে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে রক্ষাসহ তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বকশীগঞ্জ থানার এসআই শরিফ আহম্মেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test